ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: দেশের আমদানি বাণিজ্যের মাত্রা আশঙ্কাজনকহারে কমে আসায় চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডগুলোর ৫৬ শতাংশ এখন খালি পড়ে আছে। মূলতঃ ডলার সংকট, ঋণপত্র খোলায় কড়াকড়ি এবং ডলারের বিনিময়মূল্য বেশি থাকায় বেশ কয়েক মাস ধরেই অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বন্ধ হয়ে আছে। একই কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিও কমেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাণিজ্যে এমনিতেই মন্দা ভাব চলছে। তার উপর ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি সীমিত করেছে সরকার। এর ফলে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রমাগত কমতে থাকে আমদানি বাণিজ্য এবং রপ্তানি বাণিজ্যও। একই অবস্থা পৃথিবীর অন্যান্য বন্দরেও বিরাজ করছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, আগে কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ছিল বেশি। ফলে পণ্যভর্তি কন্টেইনার খালাস হওয়ার পর বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রাখতেন আমদানিকারকরা। এখন সেই অবস্থা নেই। প্রয়োজনীয়-জরুরি পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। ফলে সেটি জাহাজ থেকে নামিয়েই দ্রুত ছাড় নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা। এই কারণে বন্দরের ভিতর কন্টেইনার রাখার জট নেই।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের ভিতরের ইয়ার্ডগুলোর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৫৩ হাজার ৫১৮ একক কন্টেইনার রাখার। এর বিপরিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কন্টেইনার ছিল ২৩ হাজার ৯৩১ একক কন্টেইনার। শতাংশের হিসাবে এর পরিমাণ ৪৪ শতাংশ। অর্থ্যাৎ ৫৬ শতাংশ ইয়ার্ড এখন ফাঁকা পড়ে আছে।

বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানির পরিমাণ কমলেও এখন ধ্বস নামেনি। তবে আমদানিপণ্য মানে এখন জরুরি। ফলে সেগুলো এখন ফেলে রাখার সুযোগ নেই। বন্দর থেকে এখন প্রায় ৩ হাজার একক আমদানি কন্টেইনার ডেলিভারি হচ্ছে। আর ৩২শ একক কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামছে। ফলে কন্টেইনার আটকে থাকার দিন শেষ।

এদিকে, আমদানি কমে আসায় দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্রমাগত কমে আসছে। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতেও কমেছে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা। তবে জানুয়ারিতে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমলেও বেড়েছে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৮৭,৯৮৪ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। জানুয়ারি মাসে রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৬২,৭২৭ টিইইউস।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে আমদানি হয় ৮৯,৪৫৯ টিইইউস এবং রপ্তানি হয় ৬১,৫২৯ টিইইউস কন্টেইনার। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে আমদানি কমে ১,৪৭৫ টিইইউস। তবে জানুয়ারিতে আমদানি কমলেও রপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১,১৯৮ টিইইউস।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ১,৩১,৫২৫ টিইইউস। রপ্তানি হয় ৭৩,৫৪২ ‍টিইইউস। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আমদানি কমেছে ৪৩,৫৪২ টিইইউস। একই সময়ে রপ্তানি কমেছে ১০,৮১৫ টিইইউস।

ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতেও আমদানি কমার ধারাবাহিকতা রয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট থেকে সহসা পরিত্রাণ নেই।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম জুমবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী এলসি দিতে পারছেনা ব্যাংকগুলো। ফলে আমদানির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়েও। আমদানি কমায় এখন ইয়ার্ডগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এটা খুব উদ্বেগজনক।’