জুমবাংলা ডেস্ক : করোনা আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) যশোরের মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গিয়েছিলেন প্রফুল্ল সরকার তপন। করোনায় মৃত্যু হওয়ায় হাসপাতালেই প্রায় ঘণ্টা তিনেক তার মরদেহ পড়ে থাকে। শেষ পর্যন্ত তাকওয়া ফাউন্ডেশনের পাঁচ মুসলিম যুবক গভীর রাতে শ্মশানে তার সৎকার করেন।
প্রফুল্ল সরকার ওরফে তপন মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের মৃত রতন সরকারের ছেলে। তিনি পেশায় কর্মকার ছিলেন। উপজেলার গোপালপুর বাজারে ছিল তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার তার অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে মণিরামপুর হাসপাতালে বিকেলে ভর্তি করেন। ভর্তির পর সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।
তাকওয়া ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য আশরাফুল আনোয়ার ইয়াসীন জানান, মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনায় আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়। কিন্তু তার সন্তান কিংবা নিকটাত্মীয়রা কেউ মরদেহ গ্রামে নিয়ে যায়নি। প্রায় ঘণ্টা তিনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বারান্দায় পড়ে ছিল প্রফুল্ল সরকারের মরদেহ। তাদেরকে ঘটনাটি উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী অবহিত করলে তিনি ফাউন্ডেশনের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যান। গভীর রাতে হাসপাতালে গিয়ে দেখেন আব্দুর রহিম নামের এক ভ্যানওয়ালার ভ্যানের উপর পড়ে রয়েছে তপন সরকারের মরদেহ। এরপর তারা নিজেরাই ভ্যান চালিয়ে পৌর শহরের তাহেরপুর মহাশ্মশানে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ঘটে আর এক বিপত্তি। শ্মশানের ঘোষাই (শ্মশানের দায়িত্বে নিয়োজিত) তপন সরকারের মরদেহ সেখানে সৎকার করতে আপত্তি জানান। এরপর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড (মনিরামপুর) কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী ও তার এক সহযোগী বিশ্বজিৎ সেখানে গিয়ে ঘোষাইকে কোনোরকমে রাড়ি করান।
এরপর সনাতন ধর্মীয় রীতি মেনে গোসল করিয়ে মরদেহ চিতায় ওঠান তারা। মরদেহ গোসলের জন্য শ্মশানে মোটরের ব্যবস্থা থাকলেও সেখান থেকে পানি নিতে দেননি দায়িত্বরত ঘোষাই। পরে নদী থেকে বালতি ভরে পানি উঠিয়ে গোসল করান মুসলিম পাঁচ যুবক। এ সময় শ্মশানে চিকিৎসক মোসাব্বিরুল ইসলাম রিফাত, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টু, সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ সোহান উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম জানান, মৃত ব্যক্তির সন্তানসহ স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও নিকটাত্মীয়রা লাশ নিয়ে যাননি। তিনি খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের খবর দেন। তারাই ওই লাশের সৎকার করেন।
কাউন্সিলর বাবুলাল চৌধুরী জানান, শ্মশানে করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির মরদেহ আনা হয়। কিন্তু আগুন দেয়ার কোনো লোক পাওয়া যাচ্ছে না। এমন খবর পেয়ে তিনি শ্মশানে ছুটে যান। রাত প্রায় ৪টা পর্যন্ত ওই লাশের সৎকারের কাজ চলে। তিনি আরও জানান, মৃত তপন সরকারের দুই ছেলে শ্মশান থেকে দূরে অবস্থান করেছেন। বাবার মরদেহ ছুঁয়েও দেখেননি তারা।
তপন সরকারের বড় ছেলে বিপ্লব সরকার বলেন, করোনায় বাবার মৃত্যুর খবর গ্রামবাসী জানতে পেরে সৎকারের জন্য নিজেদের শ্মশানে আনতে আপত্তি তোলে। এ কারণে বাবার মরদেহ বাড়িতে না এনে তাহেরপুর শ্মশানে সৎকার করেছে তাকওয়া সদস্যরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।