জুমবাংলা ডেস্ক : বরিশালের উজিরপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে রিমান্ডে নিয়ে এক নারী আসামিকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ওই নারীকে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং তাকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন আসামির স্বজন, আইনজীবী ও মানবাধিকার নেতারা। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। রিমান্ডে নারী আসামিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
গত ২৬ জুন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি এলাকা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার ভাই বরুন চক্রবর্তী ওইদিনই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি হিসেবে মিনতিকে ওইদিন গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩০ জুন বরিশালের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালত মিতুর ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে গত ২ জুলাই মিতুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এ সময় তাকে খুঁড়িয়ে হাটতে দেখে এর কারণ জানতে চান আদালত। মিতু পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে তাকে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করেন। আদালত একজন নারী কনস্টেবল দিয়ে তার দেহ পরীক্ষা করে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পান। এরপর আদালত তার যথাযথ চিকিৎসা প্রদান এবং তাকে নির্যাতনের বিষয়ে শের-ই বাংলা মেডিকেলের পরিচালককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।
মিতুর ভাই উত্তম অধিকারী জানান মিতুকে থানায় রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক এবং যৌন নির্যাতন করে পুলিশ। এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য তাদের হুমকিও দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়ে তাদের উপর চাপ সৃস্টি করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মিতুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান বলেন, মিনতিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিলো। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে সতর্কতার সাথে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ মিনতিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক এবং স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করেছে। যা যৌন নির্যাতনের শামিল। এটা গুরুতর অন্যায়। তিনি এই ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
বরিশাল জেলা মানবাধিকার জোটের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডে নিয়ে আসামি নির্যাতন করতে পারেন না পুলিশ। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, আদালত মিতু অধিকারীকে চিকিৎসা প্রদান এবং অন্যান্য (শারীরিক ও যৌন নির্যাতন) বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই নারীকে চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি তাকে নির্যাতনের বিষয়ে যথাসময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
তবে থানায় রিমান্ডের সময় মিতু অধিকারীকে শারীরিক কিংবা যৌন নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেন উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। রিমান্ডে নিলে সবাই পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে বলেও জানান তিনি।
গত শুক্রবার রাত ১০টায় শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয় মিতু অধিকারীকে। পরে তাকে হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসি সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সেখানে পাঁচ ঘণ্টার চিকিৎসা প্রদান শেষে ওই দিন রাত তিনটায় দ্রুত কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।