জুমবাংলা ডেস্ক: তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যারা রাজনীতিকে বিরাজনীতি করতে চায় তারাই ওয়ান ইলেভেনের সুবিধাভোগী। এখনও একটি গোষ্ঠী রাজনীতিকদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। বিরাজনীতিকরণের প্রচেষ্টায় যারা যুক্ত ছিলেন তারা এখনও সক্রিয়। মাঝে মাঝে একত্রিত হয়।
আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ভাষাচিত্র প্রকাশনী আয়োজিত অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী রচিত ‘আমার দেখা ওয়ান ইলেভেন’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি’র লাগামহীন দুর্নীতি এবং সরকার পরিচালনায় অব্যবস্থাপনার কারণেই ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টি হয়। তখন হাওয়া ভবন তৈরি করে সরকার পরিচালনা করা হয়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নৈরাজ্য, জঙ্গিবাদের উত্থানের কারণে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতিকে বিরাজনীতি করার চক্রান্ত হিসেবে পাকিস্তানেও মার্শাল-ল জারি করা হয়। আমাদের দেশে ওয়ান ইলেভেনের সময় রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের জনসমুক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়, এটি সমীচিন নয়। তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রাণপন চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে তাকে হত্যা করা হয়। এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশলের ও নেতৃত্বের গুনাবলীর কাছে হেরে গিয়ে তারা চক্রান্ত করছে। বিএনপি এবং তাদের দোসররা শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা এখন ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
যেকোন উপায়ে তারা আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করতে চায় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা মাঝে মাঝে বলেন, শেখ হাসিনার পরিণতি পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্টের মতো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পান না।
মন্ত্রী বলেন, ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনার মুক্তির পর গণতন্ত্রের মুক্তি হয়। শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বাংলাদেশ আজ মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা এখণ শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি পৃথিবীর অনুকরনীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি বিশ্ব নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি বলেন, যে রাজনীতিবিদ সাহসী নন তিনি এক সময় রাজনীতি থেকে হারিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতিকে প্রচন্ড ভালো বাসতেন। সূর্যসেনকে একজন ডাকাত হিসেবে ফাঁসি দেয়া হয়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় সূর্যসেন স্মরনীয় হয়ে আছেন।
ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে তীব্রভাবে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমালোচনা করেছিলেন। এর দু’দিন পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। একে একে অনেকে গ্রেফতার হন। আমি তখন আমার বাসায় না থেকে অন্য বাসায় থাকি। আমার স্ত্রীও বাসা ছেড়ে বাইরে থাকতেন।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতারের পরে প্রতিপক্ষ মিষ্টি বিতরন করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পরেও পরবর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মিষ্টি বিতরন করা হয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকেও গ্রেফতারের পরে মিষ্টি বিতরন করা হয়।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে ‘আমার দেখা ওয়ান ইলেভেন’ শিরোনামে বই লেখার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেদিন কি ঘটেছিল তা মানুষকে জানানোর জন্য এই ধরনের একটি বইয়ের প্রয়োজন ছিল।
সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকতে হবে।
সাইফুল আলম বলেন, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এ গ্রন্থটি রচনা করে সাহসী ভুমিকা রেখেছেন। এই গ্রন্থটি মানুষকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখার সংগ্রামে শক্তি ও সাহস যুগাবে।
নঈম নিজাম বলেন, তৎকালীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতার লালসায় গণতন্ত্র ধবংসের খেলায় মেতে উঠেছিল। দেশে ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয়েছিল। গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী করতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতে হবে। তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবিরের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজের) মহাসচিব শাবান মাহমুদের পরিচালনায় এতে গ্রন্থের লেখক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ, লেখক ও গবেষক সুভাষ সিংহ রায়, কবি শাহানা পারভীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।