ব্রয়লার মুরগির দাম আরো কমছে
জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল শনিবারও বাজারভেদে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে বাজারভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে মুরগি আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরামর্শের পাশাপাশি গত বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈঠকের পর উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।
গতকাল রাজধানীর শান্তিনগরবাজার, কাওরান বাজার ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দাম কমার এ তথ্য পাওয়া যায়। তবে খুচরা বড় বাজারগুলোর তুলনায় পাড়া-মহল্লার বাজারগুলোতে দাম তুলনামূলক কম কমেছে। এরমধ্যে কাওরান বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার ২৪০ টাকা ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। যা দুই দিন আগে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লারের পাশাপাশি সোনালি মুরগির দামও কমেছে। প্রতি কেজিতে ২০ টাকা কমে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে ব্রয়লার মুরগির দাম কমার তথ্য জানিয়েছে। অবশ্য সংস্থাটি বলেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারের মুরগি বিক্রেতা নুরনবী বলেন, পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে। ফলে খুচরা বাজারেও দাম কমতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরেই ব্রয়লার মুরগির বাজার অস্থির। লাগামহীনভাবে বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটানো এই ব্রয়লার মুরগির দাম। গত এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ১৬০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় উঠে যায়। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫১ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা রীতিমতো অবিশ্বাস্য! ভোক্তাদের অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণেই ব্রয়লার মুরগির বাজারে এ অস্থিরতা।
পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এ শিল্পের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খাতটি রীতিমতো জিম্মি হয়ে গেছে। তারা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে ক্ষুদ্র খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগির দাম না কমলে আমদানির পরামর্শ দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পোলট্রি শিল্প যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, তাহলে তাদের সুরক্ষা দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে উন্মুক্ত করে দিতে হবে মাংস ও ডিম আমদানি। তিনি বলেন, যদি উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কয়েক মাসের জন্য মাংস ও ডিম আমদানির সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করব। ততদিনে দেশে দাম কমে আসবে।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন ইত্তেফাককে বলেন, গত কিছুদিন ধরেই এই খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অস্থিরতা নিরসনে সরকারকে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব বলেন, সব খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা টিকতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, সারা দেশে ১ লাখ ৫৮ হাজার ১৭৯টি খামারের মধ্যে বর্তমানে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার চালু আছে। এতে উৎপাদন (মুরগির মাংস) হচ্ছে ৪ হাজার ২১৯ টন, যা উৎপাদন সক্ষমতা থেকে ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। তিনি বলেন, পোলট্রি সেক্টরে এমন নাজুক অবস্থা কখনো আসেনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির দাম আরো কমবে বলে আশা করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।