প্রথম আলো, ২০ অক্টোবর ২০২৪: ঢাকার মিরপুরে বসবাসকারী ৪৫ বছর বয়সী রিয়াজুল ইসলাম। উচ্চ রক্তচাপ আর ডায়াবেটিসের সঙ্গে লড়াই করছিলেন বছর দশেক। নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, ডাক্তার দেখানো—সবই চলছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎ প্রচণ্ড দুর্বলতা আর পা ফুলে যাওয়া নিয়ে যখন ল্যাব টেস্ট করালেন, রিপোর্টে চোখ আটকে গেল—”ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, স্টেজ ৪”। এক মুহূর্তে যেন পৃথিবী থমকে দাঁড়াল। রিয়াজুলের মতো হাজারো বাংলাদেশির অজান্তেই কিডনি তার শেষ শ্বাস নিতে বসেছে। কারণটা? প্রতিদিনের ছোট ছোট অবহেলা, যেগুলো জমা হয়ে হয়ে একদিন বিষবৃক্ষে পরিণত হয়। কিডনি ভালো রাখার উপায় জানা ও মানা শুধু সুস্থতার জন্য নয়, জীবন বাঁচানোর জন্য অপরিহার্য। আমাদের শরীরের এই নীরব ফিল্টার প্লান্টটি প্রতিমুহূর্তে রক্ত শোধন করে, হরমোন তৈরি করে, খনিজের ভারসাম্য রক্ষা করে—আক্ষরিক অর্থেই আমাদের বেঁচে থাকার ভিত্তি তৈরি করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশ কিডনি ফাউন্ডেশনের মতে, দেশে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৫ জন মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, আর ৩ জনের মৃত্যু হচ্ছে কিডনি বিকলের কারণে। এই মৃত্যুপুরী থামানোর একমাত্র হাতিয়ার? সচেতনতা ও প্রতিরোধ। আজকের এই গাইডে আমরা শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য সেই সমস্ত কিডনি ভালো রাখার উপায় নিয়েই আলোচনা করব, যেগুলো আপনার এই মূল্যবান অঙ্গটিকে আজীবন সক্রিয় রাখতে সহায়ক হবে।
Table of Contents
কিডনি ভালো রাখার উপায়: প্রতিদিনের অভ্যাসেই লুকিয়ে আছে রহস্য
কিডনি সুস্থ রাখা কোনো এককালীন প্রচেষ্টা নয়, বরং প্রতিদিনের ছোট ছোট সচেতন সিদ্ধান্তের সমষ্টি। ধানমন্ডির কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা রহমানের ভাষায়, “৮০% কিডনি রোগই প্রতিরোধযোগ্য, যদি জীবনযাত্রায় মৌলিক পরিবর্তন আনা যায়।” আসুন দেখে নিই কিভাবে আপনার দৈনন্দিন রুটিনকে কিডনি-বান্ধব করে তুলবেন:
জলের মহিমা অপরিসীম: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা কিডনি সুস্থতার প্রথম শর্ত। পানি কিডনিকে রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ও টক্সিন ফিল্টার করতে সাহায্য করে। তবে “যত বেশি পানি, তত ভালো”—এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল! অতিরিক্ত পানি পানও কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৮-১০ গ্লাস (২-২.৫ লিটার) পানি সাধারণত যথেষ্ট। গরমকালে, ব্যায়ামের পর বা ডায়রিয়া হলে এই পরিমাণ বাড়াতে হবে। পানি ছাড়াও তরমুজ, শসা, ডাবের পানি জাতীয় তরল খাবারও উপকারী। লক্ষ্য রাখুন আপনার প্রস্রাবের রং হালকা হলুদ বা স্বচ্ছ থাকা উচিত—গাঢ় হলুদ রংই শরীরে পানির অভাবের সংকেত।
লবণ: প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিষ: বাংলাদেশিদের খাদ্যাভ্যাসে লবণের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে বেশি। চিপস, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, আচার, পাপড়, এমনকি রান্নায় ব্যবহৃত লবণ—সব মিলিয়ে আমরা দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় দ্বিগুণ (১০-১২ গ্রাম) লবণ গ্রহণ করছি, যেখানে আদর্শ মাত্রা দিনে মাত্র ৫ গ্রাম (এক চা চামচের সমান)। অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়, যা কিডনির রক্তনালীগুলোকে সরু ও ক্ষতিগ্রস্ত করে। সমাধান? খাবারে আলাদা লবণ না দেওয়া, কাঁচা লবণ এড়ানো, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার কম খাওয়া, এবং লেবুর রস, ভিনেগার, ধনেপাতা, পুদিনা, রসুন, আদা দিয়ে খাবারে স্বাদ বাড়ানো।
