আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস শনিবার ইসরাইলে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। এ সময় গাজা উপত্যকা থেকে হাজার হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে। একইসাথে প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্যরা ইসরাইলের কয়েকটি শহরেও প্রবেশ করেছে। সেখানে তারা অন্তত ৪০-এর অধিক ইসরাইলিকে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনের হামাস ইসরাইলে যে সামরিক হামলা শুরু করেছে তাকে ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে এতদিন ধরে চলমান নৃশংসতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন হামাসের মুখপাত্র খালেদ কাদোমি।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও এটাকে ‘যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ যুদ্ধে আমরাই জয়ী হব।’
বিশ্বজুড়ে হামলার প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের ইসরাইলে আক্রমণকে সমর্থন জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, শনিবার হামলা শুরুর পর দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বসতি স্থাপনকারী ও দখলদার সৈন্যদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অধিকার ফিলিস্তিনিদের রয়েছে।’
ইরান
ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ জানিয়েছে, দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলী হোসাইন খোমেনির এক উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের অভিনন্দন জানাই। ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিলিস্তিনিদের পাশেই থাকব।’
কাতার
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনের সাথে চলমান সহিংসতার জন্য ইসরাইলই একমাত্র দায়ী। কিন্তু ইসরাইল এ ঘটনাকে গাজায় বসবাসরত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে পরে। তাদেরকে নিবৃত্ত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে কাতার।
সেজন্য কাতার এ হামলাকে গাজায় বসবাসরত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে ইসরাইলকে নিবৃত্ত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। একইসাথে উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছে।
তুরস্ক
আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন একে পার্টির এক কংগ্রেসে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান বলেন, ‘আমরা সব দলকে সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানাই। সবাইকে আক্রমণাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।’
সৌদি
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ
ইসরাইলের চিরশত্রু ও ইরানসমর্থিত লেবানিজ গ্রুপ হিজবুল্লাহ শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা গাজার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের নেতৃত্বের সাথেও তারা সরাসরি যোগাযোগ করছে।
গাজার বিদ্রোহীরা ইসরাইলে রকেটের ঢেউ নিক্ষেপ করার পর বিবৃতিতে বলেছে, এটি ‘ইসরায়েলের অব্যাহত দখলদারির একটি নিষ্পত্তিমূলক প্রতিক্রিয়া এবং ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিকিকরণের চেষ্টাকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
এছাড়া মিশর, রাশিয়াও এ ঘটনায় সব দলকে সংযম ও আক্রমণাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে হামাসের এ আকস্মিক হামলার পর ভারতসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা হামাসের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘নিজেদের আত্মরক্ষায়, নির্বিচার হামলা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে নাগরিকদের রক্ষায় ইসরাইলের যা প্রয়োজন, সেগুলো নিশ্চিত করতে আগামী দিনগুলোতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করবে।’
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার ‘দ্ব্যর্থহীন নিন্দা’ করে এবং ইসরাইলের পাশে আছে। সম্প্রচারকারী সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে।
ভারত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক এক্স বার্তায় (সাবেক টুইটার) বলেন, ইসরাইলের ওপর যেভাবে জঙ্গি হামলা হয়েছে, তাতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। নিরীহ আক্রান্ত ও তাদের পরিবারের পাশে রয়েছে আমাদের প্রার্থনা ও কামনা। এই কঠিন সময় আমরা ইসরাইলের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’
ফ্রান্স
শনিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন। তিনি এক্সে বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী, তাদের পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সাথে আমার পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি।’
এছাড়াও নিন্দা জানিয়েছে বেলজিয়াম, ইউরোপীয় কমিশন, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, স্পেন, চেক প্রজাতন্ত্র, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ড।
সূত্র : আল জাজিরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।