জুমবাংলা ডেস্ক : হার্টের সমস্যা নিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয় বাগেরহাট জেলা থেকে আসা জিহাদ নামে এক শিশু। হার্টে নানা রকমের সমস্যা ছিল তার। হাসপাতালে ভর্তির পর সাতদিন শিশু ওয়ার্ডে থেকেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল তাকে। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন এক চিকিৎসকের মনে সন্দেহ জাগে। ওই চিকিৎসক শিশুটির বাবাকে বার বার জিজ্ঞাসা করেছেন যে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ আছে কি না। শিশুটির বাবা বিষয়টি সবসময়ই অস্বীকার করে যাচ্ছিলেন।
একপর্যায়ে ওই শিশুর বাবার কথায় ভরসা না করে হাসপাতাল থেকে শিশুটির করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হওয়ার পর পরই ওই শিশুকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাগেরহাটে গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে গেছেন শিশুটির বাবা। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।
তবে ইতিমধ্যে যা ঘটার-তাই ঘটেছে। ওই শিশু ওয়ার্ডের একাধিক নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শুধু নার্সই নন, করোনা আক্রান্ত হয়েছেন হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসক, ওয়ার্ড মাস্টার ও আনসার সদস্যসহ আরও অনেকে।
এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নারী ও শিশু ওয়ার্ডসহ ৩টি ওয়ার্ড বন্ধ করে দিয়েছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে আরও আটজন হার্টের রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এরপর থেকেই চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য রোগীদের মধ্যেও অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার পরে ১৫ জন চিকিৎসক ও ৩৭ জন নার্স এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন। পর্যায়ক্রমে তাদেরও করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এভাবে চলতে থাকলে কিছু দিনের মধ্যে হয়তোবা পুরো হাসপাতালটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আজ মঙ্গলবার সেই করোনা আক্রান্ত শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. শাহরিয়ারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ওই শিশুর বাবা তথ্য গোপন করায় আমরা এই ঝামেলায় পড়েছি। আমি ওই শিশুর চিকিৎসা করছিলাম। শিশুটি আমার অধীনেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিল। আমি ওই শিশুটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময়ও আমার নার্সকে এমনিতেই সর্তক করেছিলাম। তাকে বলেছিলাম খেয়াল করো যেন খোলা মুখে হাঁচি, কাশি না দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে আমাদের ধারণাই সত্যি হলো। তার করোনা পজেটিভ। এখন পুরো শিশু ওয়ার্ড বন্ধ। আমরা সবাই চিন্তিত। আমারও স্যম্পল দিয়েছি পরীক্ষা করতে। এখনো রিপোর্ট পাইনি।’
‘ওই শিশুটির সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেন তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন। না হলে তথ্য গোপনের কারণে আরও অনেক মানুষ বিপদে পড়তে পারেন,’ বলেন ডা. শাহরিয়ার।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক কাজল কুমার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ছয়জন চিকিৎসক, আটজন সেবিকা, একজন ওয়ার্ড মাস্টার, তিনজন স্টাফ-এর করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও ১৫ জন চিকিৎসক ও ৩৭ জন সেবিকা কোয়ারেন্টিনে আছেন। এ পর্যন্ত ৩টি ওয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কিছু দিনের মধ্যে পুরো হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে একজন নার্স ও একজন আনসার সদস্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর বাকি সবাই নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ আরও একজন চিকিৎসককে হাসপাতালে নিতে হবে।’
হাসপাতালে অপর এক চিকিৎসক পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘এখানে যারা হার্টের রোগী আছেন, তাদের মধ্যে আটজন রোগীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে মারাও গেছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এখানে চিকিৎসা দেওয়ার মতো কাউকেই পাওয়া যাবে না। আর রোগীরাও সবাই আতঙ্কিত অবস্থায় আছেন।’
সূত্র : দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