ধূমপান ও মদ্যপান: কিডনির জন্য বিষাক্ত বোমা: সিগারেটের নিকোটিন ও টক্সিন সরাসরি কিডনির রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। অ্যালকোহল কিডনিকে ডিহাইড্রেট করে এবং এর বিষাক্ত উপাদান কিডনির কোষগুলোর জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ীদের কিডনি বিকলের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৩০-৫০% বেশি। আজই এই অভ্যাস ত্যাগ করা কিডনি সুস্থতার দিকে বিশাল এক পদক্ষেপ।
নিয়মিত ব্যায়াম: শুধু ওজন কমানো নয়, কিডনি রক্ষাও: শারীরিক সক্রিয়তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, ওজন হ্রাস করে এবং হৃদরোগের আশঙ্কা দূর করে—এই সবকিছুই পরোক্ষভাবে কিডনিকে সুরক্ষা দেয়। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম (দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার) কিডনির স্বাস্থ্যের উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ঢাকার গুলশান লেকে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে আসা ৬০ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেন বলেন, “ডায়াবেটিস ও প্রেশার থাকায় ডাক্তার বলেছিলেন, কিডনির সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত হাঁটা ও খাবারে নিয়ন্ত্রণ আনার পর এখন সব পরীক্ষাই নরমাল।”
- পর্যাপ্ত ঘুম: অদেখা সুস্থতার চাবিকাঠি: রাত জাগা বা অনিদ্রা শুধু ক্লান্তিই আনে না, কিডনির জন্যও ক্ষতিকর। ঘুমের সময় কিডনির কাজের চাপ কিছুটা কমে, শরীর নিজেকে মেরামত করে। নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং কিডনির ওপর চাপ কমায়। রাত ১১টার আগে শুয়ে পড়া এবং ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমালে ঘুমের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
এই দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা এবং বজায় রাখাই হলো টেকসই কিডনি ভালো রাখার উপায়। মনে রাখবেন, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ প্রায়শই দেরিতে প্রকাশ পায়। তাই প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা।
কিডনি রোগের প্রধান শত্রু: ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণই সুরক্ষার মূলমন্ত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, কিডনি বিকলের সবচেয়ে বড় দুটি কারণ হলো ডায়াবেটিস মেলিটাস (প্রায় ৪৪% ক্ষেত্রে) এবং উচ্চ রক্তচাপ (প্রায় ২৮% ক্ষেত্রে)। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের বিস্ফোরক বৃদ্ধি তাই কিডনি রোগের প্রকোপও বাড়িয়ে দিচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। এই দুই নীরব ঘাতক কিডনির ক্ষুদ্র ফিল্টার ইউনিটগুলোকে (নেফ্রন) ধীরে ধীরে ধ্বংস করে ফেলে।
ডায়াবেটিস যখন কিডনির শত্রু: সুগার কন্ট্রোলই সমাধান
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ থাকলে, তা কিডনির রক্তনালীগুলোকে পুরু ও শক্ত করে দেয় (ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি)। ফলে কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিকমতো ফিল্টার করতে পারে না। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ না থাকলেও, পরে প্রস্রাবে অ্যালবুমিন প্রোটিন যাওয়া (মাইক্রোঅ্যালবুমিনুরিয়া), পা ফুলে যাওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস থাকলেও কিডনি ভালো রাখার উপায়:
- রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: HbA1c টেস্টের মাধ্যমে গড় রক্তে শর্করার মাত্রা ৭% এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন (ব্যক্তিভেদে লক্ষ্যমাত্রা ভিন্ন হতে পারে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন)। নিয়মিত ব্লাড সুগার মনিটরিং জরুরি।
