আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত সোমবার প্রকাশ্যে এসেছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা সংস্থার (ডিআরডিও) নতুন ওষুধ ২-ডিজি (২-ডিওক্সি-ডি-গ্লুকোজ)। করোনা রোগীর অক্সিজেন নির্ভরতা কমাতে ও দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে এই ওষুধ। তবে এই ওষুধের ওপর আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দেশটির বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, অ্যাসিডের সমস্যা দূর করার পাউডার বা ওআরএস পাউডার যেমন হয়, এই ওষুধটি ঠিক তেমনই! এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নিলেই হলো! তার পর সেটা পেটে যাওয়ার পর থেকেই দ্রুত শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের। তিন দিনের মাথায় তাঁরা সেরে ওঠছেন বলেও জানিয়েছে ভারত সরকার।
গত সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. হর্ষ বর্ধন ২-ডিজি (২-ডিওক্সি-ডি-গ্লুকোজ) নামের এই ওরাল ড্রাগের প্রথম ব্যাচ সারা দেশে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করেছেন। তবে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনেরাল অব ইন্ডিয়া ১ মে থেকে সঙ্কটজনক রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিল।
কারা তৈরি করেছে এই ওষুধ?
ভারতের রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসের পক্ষ থেকে এই ওরাল ড্রাগ তৈরি করা হয়েছে। এটি ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের অধীন একটি ল্যাবরেটরি। এ ছাড়াও এই ওষুধ তৈরিতে হাত লাগিয়েছে হায়দরাবাদের ড. রেড্ডিজ ল্যাবরেটরিজ।
কিভাবে এই ওষুধ কাজ করে?
করোনার প্রতিরোধে অনেক দিন ধরেই এমন কোনো ওষুধ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছিল যা সরাসরি ফুসফুস তথা আক্রান্ত কোষগুলোর ওপরে কাজ করে ভাইরাসের ধ্বংসলীলা প্রতিহত করতে পারবে। এই ওষুধ বস্তুত সেই লক্ষ্যেই তৈরি করা হয়েছে। এই ওষুধের মলিকিউলগুলো শরীরে ভিতরে যাওয়ার পরে সরাসরি ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত কোষগুলোর ওপরে কাজ করে, তাদের বৃদ্ধি প্রতিহত করে এবং পুরনো আক্রান্ত কোষগুলোকেও শক্তি সঞ্চয়ে বাধা দেয়। ফলে সামগ্রিকভাবেই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কোষগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
কেমন ট্রায়াল হয়েছে এই ওরাল ড্রাগের?
এখনো পর্যন্ত তিনটি পর্যায়ে ট্রায়াল হয়েছে ২-ডিজির। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। তবে ডিআরডিও-র এই নয়া ওষুধ তৈরির প্রকল্প কর্মকর্তা বিজ্ঞানী সুধীর চন্দানা জানিয়েছেন, ‘মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থ কভিড রোগীকে এই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেকেই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। তাদের দেহে অক্সিজেনের চাহিদাও কমাতে সাহায্য করেছে এই ওষুধ। শুধু তাই নয়, কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।’
ট্রায়ালে দেখা গেছে, যারা এই ওষুধ নিয়েছেন, তারা অপেক্ষাকৃত দ্রুত করোনা নেগেটিভ হয়েছেন। ফেজ-২-তে মোট ১১০ জন করোনা রোগীর উপর ট্রায়াল করা হয়। তৃতীয় ফেজে ২২০ জনের ওপর ট্রায়াল চালানো হয়। দেশের মোট ২৭টি কভিড হাসপাতালে এই ট্রায়াল করা হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, দুই দিনের মাথাতেই তাদের শ্বাসকষ্ট কমে গেছে এবং তিন দিনের মাথায় প্রায় সুস্থ হয়ে ওঠছে রোগীরা। তাঁদের অক্সিজেনের ওপরে নির্ভরশীলতা ক্রমশ কমেছে ৪২ থেকে ৩১ শতাংশ। ৬৫ বছরের উপরে বয়স যাঁদের, সেই সব রোগীর শরীরেও একইভাবে কাজ করেছে এই ওষুধ।
এই ওষুধ ভালো কাজ করলেও নানা প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আরো প্রমাণ প্রয়োজন। মান্থলি ইন্ডেক্স অব মেডিক্যাল সাপ্লাইজের এডিটর সিএম গুলহাটির বলেন, ‘আমি কখনই ওষুধটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। তবে কোনো ঘোষণার সঙ্গে প্রমাণও প্রকাশ করা উচিত। এক্ষেত্রে কোনো মিথ্যা আশা জাগানো ঠিক হবে না। তাছাড়া ট্রায়াল করে বেশিরভাগ তথ্য প্রকাশ না করাও মোটেও বিজ্ঞানসম্মত নয়। এটি বড় মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশ হওয়া উচিত যাতে এর ক্রস চেক করা সম্ভব।’ তাঁর মতে, ‘বড্ড তাড়াহুড়ো করে আমরা ওষুধের অ্যাপ্রুভালের দিকে ঝুঁকছি।’
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, নিউজ এইটিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।