জুমবাংলা ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে ঘুম হারাম করে দেওয়া এক ভাইরাসের নাম করোনাভাইরাস। চারদিকে শুধু হতাশার প্রতিচ্ছবি। মানুষের মাঝে এর ভয় এতটাই প্রকট যে, তারা বিশ্বাস করেন করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানেই মৃত্যু অবধারিত।
এখনো পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজারের মতো করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১ লাখের বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর মারা গেছেন ১৫ হাজার ৪৩৯ জন। যারা এ মহামারি থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাদেরই একজন হলেন চীনের হুবেই প্রদেশের টাইগার ইয়ে।
তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি হঠাৎ আমার সারা শরীরে ব্যথা শুরু হয়। আমি মনে করেছিলাম, জ্বর হয়ে আসছে হয়তো। কিন্তু সামনে যে কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে, সেটা উপলব্ধি করতে পারিনি। তাছাড়া, মনের ভেতর অন্যরকম একটা ভয়ও ছিল। কারণ, আমি যে ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে জাপানিজ শিখতে যেতাম, সেটার মাত্র ৫ কিলোমিটার পরেই উহানের সেই সামুদ্রিক মাছের বাজার অবস্থিত (যেখান থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হয়)।
মাংসপেশির ব্যথার কারণে আমি ওষুধ গ্রহণ করি। কারণ, আমি ভেবেছিলাম আমার হয়তো ঠান্ডা লেগেছে। এখন আমি বুঝতে পারি যে, আমি কতটা ভুল ছিলাম। কিন্তু আমার মাথায় এখনো আসছে না যে, আমি কী করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলাম?
আমি সবসময় আমার স্কুলের পাশের হংকং স্টাইল রেস্টুরেন্টে খেতে যেতাম। তাছাড়া খুব বেশি একটা বাইরে বের হতাম না। কারণ, বাইরে অনেক ঠাণ্ডা ছিল। যার কারণে ক্লাস শেষে বাড়ি চলে আসতাম।
যখন সেমিস্টার ব্রেক চলছিল, তখনও সারা দিন বাবা-মায়ের সাথে বাড়িতে থাকতাম। কিছুদিন থেকেই মুখে মাক্স পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম। কারণ, তখন আমার আশেপাশের সবাই মাস্ক পড়ছিল।
২১ জানুয়ারির মধ্যে আমার পুরো শরীর প্রচণ্ড ব্যথা করছিল। তাই আমি আমার বাবাকে খবর দিলাম। বাবা বুঝতে পারলেন যে, কোনো বড় ধরনের কিছু হয়েছে এজন্য তিনি আমাকে তৎক্ষণাৎ বাড়িতে নিয়ে আসলেন। ওই দিন বিকেলে আমার হালকা জ্বর ছিল, কিন্তু তারপরেও আমার মা বললেন, যদি রাতের মধ্যে জ্বর না কমে, তাহলে আমরা হাসপাতালে যাব।
রাত ১১টার দিকেও যখন জ্বর কমার কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছিল না, তখন আমাকে টুনবীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। যখন হাসপাতালে পৌঁছালাম, তখন থেকে পুরো হাসপাতালটি রোগীতে ভর্তি। তবে, এত মানুষের ভিড় দেখে আমি অবাক কিংবা ভয় পাইনি। কারণ, এটা উহানের সেরা হাসপাতালের মধ্যে একটা, আর এখানে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম উহান পুলমনারি হাসপাতালে যেতে। যখন আমি সেখানে পৌঁছালাম, তখন সেখানে তেমন কোনো রোগী ছিল না। এখানে আমি রক্ত, লিভার, সিটিস্ক্যানের পরীক্ষা করলাম।
যখন সিটি স্ক্যানের ফলাফল বের হলো, দেখা যায় যে আমার দুই দিকে ফুসফুসের নিচের দিকে অস্বাভাবিক কিছু দাগ পড়েছে। এই জন্য হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যখন পুরো উহানকে লকডাউন করে ফেলা হয়, ঠিক সেই সময় বাবা আমাকে ঘরের মধ্যে কোরেনটাইন করে রেখেছিলেন। তাছাড়া আমরা সবাই বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই মুহূর্তে আমাদের খাদ্য মজুদ করা উচিৎ, তাই এত বেশি নুডুলস কিনে আনি যে, সেগুলো এখনো শেষ হয়নি। সুপারমার্কেটে জিনিসপাতি যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। কিন্তু জীবাণু মুক্ত কোনো কিছু কোথাও খুঁজে পেলাম না।
