জুমবাংলা ডেস্ক : উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ঋণনির্ভরতা বাড়ছে। প্রতিবছরই উন্নয়ন বাজেটে সরকারের অর্থায়ন কমছে আর বাড়ছে বৈদেশিক ঋণ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের গণ্ডির মধ্যেই রয়েছেন।
যদিও গত তিন বছরেই এডিপিতে সরকারের অংশ কমেছে ৫ শতাংশ, আর বেড়েছে বৈদেশিক অংশে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৬ হাজার কোটি টাকার সংস্থান ছিল অভ্যন্তরীণ খাত থেকে। সে হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদের হার ছিল ৬৪.৫১ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দ দুই লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতের সংস্থান ছিল এক লাখ ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদের হার ছিল ৬১.৭১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকার সংস্থান ছিল অভ্যন্তরীণ খাত থেকে। সে হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদের হার ছিল ৫৯.৯০ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় হাজার কোটি টাকা বেশি বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ এক লাখ কোটি টাকা।
আর সরকারের অর্থায়ন এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে দেখা যায় এডিপিতে বৈদেশিক অংশই বেশি ব্যবহার হয়। সরকারের অংশ বরাদ্দের তুলনায় কম ছাড় হয়। যদিও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য কমানো হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপিল পর্যন্ত ৪৯.২৬ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে, যার মধ্যে বৈদেশিক ঋণের খরচ হয়েছে ৫৮.০৫ শতাংশ। আর সরকারের অর্থায়নের খরচ হয়েছে ৪৩.৯১ শতাংশ।
দেশের আয়ের উৎসলোককে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর এবং করবহির্ভূত আয়। প্রত্যক্ষ করের মধ্যে আছে ব্যক্তি শ্রেণির আয়কর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর কর (করপোরেট কর), দান কর, উত্তরাধিকার কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি। আর পরোক্ষ কর হচ্ছে আমদানি কর, আবগারি শুল্ক, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি।
কর ছাড়া আরো আয় আছে। যেমন—বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভ, সুদ, সাধারণ প্রশাসন থেকে আয়, ডাক-তার-টেলিফোন থেকে আয়, পরিবহন আয়, জরিমানা ও দণ্ড থেকে আয়, ভাড়া, ইজারা, টোল ও লেভি থেকে আয় ইত্যাদি।
এর মধ্যে মূল আয়ের উৎস জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই সংস্থাটির রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত খাতে এই লক্ষ্য ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
যদিও অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) আদায় হয়েছে দুই লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুই মাসে অর্জন করতে হবে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত খাতের আদায়েও সুখবর নেই। মূলত এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে দুর্বলতা ও এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব কম আদায়ের প্রেক্ষাপটে এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ব্যয়ের হার কমেছে।
সর্বশেষ তিন অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধীরে ধীরে এডিপি বাস্তবায়নে কমছে অভ্যন্তরীণ সম্পদের ব্যবহার। ঋণনির্ভর হচ্ছে বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প। এর পেছনে রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় উৎস এনবিআরের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতাই দায়ী।
এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষ্য ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে তিন লাখ এক হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই লক্ষ্য বেড়ে হয়েছে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল তিন লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের পরিসংখ্যানও সুখকর নয়।
যদিও এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে এনবিআরের সক্ষমতা যাচাই করা হয় না। রাজস্ব আদায়ের উপযুক্ত কোনো পরিবেশও নেই। ভাড়া করা অফিস নিয়েই অনেক আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অফিসগুলো চলে। নতুন অফিস তৈরি করা কিংবা অটোমেশনের জন্য কোনো বাজেট নেই। তাঁরা দাবি করেন, প্রতি ১০০ টাকা রাজস্ব আদায়ে এনবিআর খরচ করে মাত্র ২২ পয়সা, যা পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় কম। তবু এনবিআরের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয় না।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা সেই অর্থে বাড়েনি। তাই সরকারকে আবার বিদেশমুখী হতে হচ্ছে। যে হারে রাজস্ব আয় বাড়ে এবং যে হারে খরচ বাড়ে, এর মধ্যে পার্থক্য অনেক। একটা সময় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের এডিপি বাস্তবায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এখন আমরা একটু বিদেশমুখী হয়ে পড়েছি।’
যেখানে বিনিয়োগে টাকাও নিরাপদ থাকে, মুনাফাও পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংকের চেয়ে বেশি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।