বিনোদন ডেস্ক : নাম—বোগেনভিলা। নাম শুনে কি মনে হচ্ছে? সিনেমার নাম এমন শুনলে মনে হতেই পারে যে, কোনো বাড়ি–ঘরের নাম বুঝি। কিন্তু আদতে তা নয়। এটি আসলে এমন একটি ফুলের নাম, যা আমাদের অনেকেরই বেশ পরিচিত। সেটি হলো কাগজি ফুল। উজ্জ্বল রঙের এই ফুল গাছ ভরে হয়। আর সেই ফুলেই কিনা লেগে আছে রক্তের দাগ!
সিনেমার শুরুতেই এক পুরুষ ও এক নারী গাড়িতে করে হাইওয়েতে চলতে দেখা যায়। নারী ঘুমিয়ে ছিলেন। পুরুষটি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দেখে মনেই হবে, এক দম্পতি ফিরছেন গাড়িতে করে। স্ত্রী হয়তো ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেছেন। আর স্বামী চালাচ্ছেন গাড়ি গন্তব্যের। বেশ একটা রোমান্টিক পরিবেশ। হুট করেই ছন্দপতন। এক লরির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গেল গাড়ি।
এভাবেই শুরু হয় ‘বোগেনভিলা’। মালায়লম সিনেমা। পরিচালক অমল নীরাদ। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সিনেমা হলে মুক্তি পায় এই সিনেমা। অভিনয় করেছেন কুনচাকো বোবান, জ্যোতির্ময়ী, ফাহাদ ফাসিল প্রমুখ। এখন অবশ্য সিনেমাটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম সনি লিভ–এও দেখা যাচ্ছে। এর ঘরানা হিসেবে বলা হয়েছে মিস্ট্রি–থ্রিলার।
আবার গল্পে ফেরা যাক বরং। মারাত্মক ওই সড়ক দুর্ঘটনার পরই ধীরে ধীরে ওই দম্পতির পরিচয় পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়। জানা যায়, স্বামী রয়েস থমাস চিকিৎসক। আর স্ত্রী ঋতু গৃহিণী, ছবি আঁকা তার শখ। সেই ছবিও বিক্রিও হয় বেশ। যদিও একটু কিন্তু কিন্তু বোধ হতেই থাকে। প্রথমে স্বামী–স্ত্রীর আলাপ, আচরণে মনেই হয় যে, তাদের দুই সন্তান আছে। তারা স্কুলে যায়, খেলে, মায়ের সঙ্গে গল্প করে, রাতে ঘুমোনোর আগে বায়না ধরে। তবে ঋতু মনে রাখতে পারে না অনেক কিছুই। রয়েসের সংলাপে জানা হয়, ওই সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকেই ঋতুর এ অবস্থা। মাঝে মাঝে রয়েসকেও চেনে না। যদিও রয়েস বেশ সর্বংসহা ঘরানার, স্ত্রীর অসুখ তার চেহারায় সামান্য বিরক্তির আভাসও আনতে পারে না। উল্টো মমতাময় এক স্বামীর ভূমিকায় দেখা যায় রয়েসকে, যে স্ত্রীর জন্য অনেক কিছুই করতে পারে। ঠিক সেই সময়টাতেই তাদের জীবন বেসুরো হয়ে ওঠে পুলিশ কর্মকর্তা ডেভিড কোশির আগমনে। আর তখনই জানা যায়, আসলে কোনো সন্তানই নেই ঋতুর, পুরোটাই নাকি হ্যালুসিনেশন! ওদিকে আবার পুলিশ বার বার জানতে চায় তিন মেয়ের কিডন্যাপের বিষয় নিয়ে, জেরা চলতে থাকে ঋতুর। কারণ পুলিশের সন্দেহ যে ঋতুর দিকেই!
