আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের তৈরি শহিদ-১৩৬ বা কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার রাশিয়ার শক্তি ও দুর্বলতা দুটোই দেখাচ্ছে। সোমবার অফিস সময়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে কামিকাজে ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় রুশ সেনারা। এই হামলা দেখিয়েছে কিভাবে এ অস্ত্র রাজধানীতে ধ্বংস এবং আতঙ্ক তৈরি করতে পারে, যেটিতে গত কয়েক সপ্তাহ আগেও টানা কয়েক মাস কোনো হামলা চালানো হয়নি।
কামিকাজে শব্দটির উৎপত্তি হলো জাপানে। যার অর্থ হলো আত্মঘাতী। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানিরা একটি কৌশল ব্যবহার করত। সেটি হলো শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে বিমানসহ আত্মঘাতী হামলা করত, যেন শত্রুপক্ষের সর্বোচ্চ ক্ষতিটা হয়।
ইরানের শহিদ-১৩৬ ড্রোনগুলো হলো আত্মঘাতী ড্রোন। লক্ষবস্তুতে হামলা করার জন্য এগুলো এগিয়ে আসে। কিন্তু ড্রোন থেকে কোনো কিছু ছোঁড়া হয় না। এরবদলে ড্রোনটিই গিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে এবং ধ্বংস হয়ে যায়। এ কারণে এগুলো কামিকাজে বা আত্মঘাতী ড্রোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ইরানের তৈরি শহিদ-১৩৬ ড্রোন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম দেখা যায় সেপ্টেম্বরে। এগুলোকে ছোট ক্রুস মিসাইল হিসেবে দেখা হয়, যদিও ৫০ কেজি পে লোড হওয়ায় এগুলো কম ধ্বংসাত্মক। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়া এরকম ২৪০০টি ড্রোন কিনেছে, যদিও এগুলো দ্রুত কমে আসছে।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের আকাশশক্তি বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রোংক বলেছেন, কামিকাজে ড্রোনগুলোকে ‘সবসময় রোধ করা যায় না’ কিন্তু গতির দিক দিয়ে ক্রুস মিসাইলের চেয়ে এগুলো পিছিয়ে। তার মানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবসময় এগুলো ধ্বংস করার সুযোগ থাকে।
বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রোংক আরও বলেছেন, শেষ পর্যন্ত, ইউক্রেনে বেসামরিক ও সামরিক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য এগুলো রাশিয়াকে একটি সুযোগ দিচ্ছে, কিন্তু এগুলো যুদ্ধের গতিপথ বদলে দেবে না।
সোমবারের হামলার মাধ্যমে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিয়েভে দুইবার হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ক্রিমিয়া ব্রিজে হামলার জবাবে গত সোমবারও কিয়েভ ও অন্যান্য শহরে মুহুর্মুহু ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায় রুশ সেনারা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইউক্রেনের রাজধানীতে দুটি বড় হামলা প্রমাণ করছে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল। যদিও এটি নিশ্চিত নয় কেন এত সময় লাগল, যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে তারা ইউক্রেনকে দুটি নাসমাস আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার যে অঙ্গিকার করেছিল সেটি ত্বরান্বিত করবে।
রাশিয়া গত কয়েকদিন ধরে ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনার ওপর হামলা চালাচ্ছে। আসন্ন শীতে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ যেন বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যন্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় সেই চেষ্টাই এখন রাশিয়া করছে।
বলা হচ্ছে, সোমবার কিয়েভে নতুন করে যে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতি করা।
শহিদ-১৩৬ বা কামিকাজে ড্রোনগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র বা অন্যান্য স্থাপনা বা স্থির বস্তুতে হামলা চালানোর জন্য বেশ কার্যকর। সামরিক বাহিনীর ওপর এগুলো ব্যবহারে অতটা সফলতা পাওয়া যায় না।
মূলত ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক আকারে ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যেই কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করছে রাশিয়া।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।