আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফায় আশ্রয় নিয়েছে প্রায় দেড় মিলিয়ন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত। এই রাফাতে হামলা শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। নিজ ভূমিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের শেষ আশ্যয়টুকু পড়েছে হুমকির মুখে।
অবরুদ্ধ ছিটমহলে ইসরাইলের আক্রমণের সময় গাজার অন্যান্য অংশ থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা হয়। যে আক্রমণে ২৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল।
এ সময় ইসরাইল রাফাকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এখন সেখানেই স্থল হামলার হুমকি দিচ্ছে। সেখানে এক মিলিয়নেরও বেশি লোক আটকা পড়েছে, তারা আতঙ্কিত, তাদের আর কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই।
রাফাহ হলো বেশ কয়েকটি অঞ্চলের মধ্যে সর্বশেষ এলাকা যেটাকে বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হতে পারে বলে ঘোষণা দিয়ে আসছিল ইসরাইল। চার মাসের চলমান এ আক্রমণে ইসরাইল একের পর এক এলাকায় হামলা চালিয়ে সেখান থেকে নাগরিকদের উচ্ছেদ করেছে।
ইসরাইলের রাফাহ আক্রমণের পরিকল্পনাকে নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে- তিনি রাফায় আক্রমণ চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এ আক্রমণের মাধ্যমে ‘হামাস নির্মূল’ হতে পারে।
এদিকে হামাসের সিনিয়র নেতারা বলেছেন যে- ইসরাইলের পক্ষ থেকে এই ধরনের পদক্ষেপ দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার যেকোনো সম্ভাবনাকে শেষ করে দেবে।
এই পটভূমিতে, রাফাহ শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক আরো ঘনিভূত হচ্ছে। আল-জাজিরা বেশ কিছু ফিলিস্তিনিদের সাথে কথা বলেছিল যারা যুদ্ধের কারণে বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়ে রাফাহতে এসে আশ্রয় নিয়েছিল।
‘আর কোথাও যাওয়ার নেই’
উম্মে আল-আবেদ ফায়াদ নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘তিনি এবং তার পরিবার এ পর্যন্ত চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে আলাদা আলাদা এলাকায় থেকেছি। আমরা সর্বশেষ খান ইউনিসে ছিলাম এবং এখন রাফাহতে আছি।’
ইসরাইলি আগ্রাসনের আশঙ্কা নিয়ে তিনি কেমন অনুভব করছেন জানতে চাইলে উম্মে আল-আবেদ ফায়াদ বলেন, তার ‘আর কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই’।
তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘ইসরাইলিরা সর্বত্র রয়েছে। আমরা কোথায় যাবো?’ তিনি উল্লেখ করেন, তার চারপাশের লোকেরা ‘ক্ষুধার্ত ও গৃহহীন’।
এলাকার অন্যদের মতো তিনি বলেন, ‘তারা (ইসরাইলিরা) যতই হুমকি দেয় না কেন, আমরা আর নড়ব না। আল্লাহ চাইলে আমরা বিজয়ী হব। আমরা ধৈর্য ধরব এবং ধৈর্য ধরব।’
আসাদ হাসান গাজা শহর থেকে রাফাহ শহরে বাস্তুচ্যুত আরেক ফিলিস্তিনি। যিনি অসুস্থ। তিনি বলেন, তার একমাত্র ইচ্ছা, ‘আমার বাড়িতে ফিরে যাওয়া এবং আগ্রাসনের অবসান হোক।’
হাসান আল-জাজিরাকে বলেন, ‘যদি তারা রাফাহ আক্রমণের হুমকি দেয়, আমাদের কবর ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই।’
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হয় ৭ অক্টোবর। ওই দিন গাজাভিত্তিক স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেড, দক্ষিণ ইসরাইলে আক্রমণ শুরু করে। এতে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়, পণবন্দী করা হয় ২৪০ জনকে।
সাথে সাথেই উত্তর গাজায় একটি স্থল আক্রমণের মাধ্যমে ইসরাইল এ হামলার প্রতিক্রিয়া জানায়।
ইসরাইলের এ চলমান হামলায় কমপক্ষে ২৮ হাজার ৩৪০ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গত চার মাসের এ হামলায় ৬৭ হাজার ৯৮৪ জন আহত হয়েছে।
গাজার ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন বাসিন্দাদের বেশিরভাগকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে ৬০ শতাংশেরও বেশি অবকাঠামো।
‘গণহত্যা হবে’
উম্মে বদর আবু সালমে নামে এক ফিলিস্তিনি বলেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আদেশের ভিত্তিতে রাফাহ নিরাপদ হবে ভেবে তিনি তার পরিবারের সাথে রাফাতে চলে আসেন।
তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা রাফাতে এসেছি, এখন তারা আমাদের চলে যেতে বলছে।‘
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে গণহত্যা হবে। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। রাফাহ আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। এই যুদ্ধ অবশ্যয় বন্ধ করতে হবে।’
রাফাহ শহরের বাসিন্দা সাংবাদিক আলা সালামেহ যিনি পুরো গাজা জুড়ে যুদ্ধের সংবাদ কভার করছেন তিনি বলেন, ইসরাইলি হুমকি সত্ত্বেও তিনি শহর থেকে সংবাদ সংগ্রহ করতে থাকবেন।
সালামেহ আল-জাজিরাকে বলেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকা জুড়ে অসংখ্য গণহত্যা চালিয়েছে। যদি তারা রাফাহ আক্রমণ করে তবে সেখানেও গণহত্যা চালাবে।
তিনি আরো বলেন, ‘দখলদারিত্ব আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে না। যদি তারা রাফাহ আক্রমণ করে, তাহলে কোনো নিরাপদ জায়গা থাকবে না।’ এ হামলা বন্ধের জন্য বিশ্বব্যাপী চাপ থাকা দরকার বলে জানান তিনি।
সূত্র : আল-জাজিরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।