মডেলিং, অভিনয়, উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় যাচ্ছে পিয়া জান্নাতুলের। এত সব কিছুর পাশাপাশি আইনজীবী পেশার সাথেও জড়িত তিনি। এবার প্রতিবন্ধী নারী বানু আক্তারের পক্ষ হয়ে আইনি লড়াইয়ে নামছেন তিনি।
বানু আক্তার, নিজে প্রতিবন্ধী। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই চাকরি তুলে দিয়ে ছিলেন স্বামীর হাতে। মন্ত্রীকে অনুরোধ করে নিজের বদলে স্বামীকে চাকরি দেন। যে স্বামীকে তিনি ভিক্ষা করে লেখাপড়া করিয়েছেন। চাকরি নেওয়ার আগে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি চাকরি জুটে যাওয়ার পর সেই স্বামী বানুকে ছেড়ে যায়। চেষ্টা করেন আরেকটা বিয়ের। প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে আজ বাধ্য হয়েই মামলা করেছেন বানু আক্তার। তাকে সহযোগিতা করেছেন মডেল ও আইনজীবী জান্নাতুল পিয়া।
খোরশেদ আলম বানুর স্বামীর নাম। বানুকে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। খোরশেদের সঙ্গে বানু বাড়ি ছেড়েছিলেন। কোনাবাড়ীর হরিণাচালায় একটা ছোট ঘরে উঠেছিলেন, পেতেছিলেন সংসার। একটা গার্মেন্টের ঝুটের গুদামে চাকরিও জুটিয়ে নিয়েছিলেন। সেই চাকরির টাকা দিয়ে স্বামীর পড়াশোনার খরচও জুগিয়েছেন। চাকরি হারা হওয়ার পর মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করতেন। সেই টাকা দিইয়ে স্বামী খোরশেদ পড়াশোনা করতো।
এর মাঝেই তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসে। বানু শখ করে নাম রাখেন বেলাল। বেলালকে নিয়েও স্বপ্ন দেখতে থাকেন বানু। ইচ্ছা ছেলেকে মাদরাসায় পড়াবেন।
বানুর চাকরির টাকায় সুন্দরভাবেই চলছিল সংসার। কিন্তু একদিন চাকরিটা হারালেন। কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।
বানু আক্তার বলেন, মুই তখন ভিক্ষা করা শুরু করো। মোর বাপ-মা কায়ো জানে না। ভিক্ষা করি মুই স্বামীক পড়ান্যাকা করাছু। আইএ পাস থাকি এমএ পর্যন্ত মোর টাকাত অয় পড়িছে। মুই দুই বছর মন্ত্রীর পিছোত ঘুরি ঘুরি অঁক চাকরি নিয়া দিছু।
খোরশেদের চাকরির বিষয়টি যখন মোটামুটি চূড়ান্ত, তখন জানা গেল তিনি কম্পিউটার বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। অথচ যে পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সেটা কম্পিউটার অপারেটরের। বানু আক্তার তাকে কোনাবাড়ীতে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দেন। কম্পিউটার শিখে খোরশেদ যোগ দেন চাকরিতে। এর পরই তার আসল চেহারা দেখা যায়। গত বছর কোরবানির ঈদের আগে অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান খোরশেদ।
একমাত্র ছেলে বেলালকে নিয়ে কোনাবাড়ীতেই থেকে যান বানু আক্তার। জনে জনে একটা চাকরি খুঁজে বেড়ান। একদিকে স্বামীর প্রতারণা, অন্যদিকে বেঁচে থাকার লড়াই। এর মধ্যে পিয়ার সঙ্গে পরিচিত হলে বানু আলো খুঁজে পান।
পিয়া বলেন, আমার একটা অফিস আছে। সেখানেও তাকে একটা কাজ দিতে পারতাম; কিন্তু চাইনি তাকে কেউ কটু কথা বলুক। তার চেয়ে বানু নিজে একটা স্বাধীন ব্যবসা করলেই ভালো।
পিয়া মামলা প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে লিখেছেন, বানু আক্তার, আমি আগেও তাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম তাকে সাবলম্বী করার জন্য। এক সমস্যা না যেতেই আর একটা। যৌতুকের নির্যাতনের শিকার তিনি। এই একবিংশ শতাব্দীতে, যে মহিলা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে স্বামীর খোরাক জোগাতে হয় তাকেও যৌতুক এর শিকার হতে হয়। আর অন্য মেয়েদের কি অবস্থা ভাবতেও ভয় লাগে। আজকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে “নারী ও শিশু নির্যাতনের দমন আইন” ১১ (গ) এ মামলা করলাম।
জানা গেছে, ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনারের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।