গুমের শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের ফেরত দিতে সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) জাতিসংঘ ঘোষিত আর্ন্তজাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ২০১৯ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্বজন হারানোদের সংগঠন “মায়ের ডাক- Mother’s Call”-এর উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় তারা এ দাবি করেন।
এতে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল ‘মায়ের ডাক’-এর সভানেত্রী ও ২০১৩ সালে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা বেগমের। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী সভাপতিত্ব করেন।
এ অনুষ্ঠানে প্রত্যেক মা তার গুম হওয়া সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে কাঁদেন। স্ত্রী চান তার স্বামীর সন্ধান। ছোট ছোট শিশুরা তাদের বাবার ছবি হাতে নিয়ে সরকারের কাছে আকুতি জানায়- তার নিখোঁজ বাবাকে ফেরত দিতে। অনুষ্ঠানে দেশে বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান করতে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল গুম হওয়া রনি হোসেনের মা আঞ্জুমান আরা বেগম, ২০১৫ সালের ২১ আগস্ট গুম হওয়া সাজ্জাদ হোসেনের মা সাজেদা বেগম, ২০১৯ সালের ১৯ জুন গুম হওয়া ইসমাঈল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার।
অনুষ্ঠানে মায়েদের বুকফাটা আর্তনাদে ভারি হয়ে যায় প্রেসক্লাবের হল রুম। সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আকুতির পরিবর্তে মায়েদের কান্নার রোল পড়ে যায় হলরুমে। এতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও বক্তব্য রাখেন, স্বজন হারানোদের প্রতি সহমর্মিতা জানান।
তেজগাঁও থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমন গুমের শিকার হন ২০১৩ সালে ৪ ডিসেম্বর রাতে। তার ছোট্ট শিশু কন্যা রাইসা বাবা সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার কান্না উপস্থিত আলোচক ও শ্রোতাদেরও আবেগাপ্লুত করে। অনেকেই চোখ মুছতে থাকেন।
গুমের শিকার হওয়াদের ফেরতের দাবি স্বজনদেরকান্নাজড়িত কণ্ঠে রাইসা বলে, আমার বয়স যখন মাত্র ৭/৮ বছর তখন আমার বাবা গুম হয়। আমি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। এখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। দীর্ঘ ৫ বছর আমি বাবাকে দেখি না। বাবাকে ছাড়াই কী আমি বেঁচে থাকব? আমি আমার বাবাকে ফেরত পেতে চাই। বাবার সাথে বেড়াতে যেতে চাই। আমি আমার বাবার বুকে নিয়ে ঘুমাতে চাই।
রাইসা আরও বলেন, আমি যখন স্কুলে যাই আমি দেখি আমার বন্ধুদের অনেকের বাবা তাদের স্কুল ছুটির পর নিতে আসেন। কিন্তু আমি একা একা বাসায় আসি। আমি অন্যদের মতো বাবার সাথে ঘুরতে বা বেড়াতে যেতে পারি না। আমি আমার বাবার অনুপস্থিতি প্রতিটি পদে পদে অনুভব করি। রাইসা তার মতো যেসব শিশুর এই অনুষ্ঠানে এসেছে তাদের সবার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানায়।
রাজধানীর রামপুরা থেকে নিখোঁজ ছাত্রলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর মা সালেহা বেগম বলেন, আমার ছেলে তিন বছর ৭ মাস ধরে নিখোঁজ। যুবলীগের স্থানীয় নেতারা প্রশাসনকে দিয়ে আমার ছেলেকে গুম করে। আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে হাজারও মানুষের দুয়ারে দুয়ারে দৌড়াইছি। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু আজও আমি আমার ছেলেকে ফিরে পাইনি। আর কতদিন আমি ছেলের অপেক্ষায় থাকবো, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সালেহা বেগম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ। গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার থেকে বক্তব্য রাখেন বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি, সুমনের মেয়ে মাইসা, সবুজের মা সাহেদা বেগম, পিন্টুর বোন মুন্নী, পারভেজ হোসেনের শিশু কন্যা হৃদী, নিখোঁজ ড্রাইভার কাউসারের মেয়ে লামিয়া, যশোরের মোহন মিয়ার বাবা জামশেদ আলী, মাইকেল চাকমার বোন, সুজনের ভাই শাকিলসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে ছোট ছোট শিশুরা তাদের বাবার ছবি তুলে ধরে। এতে লেখা ছিল ‘শুধু বাবাকে ফিরে পেতে চাই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।