জুমবাংলা ডেস্ক : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বহুল আলোচিত শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনায় তিন শিক্ষককে কার্যালয়ে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি তদন্ত ও প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক কার্যালয় থেকে উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মাজেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কার্যালয় সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তদন্তের স্বার্থে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাবেক প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রুহুল আমীন ও ইইই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহিমকে তলব করেছে দুদক। একইসঙ্গে চাকরি প্রত্যাশী আরিফ হাসানকেও তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আগামী রোববার সকাল ১০টায় সাবেক প্রক্টরসহ দুই শিক্ষককে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তা আব্দুল মাজেদ স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ৬৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয় ইবি প্রশাসন। ওই নিয়োগে বিভিন্ন সময় যুগান্তরে ধারাবাহিক একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে টাকা দেনদরবারের একাধিক অডিওক্লিপ যুগান্তরে ফাঁস হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ১৮ লাখ টাকা দেন দরবার করে ড. রুহুল আমিন ও এস এম আব্দুর রহিম। এ নিয়ে ২০১৯ সালের ২৮ জুন ‘এবার ১৮ লাখ টাকায় চুক্তি, অগ্রিম ১০’ শিরোনামে অডিও ক্লিপসহ যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
একইসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে নিয়োগ বাণিজ্যে প্রার্থীর সাথে টাকা দেনদরবারের ৬টি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়। ওই অডিওতে সাবেক প্রক্টর প্রফেসর প্রফেসর ড. মাহবুববের নামও উঠে আসে। তবে তার বিষয়ে কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়। শক্তিশালী তদন্ত কমিটিও করা হয়। একপাক্ষিক তদন্ত কমিটি হয়েছে দাবি করে শিক্ষক সমিতির চাপে আবারো কমিটির আহ্বায়ক পরিবর্তন করা হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলা বিভাগের তৎকালীন সভাপতি প্রফেসর ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতনকে।
অদৃশ্য কারণে শেষে সময়ে এসে তিনি কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। এর পর ২ বছর তিন মাস পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি ওই তদন্ত কমিটি।
এর আগেও বিভিন্ন সময় প্রকাশিত অডিও ক্লিপে একাধিকবার সাবেক প্রক্টরের নাম বিভিন্নভাবে উঠে আসে। এ ঘটনায় ড. রুহুল আমিন ও এসএম আব্দুর রহিমকে প্রথমে সাময়িক বহিষ্কার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে ক্ষমা পেয়ে যায়।
এর আগেও রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নিয়োগে প্রার্থী খুঁজতে তার এক বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথনের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয় যুগান্তরে। এরপর আবারো তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে শাস্তি হিসেবে পদাবনতি ও ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা হলেও আইনের আশ্রয় নিয়ে আবারও পূর্বের পদ ও ইনক্রিমেন্ট ফিরে পান।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে দুদক কার্যালয় সূত্র। একইসাথে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক ও ভুক্তভোগীকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
দুদকের দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. মো. মাহবুবর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক রুহুল আমীন ও সহকারী অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহিম এর বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বক্তব্য গ্রহণ ও শ্রবণ করা একান্ত প্রয়োজন।
দুদকের চিঠির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, গত রোববার দুদক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের নামে চিঠি এসেছে। আসামাত্রই আমি যে সব শিক্ষককে হাজির হতে বলা হয়েছে তাদেরকে জানিয়েছি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. মাহবুবর রহমান এখনো চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে চিঠি পেলে তিনি দুদকের কার্যালয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।