মো. শহীদুল ইসলাম, পিপিএম: ‘Survival of the fittest’ মানব সভ্যতার ইতিহাসের সঙ্গে ডারউইনের কালজয়ী এ উক্তির এক অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র রয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী নানান প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে মানব সভ্যতা আজকের এই অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা বা সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ যেটাই বলি না কেনো, যুগে যুগে মানুষের উপর বয়ে গেছে নানা রকমের দুর্যোগ আর মহামারি। এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকা মানুষ পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত হয়ত নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়ে যাবে- পৃথিবীর কাছে।
প্রযুক্তিগত চূড়ান্ত উৎকর্ষতা ও সমৃদ্ধির সময়ে পৃথিবী পতিত হয়েছে ভয়ানক দুঃসময়ে, দুঃসময় দেশেরও। করোনাভাইরাস নামক এক অপ্রতিরোধ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে গোটাবিশ্ব এক অসম যুদ্ধে লিপ্ত। যুদ্ধে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও পারমানবিক শক্তিধর দেশগুলো যখন মুখ থুবড়ে পড়েছে, তখন আমাদের দেশ নিয়ে শঙ্কা স্বাভাবিকভাবেই বেশি। একদিকে যেমন ব্যাপক ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র, তেমনি তার স্বাস্থ্য সুবিধা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা দুই-ই নাজুক। আমাদের দেশে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি।
দেশের যে শ্রেণি-পেশার মানুষগুলো এই সংগ্রামে নিজের জীবনকে বাজী রেখে দেশ তথা জাতিকে রক্ষার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন তাদের অবদানের কথা জাতি যুগ যুগ ধরে স্মরণ রাখবে। ডাক্তার, পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, ব্যাংকার, আনসারসহ সরাসরি এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে, মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। জাতি চিরকাল তাঁদেরকে বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
করোনাকালের শুরু থেকে সারা দেশেই পুলিশের সামাজিক দায়বদ্ধতা বা মানবিকতার টুকরো টুকরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ব্যবস্থাপনা ও জননিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায় মানুষদের খাদ্যসাহায্যেও হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। কোয়ারেন্টােইনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারি করা, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া, মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফন বা সৎকারে সহায়তার কাজও করেছে পুলিশ।
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছে অনেক পুলিশ সদস্য; মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করেছে তারা।সব মিলিয়ে করোনা মহামারির সময়ে পুলিশের এক নতুন মানবিক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩২ জনের দেহে করোনভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন গেছেন ৯ হাজার ৫২১ জন মানুষ। পুলিশ বাহিনীর সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন ২১ হাজারেরও বেশি। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৮৯ জন।
অদৃশ্য এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ‘সম্মুখসারীর যোদ্ধা’ হিসেবে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে বাংলাদেশ পুলিশের সব বীরত্বগাঁথা কর্মকাণ্ড বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিই আমি। বইটির নামকরণ করা হয় ‘করোনাকালীন মানবিক পুলিশ’।
বইটি সাজাতে গিয়ে কয়েকটি পর্বের বিকাশ ও প্রকাশ ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনার আশ্রয়ে সরল পাঠের মতো উপস্থাপনা করা হয়েছে। তবে, বইয়ের আকার ও আকৃতির কারণে সব ঘটনা সমানভাবে উপস্থাপন করাও সম্ভব হয়নি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে এসেছে যুগে যুগে মহামারি : প্রেক্ষিত কোভিড-১৯, বৈশ্বিক করোনা মহামারি : মানুষের নিষ্ঠুরতা আর অমানবিকতার আখ্যান, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের নির্দেশনা, দুর্যোগ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার পুলিশের অবদান, সর্বকালের সেরা ও মানবিক পুলিশের তকমা, সর্বস্তরের মানুষের মানবিক উদ্যোগ, বৈশ্বিক মহামারিতে সামাজিক অপরাধে ভিন্ন মাত্রা, মহামারি ঠেকাতে সময়োপযোগী পুলিশিং কার্যক্রম, ঘরে বসেই করোনা যুদ্ধ, করোনা আমাদের যা শিখিয়ে গেল, করোনা মোকাবেলায় সরকারের সার্বজনীন উদ্যোগ, করোনা সময়ের কিছু স্মৃতিচারণ, করোনা-জয়ী পুলিশ সদস্যসহ সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে পুলিশের প্রশংসায় সর্বস্তরের গুণীজন। এর প্রতিটি পর্বকে ছোটো ছোটো নাম উপনামে বিভক্ত করা হয়েছে।
বৈশ্বিক করোনা মাহমারিতে মানবিকতার দৃষ্টান্ত যেমন উদাহরণ হয়ে থাকবে তেমনিভাবে অমানবিকতার দৃষ্টান্তও আমাদের বিবেককে অবাক করেছে! এই মানবিকতা ও অমানবিকতা একটি প্রমাণপত্র ছাপা অক্ষরে তুলে রাখার জন্যে একটি দুঃসাহসিক উদ্যোগ আমাকে ‘করোনাকালীন মানবিক পুলিশ’ নামক প্রকাশনার লিখা ও প্রকাশের কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। দেশের ক্লান্তিলগ্নের এই প্রমাণপত্রটি সর্বসাধারণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোনো উপকারে এলে নিজেকে সার্থক ভাবব।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রকাশ করার জন্যে প্রকাশনাটিতে কিছু ভুলত্রুটি থাকা অস্বাভাবিক নয়। এরপরও তথ্য-উপাত্তকে গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে প্রকাশনাটিকে সাধুবাদ জানালে পরবর্তী কাজে উৎসাহবোধ করব- ইনশাআল্লাহ।
ভুল-ত্রুটি থাকলে পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করে প্রকাশ করার আশ্বাস দিচ্ছি।
(লেখক বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহা-পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে বর্তমানে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে দায়িত্ব পালন করছেন)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।