- খাদ্য ব্যবস্থাপনা: ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শে ডায়াবেটিক ডায়েট মেনে চলুন। শর্করা (কার্বোহাইড্রেট), বিশেষ করে রিফাইন্ড কার্ব (চিনি, সাদা চালের ভাত, ময়দা) নিয়ন্ত্রণ করুন। আঁশযুক্ত খাবার (শাকসবজি, ডাল, ওটস) বাড়ান। [ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন]।
- নিয়মিত ওষুধ/ইনসুলিন: ডাক্তারের নির্দেশিত ওষুধ বা ইনসুলিন সময়মতো ও নিয়মিত গ্রহণ করুন। নিজে থেকে ওষুধ বন্ধ করবেন না বা ডোজ পরিবর্তন করবেন না।
- কিডনি স্ক্রিনিং: ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকেই বছরে অন্তত একবার মাইক্রোঅ্যালবুমিনুরিয়া টেস্ট ও কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা (সিরাম ক্রিয়েটিনিন, eGFR) করান। প্রাথমিক সনাক্তকরণই ভয়াবহতা রোধ করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ: কিডনির রক্তনালীর ওপর চাপই মূল সমস্যা
উচ্চ রক্তচাপ কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলোর ওপর অবিরাম চাপ সৃষ্টি করে। এতে রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শক্ত হয়ে যায় এবং কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। ফলে কিডনি ঠিকমতো ফিল্টার করতে পারে না, বর্জ্য পদার্থ জমে, এবং সময়ের সাথে সাথে কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস পায়।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিডনি রক্ষার কৌশল:
- রক্তচাপের টার্গেট: কিডনি রোগ না থাকলে রক্তচাপ ১৪০/৯০ mmHg এর নিচে রাখার চেষ্টা করুন। কিডনি রোগ থাকলে বা ডায়াবেটিস থাকলে লক্ষ্যমাত্রা আরও কঠোর হতে পারে (সাধারণত ১৩০/৮০ mmHg এর নিচে)। ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।
- ড্যাশ ডায়েট: Dietary Approaches to Stop Hypertension (DASH) ডায়েট অনুসরণ করুন। এতে ফলমূল, শাকসবজি, কম ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত, গোটা শস্য, মাছ, বাদাম, বীজ বেশি থাকে এবং লাল মাংস, মিষ্টি, লবণ কম থাকে। এই ডায়েট রক্তচাপ কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। [উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায় ও ডায়েট প্ল্যান]।
- লবণ কমানো: দিনে ৫ গ্রাম (১ চা চামচ) লবণের বেশি নয়। প্যাকেটের গায়ে সোডিয়ামের পরিমাণ দেখে কিনুন (১ গ্রাম সোডিয়াম ≈ ২.৫ গ্রাম লবণ)।
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ রক্তচাপ বাড়াতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, শখের চর্চা—যা আপনাকে শান্ত করে, তা নিয়মিত করুন।
- এনএসএআইডি (NSAID) সতর্কতা: ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন: আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন, ডাইক্লোফেনাক) কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে যাদের কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে বা বয়স্ক, তাদের এই ওষুধগুলো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা উচিত নয়। প্যারাসিটামল তুলনামূলক নিরাপদ, তবে সেটাও অতিরিক্ত মাত্রায় নয়।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাই কিডনি সুস্থতার সবচেয়ে শক্তিশালী রক্ষাকবচ। এগুলো নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে, কিডনি রোগ অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে।
কিডনি সুস্থ রাখার প্লেট: সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অপরিহার্য ভূমিকা
