জুমবাংলা ডেস্ক : করোনাকালে নাকাল বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এরই মধ্যে আমাদের দেশে শুরু হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম। ইতোমধ্যেই অনেক ডেঙ্গু রোগীরা হাসপাতাল গুলোতে ভিড় করছে। কারও কারও একই সাথে করোনা ও ডেঙ্গু পাওয়া যাচ্ছে। জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি, শরীর ব্যথা এগুলোর সবই করোনা বা ডেঙ্গুতেও থাকতে পারে। তাই এদের সবাইকেই করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর জন্যেও ডাক্তাররা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
কেন এখন ডেঙ্গু?
এই শতাব্দির শুরু থেকেই আমাদের দেশে প্রতি বছর শীতের পর পরই যখন বৃষ্টি হয়, বেড়ে যায় মশার উপদ্রব। বেড়ে যায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু।
তাই এই করোনাকালে থেমে নেই বৃষ্টি, থেমে নেই মশার প্রজনন। ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ খুব বেশী। তবে সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এযাবতকালে গত বছরই সবচেয়ে বেশী ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছে। মারাও গিয়েছিল বেশী।
কোন মশা ডেঙ্গু ছড়ায়?
ঢাকাসহ সারা দেশেই বছরব্যপী মশার উপদ্রব। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ সারা বছর থাকে না। কারণ ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য দায়ী এডিস মশা জন্মায় পরিস্কার পানিতে। আর এই পরিস্কার পানি পাওয়া যায় বৃষ্টির পর পরই। বৃষ্টির পানি কোন স্থানে জমে থাকলে ওখানটাতেই ডিম পাড়ে এই এডিস মশা।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কি?
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। শুধু উত্তম বললেও কম বলা হয়। এটাই বাঁচার ভাল উপায়। করোনার এই নাকাল অবস্থায় কারো ডেঙ্গু হলে অবস্থাটা কি হতে পারে এটা যার হবে সেই বুঝতে পারবে। তবে যার হয়নি সেও চিন্তা করলে মাথা ঠিক থাকার কথা না।
তাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার প্রজনন বন্ধ করা আর মশা নির্মুলের কোন বিকল্প নাই। পানি জমতে পারে এমন কোন অবস্থাই যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। সকল প্রকারের ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার, ভাঙ্গা বোতল, পরিত্যক্ত ফুলের টব ইত্যাদি ইত্যাদি সবই সরিয়ে ফেলতে হবে নিজ উদ্যোগেই। সরকারের একার পক্ষে ১৭ কোটি মানুষের ভাঙ্গা বোতল, গ্লাস, ডাবের খোসা, বালতি, টায়ার খুঁজে বের করা বা সরিয়ে ফেলা সম্ভব না। বাঁচতে হলে যার যার নিজ উদ্যোগেও এগুলোতে অংশগ্রহন করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার বাড়ির পাশের মশা
আপনাকেই আক্রমণ করবে।
এই মশাগুলো বেশী আক্রমন করে দিনের বেলা, বিশেষ করে দিনের শুরুতে আবার রাতের শুরুতে। তাই এই সময়টাতে দরজা জানালা আটকে রাখতে হবে। এই সময়ে মশা তাড়ানোর বা মেরে ফেলার বিভন্ন রকমের পদ্ধতিও আমরা ব্যবহার করতে পারি। ব্যবহার করতে পারি মশারি, ফুল হাতা জামা, বড় পাজামা ইত্যাদি। কেউ কেউ শরীরের উন্মুক্ত জায়গাগুলিতে মশকিটো রিপিলেন্ট ব্যবহার করেন যাতে মশা শরীরে না বসে। কাপড়ের উপরে দিতে পারবেন পারমিথ্রিন স্প্রে। সানস্ক্রিণ ব্যবহার করতে চাইলে তা অবশ্যই রিপিলেন্ট ব্যবহারের ২০ মিনিট আগে দিবেন।
ডেঙ্গু কি বার বার হতে পারে?
