এন্ড্রু কিশোর বাংলা গানের জগতের এক নক্ষত্র। মাত্র একদিন আগেই এই নক্ষত্রের বিদায় ঘটে। বর্তমানে তার মরদেহ রাখা হয়েছে রাজশাহীর একটি হাসপাতালের হিমঘরে। বরেণ্য এই সংগীত শিল্পীর শৈশব-কৈশোর ও যৌবন কেটে রাজশাহীতেই। তারপর একদিন স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে দেশ ও দেশের সীমানা পেরিয়ে পরিচিত পান এন্ড্রু কিশোর। তবে তার আসল নাম ছিল ‘কিশোর কুমার বাড়ৈ’।
রাজশাহীতে ১৯৫৫ সালে জন্ম নেন এন্ড্রু কিশোর। বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ। মা রাজশাহীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা মিনু বাড়ৈ। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি। মা মিনু ছিলেন সংগীত অনুরাগী মানুষ। তার পছন্দের গায়ক ছিলেন কিশোর কুমারের ভক্ত। তাই কিশোর কুমারের নাম অনুযায়ী এন্ড্রু কিশোরের নাম রাখেন ‘কিশোর কুমার বাড়ৈ’। মায়ের ইচ্ছা ছিল কিশোর কুমারের মতো তার ছেলেও একদিন নাম করবে। মায়ের ইচ্ছাতেই রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে সংগীতে প্রথম পাঠ শুরু করেন তিনি।
সত্তর দশকের শেষ দিকে প্লেব্যাকের জগতে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলা ছায়াছবির গানসহ হিন্দি সিনেমায় গান গেয়ে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন এই নন্দিত সংগীত শিল্পী।
এন্ড্রু কিশোরের সার্টিফিকেটের নাম এন্ড্রু কিশোর ছিল না। ছিল এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। গান করতে এসে তিনি সেই নাম ছোট করে এন্ড্রু কিশোর করেন তিনি নিজেই। নিজের নাম ছোট করার বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন এই নক্ষত্র।
তার ভাষ্যে, যখন তিনি ছায়াছবির গানে অংশ নেন তখন একদিন পরিচালক দেওয়ান নজরুল বলেন, তোমার নাম তো অনেক বড়। কমার্শিয়ালি কিন্তু এ নামের কোনো ভ্যালু নেই! এই নামটা শুট করতেই তো ১০ রিল ফিল্ম বেশি লাগবে। তাছাড়া পৃথিবীর অধিকাংশ তারকারা নিজেদের নাম বড় হওয়ায় দুই শব্দে ব্যবহার করেছেন। যেমন এলভিস প্রিসলি, লতা মুঙ্গেশকার, উত্তম কুমার, মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার সবার নামেই দুই শব্দের। তাই দুই শব্দের নাম ব্যবহার করার পরামর্শ দেন ওই পরিচালক। এরপরেই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন এন্ড্রু কিশোর।
পরিচালকের সেই কথায় নিজের নাম ছোট করার জন্য ছুটে যান রাজশাহীতে বাবা-মায়ের কাছে। তিনি চিন্তা করেন, মায়ের যেহেতু মায়ের দেয়া ডাক নাম, সেটা তো রাখতেই হবে। তবে কিশোর কুমার রাখলে মিলে যায়। ক্রিশ্চিয়ানিটির কারণে ‘এন্ড্রু’টাও রাখতেই হবে।
এন্ড্রু কিশোর বলেন, ভাবলাম তাহলে পৈতৃক ‘বাড়ৈ’ টাইটেলটা ফেলে দিই। বিষয়টি যখন তার বাবা-মাকে জানালাম তখন বাবা খুবই দুঃখ পায়। তখন বাবাকে বলি আমি ফেলে দিচ্ছি না। নিজের প্রফেশনের জন্য নামটা ছোট করতে চাই। তাছাড়া সার্টিফিকেটে তা থাকছেই। সেই থেকে কুমার আর বাড়ৈ ফেলে দিয়ে হয়ে গেলাম ‘এন্ড্রু কিশোর’।’
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে সোমবার (৬ জুলাই) না ফেরার দেশে চলে গেছেন আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। জীবদ্দশায় তিনি প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।