আমরা যা খাই, তা সরাসরি কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে। কিডনি রোগ না থাকলেও সচেতন খাদ্যাভ্যাস কিডনিকে দীর্ঘদিন কর্মক্ষম রাখে। কিডনি রোগ ধরা পড়লে খাদ্যতালিকায় আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ দরকার (পুষ্টিবিদের পরামর্শে)। সাধারণ কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসেবে খাদ্যাভ্যাসে যা গুরুত্ব দেবেন:
- প্রোটিন: পরিমাণে পরিমিত, গুণে মানসম্পন্ন: প্রোটিন কিডনির জন্য একটি ডাবল-এজড সোর্ড। দেহগঠনের জন্য অপরিহার্য হলেও, অতিরিক্ত প্রোটিন (বিশেষ করে রেড মিট বা প্রাণীজ প্রোটিন) কিডনির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে কারণ প্রোটিন বিপাকের ফলে তৈরি হওয়া বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন) কিডনিকেই ফিল্টার করতে হয়। দিনে শরীরের ওজনের প্রতি কেজির জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য) সাধারণত যথেষ্ট। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ (বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ), ডাল, বিনস, টোফু, কম চর্বিযুক্ত মুরগির মাংস, ডিমের সাদা অংশকে অগ্রাধিকার দিন। গরু বা খাসির মাংস সপ্তাহে একবারের বেশি না খাওয়াই ভালো।
- পটাশিয়াম ও ফসফরাস: ভারসাম্য বজায় রাখা চাই: কিডনি সুস্থ থাকলে সাধারণত পটাশিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার খেতে কোনো সমস্যা নেই, বরং এগুলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে কিডনি কার্যকারিতা কমে গেলে, এই খনিজগুলো রক্তে জমে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছাতে পারে। কিডনি রোগ না থাকলে শাকসবজি, ফলমূল (কলা, কমলা, আঙুর, টমেটো), দুধ, দই, বাদাম স্বাভাবিক পরিমাণে খান। কিডনি রোগী হলে পুষ্টিবিদের কঠোর নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
- চর্বি: সঠিক বাছাই জরুরি: অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট (গরুর চর্বি, ঘি, মাখন, বেকারি আইটেম, ফাস্ট ফুড) রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়িয়ে হৃদরোগ ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বেছে নিন স্বাস্থ্যকর আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট—সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, জলপাই তেল, বাদাম, আখরোট, ফ্যাটি ফিশ (স্যামন, ম্যাকারেল)।
- চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: এড়িয়ে চলাই উত্তম: অতিরিক্ত চিনি ও হাই-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ ওজন বাড়ায়, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়—যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। সফট ড্রিংকস, প্যাকেট জুস, মিষ্টি, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, অতিরিক্ত মিষ্টি ফল সীমিত করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণ, চিনি, ক্ষতিকর ফ্যাট ও প্রিজারভেটিভ থাকে প্রচুর পরিমাণে।
কিডনি সুস্থ রাখার আদর্শ প্লেট:
- অর্ধেক প্লেট: রঙিন শাকসবজি (পালং শাক, লাউ শাক, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, ব্রকলি, ফুলকপি, বেগুন) ও ফল (আপেল, পেয়ারা, পেপে, নাশপাতি – পরিমিত)।
- এক চতুর্থাংশ প্লেট: গোটা শস্য (লাল চাল/আটার ভাত/রুটি, ওটস, কিনোয়া)।
- এক চতুর্থাংশ প্লেট: মানসম্পন্ন প্রোটিন (মাছ, মুরগি, ডাল, বিনস, টোফু)।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: সামান্য তেল রান্নায়, বাদাম/বীজ সামান্য পরিমাণে।
- প্রচুর পানি।
কিডনি পরীক্ষা: সচেতনতার অস্ত্র দিয়ে ঝুঁকি শনাক্ত করুন
কিডনি রোগ প্রায়ই “নীরব ঘাতক”। লক্ষণ প্রকাশ পেতে পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিংই হলো কিডনি ভালো রাখার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। কারা ঝুঁকিতে?
