মানবদেহের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ইউরিক অ্যাসিড একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও এর অতিরিক্ত উপস্থিতি নানা রকম শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণা এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী জানা গেছে, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরন এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এই উপাদানটির মাত্রা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে। ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার সাথে সাথে কিডনি ও জয়েন্টের উপর চাপ তৈরি হয়, যার ফলে গাঁটে ব্যথা, কিডনির পাথর এবং প্রদাহের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণ এবং প্রাথমিক সতর্কতা
যখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক সীমার বাইরে চলে যায়, তখনই Hyperuricemia নামক অবস্থা সৃষ্টি হয়। পুরুষদের জন্য ৩.৪–৭.০ mg/dL এবং নারীদের জন্য ২.৪–৬.০ mg/dL এই মাত্রা স্বাভাবিক ধরা হয়। এই সীমা অতিক্রম করলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:
Table of Contents
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাভাব এবং ব্যথা
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত আসা
- বুড়ো আঙুলের গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা এবং ফোলা
- শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে হঠাৎ করে প্রদাহ
- ঘনঘন প্রস্রাব
এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবিলম্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। অনেক সময় ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলেও কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না, একে বলে অ্যাসিম্পটোম্যাটিক হাইপারইউরিসেমিয়া।
ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কারণসমূহ
ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার পেছনে বেশ কিছু প্রধান কারণ রয়েছে যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
১. খাদ্যাভ্যাস
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ, অর্গান মিট (যেমন লিভার), এবং অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির মূল উৎস।
২. অ্যালকোহল এবং পানীয়
বিশেষ করে বিয়ার এবং ওয়াইন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে।
৩. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
সারাদিন বসে কাজ করা, হাঁটাহাঁটির অভাব, এবং ওজন বৃদ্ধি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
৪. কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস
যদি কিডনি ঠিকমতো ইউরিক অ্যাসিড পরিশোধন না করতে পারে, তাহলে এটি রক্তে জমে যায়।
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে খাবার ও জীবনযাপন
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল:
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
- শাকসবজি ও ফলমূল বেশি করে খান, বিশেষ করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল
- পালংশাক, পুঁইশাক, টমেটো, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি কিছু সবজি কম খেতে হবে
- অ্যালকোহল, কোল্ড ড্রিংকস, মিষ্টি ও উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
- ওজন কমাতে এবং শরীরচর্চার রুটিন গড়ে তুলুন
- অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ও লেবুর রস উপকারী হতে পারে
ইউরিক অ্যাসিড সম্পর্কে ভুল ধারণা এবং সঠিক করণীয়
অনেকেই মনে করেন গাঁটে ব্যথা হলেই ইউরিক অ্যাসিড দায়ী, কিন্তু এটি সবসময় ঠিক নয়। অন্য অনেক রোগেও একই রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আবার অনেকেই সব ধরনের প্রোটিন খাওয়া বন্ধ করে দেন, যা শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু সামুদ্রিক মাছ, অঙ্গের মাংস, বিয়ার ইত্যাদি বাদ দিলেই যথেষ্ট। উদ্ভিজ প্রোটিন যেমন ডাল বা দানাশস্য নিরাপদ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়।
ডায়াগনোসিস এবং চিকিৎসা
ইউরিক অ্যাসিড পরিমাপের জন্য রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে জয়েন্ট অ্যাসপিরেশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে জয়েন্টের তরল পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসা সাধারণত নির্ভর করে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা, উপসর্গ এবং কিডনি/জয়েন্টের জটিলতার উপর। কখনো ওষুধের প্রয়োজন হয় যেমন অ্যালোপিউরিনল বা ফেবুক্সোস্ট্যাট। তবে জীবনধারা পরিবর্তনই অনেকাংশে কার্যকর।
ইউরিক অ্যাসিড সমস্যা বর্তমানে অনেক সাধারণ হলেও এর প্রতি সচেতনতা এবং সঠিক নিয়ম মেনে চললে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। খাবারে সামান্য পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত পানি পান – এই কয়েকটি অভ্যাসই আপনাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
প্রশ্নোত্তর (FAQs)
ইউরিক অ্যাসিড কি গাঁটে ব্যথা তৈরি করে?
হ্যাঁ, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হলে গাঁটের ভেতরে ক্রিস্টাল জমে গাঁটে ব্যথা বা গাউটের সৃষ্টি করতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে কী খেতে হবে?
পানি, ভিটামিন সি যুক্ত ফল, লো-পিউরিন ডায়েট এবং পর্যাপ্ত ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
কোন ওষুধ ইউরিক অ্যাসিড কমায়?
অ্যালোপিউরিনল, ফেবুক্সোস্ট্যাট এবং প্রোবেনিসিড ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ওষুধ।
কীভাবে বুঝবেন ইউরিক অ্যাসিড বেড়েছে?
হঠাৎ করে গাঁটে ব্যথা, ফোলা, প্রস্রাবের সমস্যা, এবং ক্লান্তিভাব – এসব ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে।
বাড়িতে ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা করা সম্ভব?
হ্যাঁ, হোম টেস্ট কিটের মাধ্যমে আঙুলের রক্ত পরীক্ষা করে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা জানা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।