মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা : ইদানীং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ মানুষ নিয়ে আলোচনা হতে দেখা যায়, যাদের বেশির ভাগ তৃতীয় লিঙ্গের মনে করলেও মূলত তারা তৃতীয় লিঙ্গের নয়। বরং তারা বিশেষ অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তি, যারা মানসিক দিক থেকে তাদের সৃষ্টিগত লিঙ্গের চেয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি আসক্ত ছিল। ফলে একসময় তারা অস্ত্রোপচার ও হরমোন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের দেহাবয়ব পরিবর্তন করে বিপরীত লিঙ্গের বেশ ধারণ করেছে।
তবে মাঝে মাঝে বিস্তৃত পরিভাষায় রূপান্তরিত লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার বলতে ‘ক্রস-ড্রেসার’ বা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধানকারীদেরও বোঝানো হয়, বাস্তবে তাদের লিঙ্গবোধ যা-ই হোক না কেন।
প্রশ্ন হলো, একজন মুসলিম কি চাইলে লিঙ্গ রূপান্তর করতে পারে? ইসলামের দৃষ্টিতে এর বিধান কী?
এর জন্য আমাদের অবশ্যই পবিত্র কোরআন ও হাদিসের শরণাপন্ন হতে হবে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সুরা : ত্বিন, আয়াত : ৪)
মহান আল্লাহ মানুষকে যে স্বাভাবিক দেহাবয়ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেটাই তার জন্য উৎকৃষ্ট নিয়ামত। ইসলামী বিধি-বিধানের বাইরে গিয়ে একে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের অধিকার কারো নেই। পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির পরিবর্তন-পরিবর্ধনকে শয়তানের কাজ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (শয়তান) বলে, আমি অবশ্যই তোমার (আল্লাহর) বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব। আমি তাদের পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব। আমি তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা পশুর কর্ণোচ্ছেদ করবেই এবং তাদের নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। (আল্লাহ বলেন) আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৬-১১৯)
উপরি-উক্ত আয়াতে অভিশপ্ত শয়তান মহান আল্লাহকে বলেছিল, ‘নিশ্চয়ই নির্দেশ দেব আর তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। ’ বোঝা গেল অহেতুক নিজের শরীরে বিকৃত সৃষ্টি করা মহান আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃত করার শামিল।
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন ওই সমস্ত নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে, নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রু-চুল উপড়িয়ে ফেলে এবং দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। সেসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি আনয়ন করে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮৮৬)
বিশেষজ্ঞ আলেমদের মতে, কেউ যদি সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নিজের দেহাবয়বে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনে, তবে তা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতির শামিল হবে; তবে কেউ যদি রোগমুক্তির আশায় বাধ্য হয়ে চিকিৎসা হিসেবে এমনটি করে বা কোনো শারীরিক ত্রুটি দূর করার জন্য বাধ্য হয়ে করে, তবে তা আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতির অন্তর্ভুক্ত হবে না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হারিস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী, সুদের লেখক এবং যে শরীরে দাগ দেয়, যাকে দাগ দেওয়া হয়। এক ব্যক্তি বলল, রোগের জন্য ছাড়া? তিনি বলেন, হ্যাঁ। (নাসায়ি, হাদিস : ৫১০৪)
কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার যেহেতু মানসিক রোগ থেকে হয়, তাই তাদের লিঙ্গে অস্ত্রোপচার না করে তাদের মানসিক চিকিৎসায় জোর দেওয়া উচিত, তাদের সমস্যাগুলো যদি হরমোনগত সমস্যা থেকে হয়, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতির অধিকার কারো নেই। হ্যাঁ, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক কন্যাশিশুর জন্মের সময় যোনিপথ বন্ধ থাকে, যা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব, সে চিকিৎসা গ্রহণকে ইসলাম নিষিদ্ধ বলে না। এবং পরিভাষায় সেই অস্ত্রোপচারকে ট্রান্সজেন্ডারও বলে না। উপরন্তু যেসব নারী পুরুষের বেশভূষা নিতে চায়, যেসব পুরুষ নারীর বেশভূষা নিতে চায়, মহানবী (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) নারীর বেশধারী পুরুষদের এবং পুরুষের বেশধারী নারীদের অভিসম্পাত করেছেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৮৫)
মহান আল্লাহ সবাইকে এই ঘৃণ্য কাজ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।