- ডায়াবেটিস রোগী
- উচ্চ রক্তচাপের রোগী
- স্থূলতা (বডি মাস ইনডেক্স – BMI ৩০ এর বেশি)
- পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস
- বয়স ৬০ ঊর্ধ্ব
- হৃদরোগী
- দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ সেবনকারী
- ধূমপায়ী
প্রাথমিক কিডনি পরীক্ষাগুলো কী?
প্রস্রাব পরীক্ষা (Urine Test):
- প্রস্রাবে অ্যালবুমিন (Microalbuminuria or Albumin-to-Creatinine Ratio – ACR): কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সবচেয়ে প্রাথমিক ও সংবেদনশীল সূচক। কিডনি সুস্থ থাকলে প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নামের প্রোটিন থাকা উচিত নয় বা খুব অল্প পরিমাণে থাকা উচিত। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে বছরে অন্তত একবার এই টেস্ট করানো উচিত।
- প্রস্রাবে প্রোটিন (Proteinuria): কিডনি ক্ষতি বেশি হলে সাধারণ প্রস্রাব পরীক্ষায় প্রোটিন ধরা পড়ে।
- প্রস্রাবে রক্ত (Hematuria): প্রস্রাবে লাল রক্তকণিকা পাওয়া গেলেও কিডনি রোগের ইঙ্গিত হতে পারে (যদিও অন্য কারণও থাকতে পারে)।
- রক্ত পরীক্ষা (Blood Test):
- সিরাম ক্রিয়েটিনিন (Serum Creatinine): ক্রিয়েটিনিন পেশি ভাঙনের একটি বর্জ্য পদার্থ। কিডনি কার্যকারিতা কমলে রক্তে এর মাত্রা বেড়ে যায়। তবে বয়স, লিঙ্গ, পেশির ভর অনুযায়ী মাত্রা ভিন্ন হয়।
- গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট (eGFR – estimated Glomerular Filtration Rate): এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এটি রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা, বয়স, লিঙ্গ, বর্ণ ইত্যাদির ভিত্তিতে হিসাব করে কিডনি প্রতি মিনিটে কত মিলিলিটার রক্ত শোধন করতে পারছে তার আনুমানিক হার বের করে। eGFR ৯০ mL/min/1.73m² এর বেশি হলে সাধারণত স্বাভাবিক ধরা হয়। ৬০ এর নিচে নামা মানেই কিডনি রোগের সূচনা (স্টেজ ৩ থেকে ৫ পর্যন্ত)।
- ব্লাড ইউরিয়া নাইট্রোজেন (BUN): প্রোটিন বিপাকের আরেকটি বর্জ্য। কিডনি কার্যকারিতা কমলে এর মাত্রাও বাড়ে।
কখন পরীক্ষা করাবেন?