সিনেমাটিতে ক্যামেরার কাজ দারুণ। ভারতের কেরালার যে স্বাভাবিক সৌন্দর্য, সেটি ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। বিশেষ করে, সিনেমাটির আবহ সঙ্গীত দুর্দান্ত। প্রত্যেকটি দৃশ্যের সঙ্গে খুবই মানানসই সুরের ব্যবহার লক্ষণীয়। অনেক সময় শুধু আবহ সঙ্গীতের কারণেই একটি সাধারণ দৃশ্যের মধ্যেও রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
এই সিনেমার মধ্য দিয়েই দীর্ঘ বিরতির পর আবার পর্দায় ফিরে এসেছেন অভিনেত্রী জ্যোতির্ময়ী। এবং সেই ফেরাটা যে দারুণ হয়েছে, তা শুরুতেই স্বীকার করে নেওয়া প্রয়োজন। ‘বোগেনভিলা’র মূল চরিত্র তিনটিই। এর মধ্যে একটিতে ঋতু হিসেবে দেখা গেছে জ্যোতির্ময়ীকে। তাঁর অভিনীত চরিত্রে শেড ছিল হরেক। কখনো মমতাময়ী মা, কখনো কাগজি ফুলের ছবি ছাড়া অন্য কিছুই আঁকতে না পারা অসহায় শিল্পী, আবার কখনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো নারী হিসেবে একেক সময় একেক রূপে পাওয়া গেছে জ্যোতির্ময়ীকে। এই সবগুলো রূপেই বিশ্বাসযোগ্য ছিলেন তিনি। একবারের জন্যও মনে হয়নি যে, দীর্ঘ বিরতির পর তিনি ফের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। বরং প্রচণ্ড সাবলীল ছিলেন জ্যোতির্ময়ী।
রয়েস থমাসের চরিত্রটি রূপায়নের দায়িত্বে ছিলেন কুনচাকো বোবান। এক কথায়, অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন বোবান। সেদিক থেকে পুলিশ কর্মকর্তা ডেভিড কোশির চরিত্রে থাকা ফাহাদ ফাসিলের পর্দার উপস্থিতি তুলনামূলক কমই ছিল। তবে যতটুকু ছিল, তাতে পুরোপুরি সাবলীল ছিলেন তিনি।
সব মিলিয়ে ‘বোগেনভিলা’ একটি দুর্দান্ত গল্পের সফল চিত্রায়ন। এই সিনেমার শুরুতে গল্প এগোয় কিছুটা এলোমেলো ঢঙে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটিই এক সময় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে এমন এক ক্লাইম্যাক্সে ছবিটি শেষে পৌঁছায়, যা শুরুতে কল্পনা করাও ছিল কঠিন। এরই মধ্যে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘বোগেনভিলা’। কেউ কেউ এই মালায়লম সিনেমাকে বছরের সেরা থ্রিলার বলতেও দ্বিধা করছেন না।
বছরের সেরা থ্রিলার ‘বোগেনভিলা’ কি না, সেটি বিতর্কের বিষয়। তবে দুর্দান্ত গল্প, দুরন্ত অভিনয় দক্ষতা ও কুশলী পরিচালনার মিশেলের এক অনবদ্য উদাহরণ এ সিনেমা। বলে দেওয়াই যায় যে, বছরের অন্যতম সেরা মিস্ট্রি–থ্রিলার হলো ‘বোগেনভিলা’। অন্তত প্রথম তিনটি ছবির তালিকা করলে এই সিনেমা জায়গা করে নেবেই।
এবার নাহয় দেখেই ফেলুন ‘বোগেনভিলা’। না দেখলে পরে কিন্তু আফসোস হবেই!
রেটিং: ৪.৬০ / ৫.০০
পরিচালক: অমল নীরাদ
চিত্রনাট্য: লাজো জোস ও অমল নীরদ
অভিনয়শিল্পী: কুনচাকো বোবান, জ্যোতির্ময়ী, ফাহাদ ফাসিল প্রমুখ।
ভাষা: মালায়লম
ধরন: ক্রাইম, মিস্ট্রি, থ্রিলার
মুক্তি: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪/সনি লিভ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।