‘মোবাইল সংস্কৃতি’ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থানের এই যুগে মানুষের আত্মদর্শনের, নিজের সঙ্গে একাকী হওয়ার বর্তমান ধারাটি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা জানা থাকা দরকার। কারণ, মোবাইল সংস্কৃতি নতুন ধরনের ভ্রম তৈরি করছে। সমাজবিচ্ছিন্ন নির্বান্ধব নাগরিকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবোধ কাটাতে চাইছে। এই প্রবণতা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত।
কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষকে যতটা যুক্ত করছে, তার চেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন করছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিষয়টি সত্যি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মুহূর্তে মুহূর্তে যোগাযোগ একটা পর্যায়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিকাশ থামিয়ে দেয়। কারণ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেমনই হোক, মানুষ তো বটেই প্রাণীমাত্রই সম্পর্ক থেকে আড়াল খোঁজে।
তাই ব্যক্তিগত পরিসরের মতো সামাজিক পরিসরেও আড়াল দরকার। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নানা ফিচার দিয়ে এমন করে তৈরি করা, যা সব অসম্ভব সম্ভব করতে চায়, সবাইকে সারাক্ষণ মোহমুগ্ধ করে ধরে রাখতে চায়। এই মোহ ও আসক্তি থেকে মুক্তির চেষ্টাকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল ডিটক্স বা বিষমুক্ত হওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী টাইমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক যতক্ষণ জেগে থাকেন তার প্রায় অর্ধেকটা কাটান স্ক্রিনে চোখ রেখে। তা হতে পারে স্মার্টফোন, ট্যাবলয়েড বা কম্পিউটার।
২০১৪ সালের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন নাগরিকদের অনেকে ১৫ মিনিট নির্জনে চিন্তাভাবনা করার চেয়ে বৈদ্যুতিক ছ্যাকাকে (শক) বেশি পছন্দ করেন। এ এক সাংঘাতিক অবস্থা!
এই দুই গবেষণার অর্থ হলো, গড়পড়তা মার্কিন নাগরিকেরা প্রবলভাবে স্রোতে ভাসেন। একে অনেকে হয়তো ‘সাইট গাইস্ট’ বা কালের উদ্দীপনা বলবেন। কিন্তু জীবন নদীতে স্রোতের পাশাপাশি ভাটা না থাকলে, একটানা স্রোত মানুষকে ক্লান্ত করে, দীর্ঘ দিন ধরে এমনটি চলতে থাকলে তা মানুষকে উন্মাদ করে দেয়।
এ ক্লান্তি কাটাতে বেশি বেশি পার্টি করতে হয়, নানা ধরনের ওষুধ বা মাদকের কাছে জীবনকে ছেড়ে দিতে হয়। উন্নত বিশ্বের অর্থনীতি, বাজারব্যবস্থা ও ভোগের সংস্কৃতিসহ সংশ্লিষ্ট সবকিছু হয়তো এমনভাবে বিকাশ করেছে যে ওই সব দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে এর বাইরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
মার্কিন নাগরিকদের এই অবস্থা কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের বড় শহরগুলোতে বসবাসকারী মানুষের ক্ষেত্রেও খাটে। মার্কিন নাগরিক ও বাংলাদেশ বা ভারতের মানুষ আলাদা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে থাকলেও কারও সমস্যা কিন্তু কারও চেয়ে কম নয়। তাই রাষ্ট্র, সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনের এমন সংকটকালে রোজকার জীবনে নিয়মিতভাবে কিছুটা সময় একাকী থাকতে পারাকে রীতিমতো ‘বিপ্লবী কাজ’ বলে মনে করেন মাইকেল হ্যারিস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।