বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর প্রকোপ চলা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে সতর্কভাবে আশাবাদী চীন। দেশটির দাবি, বিশ্বের দ্বিতীয বৃহত্তম অর্থনীতি ভাইরাসের মন্দা থেকে অবিচ্ছিন্নভাবে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
তবে দেশটির উচ্চ আয়ের স্তরে পৌঁছাতে সামনে আরো কিছু বাধা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি বলেছেন, চীনের অর্থনীতি স্থিতিশীল আছে এবং বহিরাগত ঝুঁকি বৃদ্ধি সত্ত্বেও বেইজিংয়ের পর্যাপ্ত নীতিমালা রয়েছে।
শি বলেন, চীনের অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য হল পর্যাপ্ত সম্ভাবনা, দুর্দান্ত স্থিতিস্থাপকতা, শক্তিশালী জীবনীশক্তি, কৌশলচক্রের জন্য বড় জায়গা এবং অনেক নীতিমালা অপরিবর্তিত থাকা। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া শি’র এসব বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছে।
আরও অস্থিতিশীল এবং অনিশ্চিত বিশ্বে আমাদের অবশ্যই অগ্রগতি সন্ধান করতে হবে, বলেন শি। সেইসঙ্গে তিনি ক্রমবর্ধমান কঠিনসময় ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সম্প্রতি বলেছে যে চীনের উহান, যেখানে করোনার আবির্ভাব ঘটেছে, এই অঞ্চলের অর্থনীতি মন্দার বিরুদ্ধে লড়াই করছে ।
ব্যাংকটি পূর্বাভাস দিয়েছে, চীন এ বছর এক দশমিক আট শতাংশ এবং ২০২১ সালে সাত দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু বর্তমানে চীনের অর্থনীতি একটি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি।
চীন ২০১৯ সালে প্রায় অর্ধ শতাব্দীতে তার সর্বনিম্ন জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে, ৬ দশমিক ১ শতাংশে। যেহেতু দেশটি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয় এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেইজিং ১৯৭৬ সালের পর প্রথমবারের জন্য একটি অর্থনৈতিক মন্দাকে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে।
দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোতে ১৭ এপ্রিল ঘোষণা করে, এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় অর্থনীতি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, গত ২২ মে দেশটির ক্ষমতাসীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) জাতীয় কংগ্রেস কংগ্রেসের সময় প্রথমবারের মতো কোনও জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্য ঘোষিত হয়নি। যা দেশটিতে ৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।
দেশটির কর্মকর্তারা করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ‘মহা অনিশ্চয়তা’ উদ্ধৃত করে স্বীকার করেছে, চীন কঠিন অর্থনীতি লড়াই এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বৈরিতার মুখোমুখি।
২০০৩ সাল থেকে চীনের জিডিপিতে প্রতিবছর দুই সংখ্যার প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে এবং ২০০৭ সালে এটি ১৪ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছায়। কিন্তু এরপর থেকে দীর্ঘ অবনতি হয়েছে। ২০১৮ সালে সেটি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নামে এবং ২০১৯ তা দাঁড়ায় ৬ দশমিক ১ এ। এরপরেই আসে করোনার প্রকোপ। তাই দেশটিতে প্রবৃদ্ধি কমানোর জন্য করোনাকে দায়ী করা যাবে না।
প্রবৃদ্ধির পতনের কারণ চীনা অর্থনীতির মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে, যা দেশটিতে বছরের পর বছর ধরে চলছে। সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে, অতিরিক্ত বিনিয়োগ, স্বল্প শ্রম উত্পাদনশীলতা, পরিমিত ভোক্তা ব্যয় এবং জনসংখ্যার পরিবর্তন।
এছাড়া দেশটিতে অতিরিক্ত অবকাঠামোগত ব্যয়, ভোক্তা এবং শিল্প ব্যয়ও বাড়িয়ে তুলছে। দেশটিতে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেতে শুরু করার সঙ্গে অনেক শিল্প ও উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গেছে। যা দেশটিকে ব্যাপক ছাঁটাই, মজুরির বৃদ্ধি হ্রাস এবং বেকারত্বের দিকে ধাবিত করেছে।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে দেশটিতে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কিন্তু ২০২০ সাল শেষ নাগাদ অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে যাবে বলে দেশটির সরকারপন্থী গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে।
এছাড়া দেশটির জনগণের ক্রয় শক্তি হ্রাস পাওয়ায় গত দুই বছরে চীনা ভোক্তা পণ্য বাজারের আকার হ্রাস পেয়েছে। গাড়ি কেনা এবং রিয়েল এস্টেটের জন্য চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং গত ২৮ মে স্বীকার করেছেন, ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি লোক রয়েছে যাদের মাসিক আয় কোনমতে এক হাজার ইউয়ান। যা দিয়ে চীনের শহরে একটি রুম বাড়ি ভাড়া দেওয়া যথেষ্ট নয়।
চীনের প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দেশটি থেকে দারিদ্র দূর করবে, সকলের জীবনমান উন্নতির মাধ্যমে। তবে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শি’র সেই স্বপ্ন এখনো অধরা। সেইসঙ্গে ভয়াবহ বন্যার কারণে চীন এখন খাদ্য সংকটেও ভুগছে। তাহলে কী উচ্চ আয়ের মর্যাদার স্বপ্নে ব্যর্থ হচ্ছে চীন?
ইকনোমিক টাইমস অবলম্বনে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।