সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুষ্ঠিত (৫টি ব্যাংকের অফিসার ক্যাশ) শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতির অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ।
পুলিশ বলছে, প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদরা ফাঁসকৃত প্রশ্নের উত্তর মুখস্থের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বুথ বসাতো। প্রতি বুথে ২০ থেকে ৩০ জন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার ৫-৬ ঘণ্টা আগেই ওই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করিয়ে কেন্দ্রে পাঠাতো। এর পর প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিতো তারা।
গত ৬ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাকৃতরা হলো, মো. মোক্তারুজ্জামান রয়েল, মো. শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহামান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন।
এ সময় তাদের থেকে থেকে ১টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন মডেলের ৫টি মোবাইল, ৪টি প্রশ্নপত্র, ৪টি উত্তরপত্র , হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) এ রক্ষিত উত্তরপত্রের ছবি, ০১ টি প্রবেশপত্রের ফটোকপি ও নগদ ৬ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
বুধবার বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুষ্ঠিত ০৫টি ব্যাংকের এক হাজার ৫১১ টি ‘অফিসার ক্যাশ’শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষা গত ৬ নভেম্বর বিকাল ৩ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। আহসানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটি এই পরীক্ষা সম্পাদন করে।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, দীর্ঘদিন যাবত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কাজ করতে থাকা গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্য পায় ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে এই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের একজন সদস্য ছদ্মবেশে পরীক্ষার্থী সেজে পরীক্ষার দিন ০৬ নভেম্বর সকাল ৭ টায় প্রশ্নপত্রসহ উত্তর পাওয়ার জন্য চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের হোতা রাইসুল ইসলাম স্বপনকে অগ্রিম টাকা পরিশোধ করা হলে পরীক্ষার্থীকে বুথে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত পরীক্ষার উত্তরপত্রসহ তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, স্বপনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ নভেম্বর শ্রীনগর থেকে রূপালী ব্যাংকের সাভার শাখার সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জানে আলম মিলনের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডা থেকে মো. শামসুল হক শ্যামলকে গ্রেপ্তার করা হয়। শামসুল হক শ্যামলকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস করার কথা স্বীকার করে। এই চক্রের মূল হোতা মো. মুক্তারুজ্জামান রয়েলকে বাড্ডার আলিফনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মো. মুক্তারুজ্জামান রয়েল আহসানউল্লাহ ইউনির্ভাসিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে আইসিটি টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত আছে। মুক্তারুজ্জামান আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তা উক্ত পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সংগ্রহ করেছে বলে স্বীকার করে। গ্রেপ্তার আসমীদের দেয়া তথ্য, মোবাইল ফোনে থাকা তথ্য এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর লালবাগ থেকে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির এই কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর বাড্ডা, বসুন্ধরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, কল্যানপুর, রূপনগর, মিরপুর, মাতুয়াইল, শেওড়াপাড়া, শেরেবাংলানগর, পল্লবী এলাকায় বুথ রয়েছে। যেখানে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক বুথে ২০ থেকে ৩০ জন পরীক্ষার্থীকে এসব পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর মুখস্থ করিয়ে কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মুক্তারুজ্জামান ও শ্যামল সুকৌশলে ৩ বার বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর ফাঁস করেছে। শ্যামল এই চক্র পরীক্ষার ৫-৬ ঘন্টা আগেই বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার পরীক্ষার্থীদের মাঝে ফাঁস হওয়া পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর সরবরাহ করেছে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।