জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কামরাঙ্গির চর এলাকায় ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। খবর বিবিসি বাংলার।
মেয়েটি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ ভর্তি আছে।
পুলিশ বলছে ওই মেয়েটিকে রাস্তা থেকে পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে পাঁচ যুবক।
অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে ইতোমধ্যে পাঁচজনকে আটক করার কথা জানিয়েছেন কামরাঙ্গির চর থানার ওসি এবিএম মশিউর রহমান।
তার দাবি, প্রত্যেকেই ধর্ষণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছে।
বিবিসি বাংলাকে মি. রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেয়েটি কামরাঙ্গির চরে বড় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে তার এক বান্ধবী পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যায়। সেখানে ওই পাঁচজন যুবক তাকে ধর্ষণ করে।”
ওইদিন রাতে ভুক্তভোগীর মা মেয়েটির বান্ধবীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে কামরঙ্গির চর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ভিক্টিমের জবানবন্দি নিয়ে তার চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠিয়ে দেয়।
প্রমাণ সংগ্রহে সময় লাগবে
মেয়েটির চিকিৎসা চলছে এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক এ কে এম নাসিরুদ্দিন।
ধর্ষণের আলামত সংগ্রহে মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
মি. নাসিরুদ্দিন বলেন, “ভিক্টিমের প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা আমরা শুরু করেছি। তার অবস্থা স্টেবল আছে। এছাড়া পরবর্তীতে এই ঘটনাটিকে ধর্ষক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য আমাদের যে আলামতগুলো সংগ্রহ করার দরকার, সেগুলো সব করা হয়েছে।”
এছাড়া ভিক্টিমের অন্যান্য মেডিকেল পরীক্ষা এবং ফরেনসিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন মাইক্রো বায়োলজিক্যাল পরীক্ষা চলছে বলে জানান তিনি।
আগামীকাল (শনিবার) ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে।
ধর্ষণ প্রমাণে প্রাথমিক যে কয়েকটি পরীক্ষার প্রয়োজন সেটা সাধারণত দুই একদিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়।
কিন্তু এটা যেহেতু গণধর্ষণের অভিযোগ, অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তি জড়িত সেক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার পাশাপাশি আরও কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন যাতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে।
তবে ওই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আদালতে সবচেয়ে শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করে বলে জানান মি. নাসিরুদ্দিন। সেই রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ধর্ষণের ঘটনা প্রতিহত করা যাচ্ছে না কেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এমন আরেকটি ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে জনমনে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২জন৷
অর্থাৎ, এক বছরের ব্যবধানে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷
এমন অবস্থায় অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি সামাজিক পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়েছেন ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মারজিয়া প্রভা।
মূলত তিনটি কারণে ধর্ষণ প্রতিহত করা যাচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“প্রথমত, বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্পষ্ট। সেখানে নারীকে দুর্বল ও অক্ষম ভাবা হয় যা ধর্ষণের মনস্তত্ব গড়ে তোলে।”
“দ্বিতীয়ত, দেশের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য। এই বৈষম্য সমাজের বিশাল একটি অংশকে বিকাশ হওয়ার সুযোগ দেয় না। ফলে নৈতিক অবক্ষয় হয়, যা ধর্ষণের অন্যতম কারণ।”
“তৃতীয়ত, দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি- দেশে এতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, বেশিরভাগের কোন বিচার হয় না। তখন ধর্ষকরা পার পেয়ে যায়।”
মিস প্রভা বলেন, “আমাদের সমাজের সব প্রতিষ্ঠানের উপাদানগুলোর মধ্যেই ধর্ষণ লুকিয়ে আছে। সবচেয়ে পরিবর্তন সেখানেই দরকার। নাহলে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে না। নারীর প্রতি জেন্ডার সংবেদনশীল সংস্কৃতির পরিবর্তনে দরকার নারীর ক্ষমতায়ন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ, শিক্ষার বিকাশ সেইসঙ্গে সুশাসন প্রতিষ্ঠা। সরকারের এই প্রতিটি দিকে মনোযোগ দিতে হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।