জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের মামলা পরিচালনার জন্য দায়িত্বরত আইন কর্মকর্তা ২২৫ জন।
এঁদের মধ্যে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মাজু মিয়া শনিবার তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বলা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা লকডাউন। তাহলে লোক আসছে কীভাবে। এরা সারা বাংলায় ছড়িয়ে দেবে। যেমন আজ হবিগঞ্জে ছড়াল।’
একইদিন মাগুরার মোহাম্মদপুরের স্কুল শিক্ষক আনোয়ার হোসেন শাহীন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, মাননীয় এমপি মহোদয়, নারায়ণগঞ্জ থেকে মধুমতি নদীর শেখ হাসিনা সেতু হয়ে এ এলাকায় মানুষ আসছে। দয়া করে সেতুটি বন্ধ করুন।’ এই স্কুল শিক্ষকের ফেসবুকে লেখা তথ্য অনুযায়ী ওই উপজেলায় বেশ কয়েকজন লোক গেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে।
কেবল মাগুরা বা হবিগঞ্জে নয়, নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে মানুষ। গত ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডউন ঘোষণা করা হলেও এ জেলা থেকে পালিয়ে যাচ্ছে লোকজন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ওইদিন যে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) শনাক্ত হয়, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জেরই দুইজন। কেবল তাই নয়, এ পর্যন্ত সারা দেশে ৪৮২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জেরই ৮৫ জন। আর সারা দেশে যে ৩০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ১০ জনই নারায়ণগঞ্জের। এ পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ একটি আতঙ্কের জেলায় পরিণত হয়েছে। ফলে এই জেলা থেকে যারাই নিজ নিজ গ্রামে ফিরছেন, তাদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে সারা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন, যা বিভিন্ন ব্যক্তির ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, লকডাউন অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ থেকে কীভাবে অন্য জেলায় লোকজন ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী আজ রবিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে গাড়ি দিয়ে বা মূল রাস্তা দিয়ে দলবেঁধে শহরের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ যদি কৌশল করে শহরের বাইরে চলে যায় সেটি সচেতনতার অভাব। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার হিড়িকে অনেকে নারায়ণগঞ্জে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। তারা ঢুকতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছেন। তাদের সংখ্যাও কম না। এদের দেখে হয়তো সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত এ জেলা থেকে হবিগঞ্জে গেছেন ১৬ জন। এদের মধ্যে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে শরীয়তপুরে যাওয়া ১৫৫ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার রাণীখার গ্রামে মৃত্যুবরণকারী নারী নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া।
নারায়ণগঞ্জ থেকে লালমনিরহাটে যাওয়া এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করার তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার সিভিল সার্জন।
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে যাওয়া দুই শ্রমিককে কোয়ারেন্টিনে রেখেছে প্রশাসন। এছাড়া চাঁদপুর সদর উপজেলার কামরাঙ্গা গ্রামে গত পহেলা এপিল নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া এক ব্যক্তি গতকাল শনিবার মারা গেছেন। করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় ওই পরিবারের তিনজনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে তা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আজ রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক নারায়ণগঞ্জ থেকে তার জেলায় লোক যাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন।
নেত্রকোনা সদরের সাতপাই এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম কালের বলেন, নারায়ণঞ্জ থেকে অনেক মানুষ নেত্রকোনায় ঢুকেছে। এ নিয়ে শহরবাসী উদ্বিগ্ন। এরইমধ্যে নেত্রকোনায় একজন নার্সসহ দুইজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দুইজনের একজন গাজীপুর ও অন্যজন কুমিল্লা অর্থাৎ নেত্রকোনার বাইরে থেকে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন।
একই জেলার কলমাকান্দা উপজেলার বরদল গ্রামের এরশাদুল ইসলাম রবিবার দুপুরে বলেন, ছুটির ঘোষণার পরপরই গ্রামে এসে কয়েকদিন ভালোই ছিলাম। এখন ভালো নেই।
এরশাদুল জানান, তাঁর এলাকার অনেকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে। গত বুধ-বৃহস্পতিবার থেকে নারায়ণগঞ্জের শ্রমিকরা এলাকায় যাওয়া শুরু করেছেন। এ কারণে উদ্বেগ কাজ করছে তাঁদের মধ্যে। সূত্র : কালেরকণ্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।