আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সরকার সামলানোর গুরুত্বপূর্ণ ‘ম্যাচে’ খাতায়কলমে তার হাতে সময় আছে। কিন্তু সাবেক পাক ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খানের টিম রাজনীতির ক্রিজে কত ওভার টিকে থাকতে পারবে, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন সেটাই। পাকিস্তানের রাজনীতিতে হঠাৎ আবির্ভূত পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা পিডিএম নামে ১১টি রাজনৈতিক দল সরকারবিরোধী একটি জোট গঠন করেছে। বস্তুত ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে কোমর বেঁধেছে তারা। ধারাবাহিক আন্দোলন করছে। ফলে মেয়াদ ফুরানোর প্রায় তিন বছর আগেই প্রবল চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী ইমরান ও তার পিটিআই সরকার।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল (এন) এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলওয়ালেল পিপিপি তো আছেই, তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও ৯টি দল। গত মাসেই এই জোট তৈরি হয়েছিল। এক-একটি শহরে কর্মসূচি করে তারা ইমরান সরকারকে প্রতিনিয়ত আক্রমণ করে চলেছে।
পঞ্জাবের রাজধানী লাহোরের অদূরে গুজরানওয়ালায়, সিন্ধু প্রদেশের করাচির জিন্নাহ স্টেডিয়ামে ইতোমধ্যেই লাখ লাখ জনতার সমাবেশ করেছে এই বিরোধী জোট। জানুয়ারিতে রাজধানী ইসলামাবাদে হবে লংমার্চ। ইমরানের পাশাপাশি তার ঘনিষ্ঠ সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধেও উঠেছে ‘মুর্দাবাদ’ স্লোগান।
ইমরান খান ও তার দলের ‘রক্তচাপ’ বাড়িয়ে পুলিশসহ সরকারি কর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। বাণিজ্য শহর করাচি জ্বলছে। বুধবার সেখানে এক বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।
তবে এবারের এই ক্ষমতার লড়াই ৬৮ বছরের ইমরানের পক্ষে বেশ কঠিন বলে জানাচ্ছে দেশটির সংবাদমাধ্যমের বড় অংশ। ২০১৮ সালের আগস্টে পাক রাজনীতির তিন দশকের পিএমএল (এন)-পিপিপি মেরুকরণ উড়িয়ে জয়ী হন ইমরান খান অর্থাৎ তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই।
ভোটে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরানের ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার স্লোগানে আস্থা রেখেছিল আমজনতা। কিন্তু গত দুই বছরে দেশের অর্থনীতির নাজুক অবস্থা আর সেনাবাহিনীর প্রভাববৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে ক্রমশ অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। তারই সুযোগ নিচ্ছে বিরোধীরা। আর তা দমন করতে গিয়ে আরও চাপে পড়ছেন ইমরান।
অনেকেই মনে করেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নেয়া ইমরান আমজনতার ‘মুড’ আঁচও করতে পারছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে বিরোধীদের আন্দোলনের চাপে নতিস্বীকার করার বদলে প্রত্যাঘাতের রাজনীতির পথেই হাঁটতে চান তিনি। তাই লন্ডনে অবস্থানরত নওয়াজকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।
নওয়াজের ভিসা বাতিল করে তাকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর জন্য ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকেও চিঠিও পাঠিয়েছে ইসলামাবাদ। কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সিন্ধু প্রদেশের পুলিশ প্রধানকে (আইজি) অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ ওঠার পরে ফের কিছুটা ব্যাকফুটে ইমরান। এমনকি ইমরানঘনিষ্ঠ সেনাপ্রধান বাজওয়াকে পরিস্থিতি সামলাতে তদন্তের ঘোষণাও করতে হয়েছে।
অভিজাত পশতুন পরিবারের সন্তান ইমরানের জীবনে সাফল্য ঈর্ষণীয়। ১৩ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করে মাত্র ১৮ বছরেই জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য হয়েছিলেন। পেয়েছেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘হিলাল-ই-পাকিস্তান’ খেতাব। ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে নতুন দল গড়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
সেনাবাহিনী ও আইএসআইয়ের সঙ্গে তার গোপন যোগাযোগের খবর বারবার মিডিয়ায় আসলেও পাত্তা দেননি। তবে এবার পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। ক্রিকেটজীবনের ক্যারিশমা তাকে বহুবার হারা ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু রাজনীতির এই ম্যাচ তিনি বাঁচাতে পারবেন কি? সময় আসলেই হয়তো পাওয়া যাবে তার উত্তর।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।