এযাবত ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ টি স্ট্রেইন পাওয়া গিয়েছে। তাই একবার একটি স্ট্রেইন দিয়ে ডেঙ্গু হলে সেই স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী হয়। অর্থাৎ ওটা দিয়ে দ্বিতীয়বার আর ডেঙ্গু হয় না। তবে বাকি ৩ টা রয়ে গেল । ওগুলো দিয়ে একে একে আরও তিনবার, অর্থাৎ মোট ৪বার পর্যন্ত ডেঙ্গু হতে পারে। আর প্রথমবারের তুলনায় পরের বার গুলোতে এর তীব্রতা অনেক বেশী হয়, জটিলতাও বেশী হয়। তাই সাবধান, যার ১বার হয়েছে আবার যেন না হতে পারে।
ডেঙ্গু সন্দেহ হলে কখন কোথায় যাবেনঃ
মশা কামড়ানোর ৪-৭ দিনের মধ্যেই জ্বর হয়। জ্বরের সাথে মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, বমি, পেট ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। এই করোনাকালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্যেও যেতে হবে হাসপাতালগুলোর ফ্লু কর্ণারে। তারপর ডাক্তার ঠিক করবে তার কি রোগ লক্ষণ বা কি পরীক্ষা করে তা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কি পরীক্ষা করবেন?
যেহেতু এখন করোনাকাল চলছে। এবং এটাই মানুষের মধ্যে বেশী ভয় তৈরী করছে। তাই স্বভাবতই কিছু লক্ষণ মিলে যাওয়াতে ডেঙ্গুর পাশাপাশি করোনার পরীক্ষাও করতে হতে পারে। করোনা পরীক্ষা করার জন্য অনেক সতর্কতা ও নিয়ম মানতে হচ্ছে। কিন্তু শুধু ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য এনএইচ১, ডেঙ্গু এন্টিবডি ও সিবিসি-ই যথেষ্ট। আর জটিলতা বা কোথায় কোথায় এটা কি ক্ষতি করেছে তা দেখার জন্য বুকের এক্সরে, লিভার, কিডনি, ইলেক্ট্রোলাইট ইত্যাদি কিছু পরীক্ষা লাগতে পারে। আগেই বলেছি এদুটো রোগ আবার একসাথেও করো হতে পারে। তখন পরীক্ষা কিছু ভিন্ন হতে পারে।
কখন কি চিকিৎসা করাবেন?
করোনার মতই এটিও একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। এরও সুনির্দিষ্ট কোন ওষুধ বা চিকিৎসা নেই। লক্ষণ অনুসারেই চিকিৎসা দিতে হয়। তাই সামান্য উপসর্গে ডাক্তারের পরামর্শে বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব। তবে কারও যদি লক্ষণগুলি তীব্র হয় তখন হাসপাতালেই যেতে হবে। বিশেষ করে বমি, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, প্রস্রাব কমে যাওয়া, খিঁচুনি, নিশ্তেজ হয়ে যাওয়া, বোধ শক্তি লোপ পেতে থাকলে অবশ্যই হাসপালে চিকিৎসা নিতে হবে। মারাত্মক ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা ডেঙ্গু শক সিন্ড্রমের রোগীদের চিকিৎসা হাসপাতালেই হয়। ৫-৭ দিন জ্বর থাকার পর তা কমে যাওয়ার পর এই তীব্র উপসর্গগুলি আসতে শুরু করতে পারে। রক্তচাম কমে যেতে পারে, শুরু হতে পারে রক্তপাত। নাক দিয়ে, দাঁত দিয়ে, বমির সাথে, পায়খানার সাথে রক্ত আসতে পারে। এসময়ে রোগীদের শিরাপথে ফ্লুইড, রক্ত, প্লাটেলেট, প্লাজমা ইত্যাদি দিতে হতে পারে। তাই এসময়ে জ্বর হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডা. জহুরুল হক সাগর
ইমেইল: [email protected]
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel