জুমবাংলা ডেস্ক : ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় বন্ধক রাখা ২০ কোটি টাকা দামের জমি পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন মো. ইদ্রিসুর রহমান মধু নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি শিল্পী ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন।
রবিবার (১৩ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
ইদ্রিস বলেন, ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিয়া নগর মালঞ্চ মৌজায় আমার ৭২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি আছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্র্যাক ব্যাংক সেই সম্পত্তি মাত্র পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়।
আমি ২০১৬ সালের মে মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের পান্থপথ শাখা থেকে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করি। পরে পর্যায়ক্রমে মোট প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঋণের নেওয়া হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় প্রায় দুই কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করি। করোনার কারণে আমার ব্যবসায় ধস নামলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হই। এ অবস্থায় ব্র্যাক ব্যাংক আমার বন্ধক রাখা জমি নিলামে তোলে এবং বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়।
শিল্পী ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে চলমান প্রক্রিয়ায় সুদে-আসলে ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৬২ টাকা ৩০ পয়সা দাবি করে অর্থ ঋণ আদালত-২ ঢাকায় মামলা করে ব্র্যাক ব্যাংক। মামলা চলমান অবস্থায় পুনরায় জমি নিলামের আবেদন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল পত্রিকায় নিলাম প্রকাশ করে। আমি ওই নিলামকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করি।
গত ১৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগে আমাকে তিন মাসের মধ্যে দুই কোটি টাকা ব্র্যাক ব্যাংকে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন এবং জমি বিক্রির ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন। ব্র্যাক ব্যাংক তিন দিন পর চেম্বার জজ আদালতে স্থগিতাদেশ খারিজ করায় এবং ২১ জুন নিলামের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকার জমি ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। ফলে আমি চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হই।
নিলামের আগে ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে ইদ্রিস আলী বলেন, আমি আমার জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতে চাই। আমি ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বলি যে আমার কাছে ক্রেতা আছে। কিন্তু তারা আমাকে তাদের অফিসে ঢুকতে না দিয়ে অন্যায়ভাবে আমার জমি বিক্রি করে দেয়। আমার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে বাঁচানোর পরিবর্তে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমির ব্যবসায় লেগে গেছে এবং আমাকে পথে বসানোর ব্যবস্থা করেছে। আমি এখন সর্বস্বান্ত। এ জন্য সরকারের কাছে ন্যায় বিচার চাই।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যাখ্যা
অভিযোগের বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বাংলা ট্রিবিউনকে ইমেইলে জানায়, মো. ইদ্রীসুর রহমান তার ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে অবস্থিত শিল্পী ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ২০১৬ সালে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেন। ঋণের বিপরীতে ৭২ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি এবং ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমি ও উপরিস্থিত ইমারত বন্ধক রাখেন। পরে ঋণের সীমা বাড়িয়ে টাকা ১২ কোটি ৫৮ লাখ করা হয় এবং চলতি ঋণ নবায়ন করা হয়।
ঋণগুলো অনিয়মিত পরিশোধের কারণে শ্রেণীকৃত হয়ে পড়ায় গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে শ্রেণীকৃত ঋণগুলো ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট পুনঃতফসিল করা হয়। পরবর্তী সময়ে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ২০১৮ সালের ৩০ জুন ঋণ হিসাবগুলো মন্দ মানে শ্রেণীকৃত হয়। গ্রাহকের অসহযোগিতার কারণে ব্যাংক পরে ফুল লোন কলআপ লেটার ইস্যু করে গ্রাহককে। তবু কোনও সাড়া না পেয়ে আইন অনুযায়ী ব্যাংক গ্রাহক বরাবর আইনি নোটিশ ইস্যু করে। নিলাম প্রক্রিয়ার ও সম্পত্তি বিক্রির ব্যাপারে গ্রাহক অবগত ছিলেন।
তারা আরও বলে, ব্যাংকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ঋণগ্রহীতা ও জামানতদাতারা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩ ধারা মোতাবেক গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিলাম প্রক্রিয়ার বিপরীতে গ্রাহক আদালতের মাধ্যমে দুবার স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। আইনি প্রক্রিয়া মেনে ব্র্যাক ব্যাংক উচ্চ আদালতের কাছে আবেদন করলে আদালত ওই স্থগিতাদেশ খারিজ করেন এবং এর ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাংক নিলাম কার্যক্রম সম্পন্ন করে এবং ব্যাংকের নিলাম কমিটি কর্তৃক সর্বোচ্চ দরদাতা নির্ধারণ করে।
সম্পত্তির বাজারমূল্য নিয়ে গ্রাহক যে তথ্য প্রদান করছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও আইনিভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে জানায় ব্র্যাক ব্যাংক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।