আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বারবার আঙুল উঠছে চীনের উহানের একটি গবেষণা কেন্দ্রের দিকে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই শহরটি থেকেই প্রথম চীনে, এরপর বিশ্বজুড়ে নতুন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই করোনাভাইরাসের নাম দেয় কোভিড-১৯। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৮ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে এক লাখ ১০ হাজার মানুষ।
পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি গবেষণাকেন্দ্রটি থেকেই নতুন করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানায়, উহানের সেই গবেষণাকেন্দ্রে ৩৭ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ)। বাদুড় থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা হচ্ছিল সেখানে।
হুবেই প্রদেশের শহরটি থেকে এক হাজার মাইল দূরে ইউনানের একটি গুহা থেকে বাদুড়গুলো ধরা হয়। করোনাভাইরাস নিয়ে তাদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নতুন করোনাভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও শুরুতে ধারণা করা হয়, উহানের পশু বেচাকেনার মার্কেট থেকে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তায় গত এক দশক ধরে গবেষণা কেন্দ্রটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিল। রবিবার এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডেইলি মেইলের হাতে আসে।
বায়োমেডিক্যাল এবং পাবলিক হেলথ নিয়ে গবেষণার সঙ্গে জড়িত যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান এনআইএইচ। তাদের অর্থ সহায়তা পাওয়া প্রতিষ্ঠানদের তালিকায় আছে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির নামও। এনআইএইচের ওয়েবসাইটেই সেটি উল্লেখ আছে।
উহানে সেই গবেষণা কেন্দ্রে বিজ্ঞানীরা একটি করোনাভাইরাস প্রস্তুত করেন এবং তিন দিন বয়সী একটি শুকরের দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে সেটি পরীক্ষা করা হয়।
প্রাণীদের ওপর ‘বিপজ্জনক ও নিষ্ঠুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা’ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল মার্কিন আইনপ্রণেতা এবং প্রভাব বিস্তারকারী দল। এমন গবেষণায় অর্থ সহায়তা নিয়ে মার্কিন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন তারা।
একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়, ভাইরাসযুক্ত রক্ত স্প্রে করতে গিয়ে উহানের ইনস্টিটিউটটির বিজ্ঞানীরাই শুরুতে নতুন করোনাভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। এরপরে সেটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে উহানের গবেষণা কেন্দ্র থেকেই কভিড-১৯ এর উৎপত্তি, এমন খবর একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। যদিও চীন বরাবরই সেটি অস্বীকার করে আসছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণও সামনে আসেনি।
এদিকে একই শহরে আরেকটি গবেষণা কেন্দ্র উহান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল নিয়েও সন্দেহ করা হয়। পশু মার্কেটটি থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে এই গবেষণা কেন্দ্রটি অবস্থিত। ওই মার্কেট থেকেও কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ে বলে দাবি উঠেছিল।
ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণঘাতী ভাইরাসের দেড় হাজারেরও বেশি স্ট্রেইন সংরক্ষিত ছিল। সবচেয়ে বিপজ্জনক রোগজীবাণু নিয়ে গবেষণা হতো সেখানে, বিশেষ করে বাদুড় থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস নিয়ে।
২০০২ এবং ২০০৩ সালে সার্স প্রাদুর্ভাবের পর এই গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চীন সরকার। সার্সও এক ধরনের করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে ৮ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল, মারা গিয়েছিল ৭৭৫ জন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।