অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কন্ঠ শুনে কিংবা ফোন নম্বরের শেষের ২/৩টি ডিজিট বললেই পুরো মোবাইল নম্বর বলে দিতে পারেন জন্মান্ধ মিজানুর রহমান।
প্রতিভাবান এই মিজানুরের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম টাঙ্গারিপাড়া গ্রামে। তিনি কৃষক মনতাজ আলী এবং মমিনা বেগম দম্পতির পুত্র। জন্ম থেকে দুই চোখ অন্ধ মিজানুরের বয়স ২২ বছর। দুই ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছোট। বড় বোন মরিয়মের বিয়ে হয়ে গেছে।
মিজানুর অষ্টম শ্রেণিতে পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও অন্ধত্বের কারণে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। অভাবের সংসারে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে সংসারের হাল ধরতে ২০১৭ সালে ফ্লেক্সিলোডের দোকান দেন। এই ব্যবসা দিতে গিয়ে শুরুতে কিছুটা বিপদে পড়লেও এখন আর কোনও সমস্যা হয় না মিজানুরের। তিনি এই কয়েক বছরে তার মেধা শক্তি দিয়ে ফ্লেক্সিলোড, বিকাশ, রকেটসহ টাকা লেনদেন করার ৫ হাজার মোবাইল নম্বর মুখস্থ বলতে পারেন।
এরমধ্যে মিজানুর ৩ হাজার মোবাইল নম্বরসহ ব্যক্তির নাম এবং কন্ঠ শুনে অথবা শেষের ২/৩টি ডিজিট বললেই পুরো ফোন নম্বর বলে দিতে পারেন। আশ্চার্য্যজনক হলেও সত্যি মিজানুরের দোকানে কেউ একবার ফ্লেক্সিলোড অথবা টাকা লেনদেন করলেই সেই নম্বরটিও মুখস্থ রাখতে পারেন। এলাকার পরিচিত মানুষের সকল মোবাইল নম্বর এবং যারা একবার লেনদেন করেছেন তাদের ফোন নাম্বার অনায়সে বলতে পারেন মিজানুর।
মিজানুর রহমান জুমবাংলাকে জানান, শুরুতে কিছুটা সমস্যা হতো। কিন্তু এখন আর হয় না। চোখে না দেখলেও কোন বাটুনে কোন সংখ্যা এটা মোবাইল সেটের উপর হাত রেখে বলে দিতে পারি। ব্যবহার করতে করতে আমার সব জানা হয়ে গেছে। বিকাশে (ব্র্যাক ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং) বা রকেটে (ডাচবাংলা মোবাইল ব্যাংকিং) টাকা পাঠাতে কোনও সমস্যা নেই। শুধু ইনকামিংয়ের ক্ষেত্রে আমাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি হট লাইনে কথা বলে নিশ্চিত কিংবা অন্য কারো সহযোগিতা নিতে হয়।
মিজানুর বলেন, দোকান ঘরের ভাড়া নেন না মালিক পক্ষ। টাপুরচর বাজারে প্রায় ৮/১০টি ফ্লেক্সিলোডের দোকান রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষজন আমার দোকান থেকে মোবাইলে লেনদেন করে থাকে। এতে করে দিন ৩/৪শ টাকা আয় হয়। এই দিয়ে অতিকষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছি। অর্থ সংকটের ব্যবসার পুঁজি বৃদ্ধি করতে পারছেন না বলেও জানান মিজানুর।
বাজারের ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন, শামীম, সাইফুল ও ফিরোজ জুমবাংলাকে বলেন, মিজানুরের শ্রবণ শক্তি খুবই তীক্ষ্ম, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতোই ফ্লেক্সিলোডের দোকান করছে। গ্রাহকদের সাথে টাকা লেনদেনে কোনও ঝামেলার ঘটনা আমাদের চোখে পড়েনি। ফ্লেক্সিলোড করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে তার। মোবাইল নম্বর তার লিখতে হয় না তাকে। আমরা নিয়মিত তার দোকান থেকেই মোবাইলে লেনদেন করি।
দোকানের ঘর মালিক চাঁন মিয়ার জুমবাংলাকে জানান, আমি যখন জানতে পারি দরিদ্র পরিবারের অন্ধ ছেলে মিজান ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতে পারবে তখনই আমি তাকে একটি ঘর দেই। কোনও প্রকার জামানত ছাড়াই ঘরটি তাকে ভাড়াবিহীন দিয়েছি। সে যতদিন ব্যবসা করবে ততদিন আমি তার কাছ থেকে কোনও প্রকার ভাড়া বা টাকা-পয়সা নেবো না।
মিজানুরের বাবা মনতাজ আলী জুমবাংলাকে বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। এরমধ্যে মিজানুর বলতে গেলে জন্ম থেকেই অন্ধ। অভাবের সংসারে মিজানের চিকিৎসা করার জন্য উলিপুর,রংপুর ও দিনাজপুর চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে গেছিলাম। চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার চোখের অপারেশন করতে চেয়েছিল। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে মিজানের অপারেশন করাতে পারি নাই। বর্তমানে ১০ শতক বাড়িভিটা ছাড়া আমাদের কিছুই নেই। এই জমির মধ্যেও ৬ভাইয়ের অংশ রয়েছে। তিনি ছেলের দুই চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য সরকারের কাছে সহযোগিতা চান।
বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান কবীর হোসেন জুমবাংলাকে জানান, এই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল ইমরান জুমবাংলাকে জানান, আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিজানুরের বিষয়টি জানতে পেরেছি। খোঁজখবর নিয়ে মিজানুরের জন্য সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন সহযোগিতার ব্যবস্থা করবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।