জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশের ই-কমার্স প্লাটফর্ম ইভ্যালির ব্যবসায়িক কার্যক্রম বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক আইনবিদ ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম৷
তার মতে, এই মুহূর্তেই তাদের সকল কার্যক্রম আইনের আওতায় আনা উচিত ও বন্ধ করে দেওয়া উচিত৷
‘‘যে টাকাটা অলরেডি গেছে সেটা যদি আদায়ের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে আর একদিনের জন্য হলেও এটাকে আর রাখতে দেওয়া উচিত না, কারণ, যতদিন গড়াবে তত তার লায়েবেলিটির পরিমাণ বাড়বে৷”
ইউটিউবে ডয়চে ভেলের সাপ্তাহিক টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি৷
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির মনে করেন, দেশের সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আইন মেনে চলা উচিত৷
‘‘সবগুলো ই-কমার্স মার্চেন্টকে অবশ্যই আমাদের দেশের যে প্রচলিত আইন আছে, সেটার হান্ড্রেড পার্সেন্ট কমপ্লায়েন্ট হতে হবে, ভোক্তা সুরক্ষা ও ইন্ডাস্ট্রি প্রোটেকশন নিশ্চিত করতে হবে৷”
চলতি সপ্তাহে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাদের জন্য কতটা নিরাপদ সে বিষয়ে আলোচনা হয়৷
গত কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে করোনা মাহামারির সময়ে দেশে অনলাইনে কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে৷ কেনাকাটার পদ্ধতি সহজ হওয়ায় অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটা করতে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন৷
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে ইভ্যালি ডটকম লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা৷ আর প্রতিষ্ঠানটির চলতি সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবদেনে বলা হয়, এক টাকা আয়ের জন্য তিন টাকা ৫৭ পয়সা ব্যয় করছে প্রতিষ্ঠানটি৷
এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে গ্রাহকের লেনদেনের নতুন ব্যবস্থা তৈরির কথা বলা হয়৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, গ্রাহক পণ্য বুঝে পাওয়ার পর ডেলিভারি মেসেজ দিলে বিক্রেতা মূল্য পাবেন৷ আর এ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গেটওয়ের মাধ্যমে এ অর্থ লেনদেন হবে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে আসা এমন বিষয় উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, এটি কোনো সাসটেইনেবল বিজনেস মডেল নয়৷ বিশ্বের কোনো দেশেই এমন বিজনেস মডেল দেখা যায় না৷
বাজার বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইভ্যালি যে বিজনেস মডেলের কথা বলছে, অফার দিচ্ছে সেই অফারের মাধ্যমে তার পক্ষে সাসটেইনেবল বিজনেস করা সম্ভব না৷ এরই ধারাবাহিকতায় বলা হচ্ছে যে, যেহেতু এটি সাসটেনেইবল না, সেহেতু এটি পঞ্জি স্কিম৷”
দ্রুত অর্থ উপার্জনের প্রায় সকল প্রতারণামূলক কাজকেই অর্থনীতির ভাষায় পঞ্জি স্কিম বলা হয়৷
এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশে অবৈধ উল্লেখ করে তিনি তার আগে দেশের অর্থনীতি খাতে বহুল আলোচিত হলমার্ক, ডেসটিনি ও যুবক-এর কথা তুলে ধরেন৷
তার মতে, এ ধরনের ব্যবসা পেনাল কোডের অধীনে অপরাধ৷
‘‘আইনে কোথাও পাবেন না যে ই-কমার্স করা নিষিদ্ধ৷ কিন্তু লিগ্যাল অ্যাক্টের ছদ্মবেশে যখন ইলিগ্যাল ইন্টেনশন নিয়ে কাজটা করবেন তখন এটি ইলিগ্যাল হয়ে যায়৷… ডেসটিনি বা যুবকের বিরুদ্ধে দু’দক যে মামলাগুলো করেছে সেখানে মূল অভিযোগের সূত্রটি ছিল যে, তারা যে ব্যবসা করতো, তারা জানতো যে অল্টিমেটলি সব প্রমিজ রক্ষা করতে পারবে না৷ জেনেশুনেই করেছে এমন ব্যবসা৷ জানতেন যে, এক পর্যায়ে আপনাকে এখান থেকে পালাতে হবে৷ পালানোর সময় এখানে যে টাকাটা সরাচ্ছেন সেটি আপনার লাভ৷ তার মানে, আপনি জানতেন যে ব্যবসাটি ডেস্টাইনড টু ফেইল৷ তারপরও আপনি একই কাজ করে গেছেন আর ওটাই হলো ইলিগ্যাল অংশটি৷”
এদিকে (বেসিস)-এ,র সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির মনে করেন, সরকারের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত৷ তিনি বলেন, যদি কোনো অঘটন ঘটে তাহলে তা পুরো ইন্ডাস্ট্রির উপরই মানুষের আস্থা নষ্ট হবে৷
উল্লেখ্য, ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশোর পক্ষ থেকে ইভ্যালি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে রাজি হয়নি৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।