আগের পাঁচ দিনের তুলনায় গত দুই দিনে দেশে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও গড় হিসাবে বিশ্বে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির ২০টি দেশের তালিকায়ই রয়েছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আগামীকাল দেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার ১০০ দিন পার হবে। বেশির ভাগ দেশই ১০০ দিনের বলয় পার করতে করতেই আক্রান্তের চূড়ায় উঠেছে বা চূড়া থেকে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এই হিসাবের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে মৃত্যুহারের ওপর।
পরিস্থিতির ওপর নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দিনে দিনে শনাক্ত বাড়তে থাকলেও গত ২৫ মে থেকে দেখছি, পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২০-২১ শতাংশেই ঘোরাফেরা করছে; বাড়ছেও না, কমছেও না। যদি এটি সঠিক হয়ে থাকে, তবে আমাদের এখন এই হার নিচের দিকে নামানোর জন্য আরো বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ জন্য লকডাউন পদ্ধতিটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে শুধু মানুষজনকে আটকে রাখাই নয়, রোগতাত্ত্বিক কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণগুলোও সমানতালে চালাতে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা ২৫ মার্চ থেকে পরবর্তী কয়েক দিন যেভাবে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলাম তার সুফল হিসেবে ঈদের সময়ের আগে পর্যন্ত সংক্রমণে ধীরগতি ছিল; যদিও পরীক্ষা কম হয়েছে বলে প্রশ্ন আছে। তার পরও বলব, ঈদের সময় ও এর পরে যেভাবে সব কিছু খুলে দেওয়া হয়, তার প্রভাবে এখন ঊর্ধ্বমুখী গতি দেখতে পাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আবার বলাই যায়, ওপরের দিকে উঠলেও আমাদের এখানে গতি ধীর আছে। এটা নিয়ন্ত্রণে এখনো সহজ পথ আছে, সেগুলো ধরে এগোলে এখানে চূড়া খুব উঁচু না-ও হতে পারে।’
এদিকে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় সর্বশেষ পাঁচ দিনে ঊর্ধ্বমুখী শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইতালি, ভারত, ফ্রান্সসহ সাতটি দেশ গতকাল রবিবার পর্যন্ত ১৩০ থেকে ১৪০ দিনে পৌঁছে গেছে প্রথম শনাক্ত হওয়ার দিন থেকে। দুটি দেশ আছে ১১০ থেকে ১২০ দিনে, সাতটি দেশ আছে ১০০ থেকে ১১০ দিনে আর বাংলাদেশসহ চারটি দেশ রয়েছে ৯০ থেকে ১০০ দিনের ঘরে। এই দেশগুলোর মধ্যে ৫০ হাজারের নিচে সংক্রমণ চারটি দেশে, ৫০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে বাংলাদেশসহ চারটি দেশ এবং বাকি ১২টি দেশে সংক্রমণ এক লাখের ওপরে। অন্যদিকে সংক্রমণের হিসাবে ২০টি ঊর্ধ্বমুখী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ নম্বরে, আর একই দেশগুলোর মধ্যে মৃত্যুহারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭তম (সর্বোচ্চ ফ্রান্সে ১৫.২০ এবং সর্বনিম্ন সৌদি আরবে ০.৭৪, বাংলাদেশে ১.৩৪)। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ দেশই মার্চ, এপ্রিল ও মে থেকে চূড়ার দিকে উঠতে শুরু করে। বাংলাদেশও মের শেষ দিকে চূড়ার পথে উঠতে শুরু করে, যা এখন মাঝপথে আছে বলে দেশের একাধিক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। যদিও কেউ কেউ আবার বলেন, বাংলাদেশে ঊর্ধ্বমুখী গতি অন্য অনেক দেশের মতোই দ্রুতগতির হবে না, বরং ধীরে ধীরে ওপরে উঠবে আবার ধীরে ধীরে নামবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বব্যাপীই আক্রান্তের চেয়ে মৃতের সংখ্যা নিয়েই মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেশি। আবার মৃত্যু কতটা ঠেকানো যায় তা নিয়ে চলে দেশে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বেশির ভাগ পদক্ষেপ। সেদিক থেকে বাংলাদেশ আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুহারে ভালো অবস্থানে থাকার ভেতর দিয়েই আক্রান্তে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। ফলে যতই চূড়ায় উঠুক মৃত্যুহার যদি তুলনামূলক কম থাকে, সেটাও এক ধরনের স্বস্তিদায়ক হবে। অন্যদিকে শনাক্ত যত বেশি হয়ে রেখাচিত্র চূড়ার দিকে উঠবে ততই তা আবার নিচের দিকে নামার পথ দ্রুত তৈরি করবে। যদিও করোনাভাইরাসের গতি-প্রকৃতি কোনো কোনো দেশে ব্যতিক্রমী আচরণ করছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি চূড়া থেকে সংক্রমণ এমনি এমনি নিচে নামবে না বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম যত বেশি কার্যকর করা যাবে তত নিচে নামার পথ দ্রুত মিলবে বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘দেশে সংক্রমণ এখন ওপরে উঠছে; ওপর থেকে অবশ্যই আবার নিচের দিকে নামবে, তবে সেটা এমনিতে নামার সম্ভাবনা নেই, চূড়া থেকে সংক্রমণ নামাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যত দ্রুত এ জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা যাবে তত দ্রুত আমরা সুদিনের পথ ধরতে পারব।’
এদিকে দেশে সংক্রমণ কত দিনে কতটা ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে কিংবা কবে নাগাদ তা চূড়া থেকে নিচের দিকে নামতে পারে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পূর্বাভাস তৈরি করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো। সরকার গঠিত কারিগরি উপদেষ্টা কমিটিতে এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্তভিত্তিক জোরালো কোনো আলোচনা-পর্যালোচনাও হয়নি বলে জানান ওই কমিটির একাধিক সদস্য। এ জন্য কমিটিভুক্ত রোগতত্ত্ববিদদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও ওই কমিটি দেশ এখন সংক্রমণের চতুর্থ পর্যায় থাকায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের পদক্ষেপের বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ ও সুপারিশ দিয়েছে, যার আলোকে ঢাকাসহ দেশের আরো কয়েকটি এলাকায় কার্যকর উপায়ে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত আসে সরকারের তরফ থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘দেশে একজন সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে ঠিক কয়জনের ভেতর ভাইরাসটি ছড়ায়, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে এই হার ১.৬। যদি সেটা হয়ে থাকে, তবে তো ভালো অবস্থানেই আমরা আছি। কারণ এই হার ২-এর নিচে থাকা পর্যন্ত ভালো লক্ষণ। তবে এটিকে ১-এর নিচে নামাতে হবে দেশ থেকে করোনাভাইরাস তাড়াতে হলে।’ সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।