নভেম্বরের শেষের দিকে এক সঙ্গে তিনটি ট্রপিক্যাল ঝড়ের আগমন এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়েছে। মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশেষজ্ঞ ফ্রেডোলিন টাঙ্গাং বলেন, ‘ঝড়গুলো সাধারণের চেয়ে দুর্লভ ও অস্বাভাবিক ছিল।

একটিতে ছিল ঝড় সাধারণত হয় না এমন স্থানে, অন্যটি শ্রীলঙ্কার এমন এলাকায় ধাবিত হলো যেখানে সাধারণত ট্রপিক্যাল ঝড় আসে না, এবং তৃতীয়টি শেষ পর্যায়ে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনসে অতিরিক্ত বৃষ্টি নামানোর পথে।’
এই ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধসের ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্তত ১,৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেক এলাকা এখনও পানির নিচে, এবং শত শত মানুষ নিখোঁজ।
তদন্তে জানা যায়, এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সৃষ্টি করেছে এক জটিল আবহাওয়ার ‘ককটেল’—লানিন্যা এবং নেগেটিভ ইন্ডিয়ান ওশিয়ান ডিপলসহ ত্রাণকল্পে মানুষের দ্বারা সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, যা ভারী বৃষ্টিপাতকে আরও প্রবল করেছে।
ফিলিপাইনসের আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ জোসেফ বাসকনসিল্লো বলেন, ‘একবার মাটি সম্পূর্ণ ভিজে গেলে, অতিরিক্ত বৃষ্টি তৎক্ষণাৎ ভয়াবহ বন্যায় পরিণত হয়।’ দক্ষিণ থাইল্যান্ডে ৮ ফিট উচ্চতার বন্যার জল ত্রাস সৃষ্টি করেছে। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় ৮৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, এবং বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ। শ্রীলঙ্কায়ও অনেক অঞ্চল ধ্বংস হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা ভবিষ্যতে আরও সাধারণ হয়ে উঠবে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া উষ্ণায়নের কারণে দুইগুণ দ্রুত গরম হচ্ছে, যা ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের শক্তিকে বৃদ্ধি করছে।
বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য গবেষকরা জানাচ্ছেন, বন উজাড়, পরিবেশের অবনতি এবং দুর্নীতির কারণে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়ছে। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও ফিলিপাইনসে অবকাঠামো দুর্বলতা ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-৩০) বৈশ্বিক দেশগুলো দেশগুলোকে কঠোরভাবে ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, ঝড় ও বন্যার প্রকোপ বাড়ছে। এবং সরকারগুলোর জন্য এটি সময়ের দাবি, তারা কেবল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে নয়, নিজ দেশের প্রস্তুতিও নিশ্চিত করবে, যাতে মানুষ এবং দেশ ধ্বংস থেকে রক্ষা পায়।
আগামী সপ্তাহে সুমাত্রা ও শ্রীলঙ্কায় আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে, এবং ফিলিপাইনের পূর্ব দিকে নতুন ঝড় তৈরি হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