আমার বাবা ওষুধ কোম্পানির কর্মচারী এবং আমার মা মেডিকেল স্কুলে কাজ করতেন। এই কারণে তারা আমাকে যথাযথ সহযোগিতা করতে পেরেছিলেন। ২২ জানুয়ারিতে আমি নিজেকে পরিবারের অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে শুরু করি। আমার দাদী মা আমার জন্য খাবার রান্না করে আনত এবং তিনি খাবার আনার সময় মাস্ক পরে আসতেন।
২৫ জানুয়ারি আমার একটি চেকআপ ছিল। এই সময়ে আমার প্রচণ্ড কাশি শুরু হয় এবং কাশির সাথে হলুদ রঙের কফ বের হচ্ছিল। চেকআপের ফলাফল ছিল ভয়াবহ, সেই ইনফেকশনটি আমার সারা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সময় ডাক্তার আমাকে বলল, আমি হয়তোবা করোনা আক্রান্ত, কিন্তু শুধু বিশেষজ্ঞ কমিটি ঠিক করবে আমার করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার দরকার আছে কিনা।
পরের দিন আমার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। ১০২ ডিগ্রি জ্বর তার সাথে প্রচণ্ড কাশি নিয়ে মনে হচ্ছিল যেন নরকের মধ্যে আছি। এই সময়গুলোতে বাসায় বসে নিজের পছন্দের অ্যানিমেশন মুভিগুলো দেখতাম, আর ভাবতাম আমি হয়তো আর কখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারব না। আমার হয়তো এ জীবনকে বিদায় বলে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু অ্যানিমেশন মুভিতে দেখতাম যে, নায়িকা প্রথম অংশে বিপদে পড়েন, কিন্তু শেষের দিকে হেসে সে কিন্তু আবার ঠিকই সফল হয়ে যায়।
যাইহোক, ২৪ তারিখে আমার আরো একটি চেকআপ ছিল। তবে, সেখানে আমার অবস্থার উন্নতি দেখা যাচ্ছিল এবং এর সাথে আমি করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য অনুমতি পেয়ে যাই।
ঘটনাক্রমে ২৯ জানুয়ারি আমার বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। চেকআপের পর তার ফুসফুসেও আমার মতো কিছু দাগ দেখা যাচ্ছিল। ঠিক একই দিন আমার দাদী মায়েরও জ্বর আসে।
ওই দিকে আমার করোনাভাইরাসের টেস্টের ফলাফল আসে এবং আমি করোনাভাইরাস এপজিটিভ ছিলাম। হাসপাতাল থেকে আমাকে পাঁচ দিনের জন্য বিনামূল্যে মেডিসিন দেওয়া হয়। যেহেতু আমার অবস্থা উন্নতির পর্যায়ে ছিল, আর হাসপাতালে প্রচুর রোগী ছিল, তাই আমাকে বলা হলো বাসায় গিয়ে নিজেকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে।
২১ ফেব্রুয়ারি করোনা টেস্টের পর আমার ভাইয়ের ভাইরাস ধরা পড়ে, যদিও আমার দাদি মার চার দিন ধরে জ্বর ছিল, তবে সুস্থ হয়ে ওঠার কারণে আর পরীক্ষা করাননি।
কিন্তু দাদি মা ও মা নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করছিল। কিছুদিন পর আমার ভাই ও আরোগ্য লাভ করল কোভিড-১৯ থেকে। ৪ ফেব্রুয়ারি সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট অনুযায়ী আমার অনেক বেশি উন্নতি দেখা যাচ্ছিল। ফলে, আমাকে আবার করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করানো হয়।
পরের দিন খবর আসে যে, আমি করোনাভাইরাসে নেগেটিভ। তার পরেও আরো বেশি শিওর হতে আমাকে ৭ তারিখ আবার ডাক্তারের কাছে গিয়ে আরো একটি টেস্ট দিতে হয় এবং সেখানেও করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে।
লেখক: শিক্ষার্থী, পোর্টসিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।