- ঝুঁকির কারণ (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ) থাকলে: বছরে অন্তত একবার eGFR ও প্রস্রাবে অ্যালবুমিন টেস্ট।
- সাধারণ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক: ৩৫-৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি ২-৩ বছর অন্তর সাধারণ চেকআপের অংশ হিসেবে ক্রিয়েটিনিন/ eGFR চেক করানো যেতে পারে।
- কিডনি রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে (পরবর্তী অংশে লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো)।
নিয়মিত স্ক্রিনিং আপনাকে সতর্ক করবে অনেক আগেই, যখন কিডনি ক্ষতির গতি থামানো বা ধীর করা সম্ভব।
কিডনি রোগের সতর্ক সংকেত: এই লক্ষণগুলো দেখলেই সতর্ক হোন
কিডনি রোগ ধীরে ধীরে বাড়ে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে খুব কম লক্ষণই প্রকাশ পায়। তাই যে লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত কিডনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত:
- অবিরাম দুর্বলতা ও ক্লান্তি: কিডনি রক্ত শোধন করতে না পারলে বর্জ্য পদার্থ জমে। এর ফলে রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে—দুই কারণেই প্রচণ্ড দুর্বলতা ও কাজে অনীহা আসে।
- প্রস্রাবের অভ্যাসে পরিবর্তন:
- রাতে বার বার প্রস্রাব পাওয়া (নকটুরিয়া)।
- প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
- প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া (চা বা কোলার রংয়ের মতো), ফেনাযুক্ত প্রস্রাব (প্রোটিন যাওয়ার লক্ষণ)।
- প্রস্রাব করতে কষ্ট বা জ্বালাপোড়া (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণও হতে পারে, যা কিডনিতে ছড়াতে পারে)।
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
- শরীর ফুলে যাওয়া (ইডিমা): বিশেষ করে পা, গোড়ালি, পায়ের পাতা এবং চোখের নিচে ফোলাভাব। কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের হতে পারে না, ফলে ফোলাভাব দেখা দেয়।
- শ্বাসকষ্ট: কিডনি বিকল হলে ফুসফুসে তরল জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া রক্তশূন্যতার কারণেও শ্বাসকষ্ট হয়।
- বমি বমি ভাব, বমি ও ক্ষুধামন্দা: রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমে গেলে পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রে তার প্রভাব পড়ে।
- চুলকানি: রক্তে ফসফরাসসহ বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ জমে ত্বকে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
- পেশিতে টান বা খিঁচুনি: কিডনি ইলেক্ট্রোলাইটের (পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস) ভারসাম্য রক্ষা করে। এই ভারসাম্য নষ্ট হলে পেশিতে টান বা খিঁচুনি হতে পারে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা: হঠাৎ করে রক্তচাপ খুব বেড়ে যাওয়া বা আগে থেকে থাকা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না আসা কিডনি রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
স্মরণ রাখুন: এই লক্ষণগুলোর এক বা একাধিক দেখা দিলেই অবশ্যই দ্রুত ডাক্তার দেখান। প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও চিকিৎসাই কিডনিকে স্থায়ী ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) কিডনি স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা ও পরিসংখ্যান জানতে দেখুন: [https://www.who.int/news-room/fact-sheets/detail/chronic-kidney-disease]
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্ন ১: কিডনি ভালো রাখার জন্য সেরা পানীয় কি?
উত্তর: সেরা পানীয় হলো বিশুদ্ধ পানি। পর্যাপ্ত পানি পান কিডনিকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া ডাবের পানি (পটাশিয়ামের মাত্রা দেখে, বিশেষ করে কিডনি রোগীদের জন্য নয়), তাজা ফলের রস (চিনি ছাড়া, পরিমিত), ভেষজ চা (যেমন: গ্রিন টি) স্বাস্থ্যকর। কিন্তু সফট ড্রিংকস, প্যাকেট জুস, অতিরিক্ত চা-কফি এড়িয়ে চলাই ভালো। মনে রাখবেন, কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসেবে পানির কোনো বিকল্প নেই।
প্রশ্ন ২: কোন ফলগুলি কিডনির জন্য ভালো?
উত্তর: কিডনি সুস্থ থাকলে প্রায় সব ফলই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যায়। আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি, পেঁপে, শসা, আঙুর, বেরি জাতীয় ফল (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশে ভরপুর, যা কিডনির জন্য উপকারী। তবে কলা, কমলা, আঙুর, কিউই, তরমুজ ইত্যাদিতে পটাশিয়াম বেশি থাকে। কিডনি রোগ না থাকলে এগুলো খেতে সমস্যা নেই, তবে কিডনি রোগীরা পুষ্টিবিদের পরামর্শে পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণ করবেন।
প্রশ্ন ৩: প্রস্রাব আটকে রাখলে কি কিডনির ক্ষতি হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, নিয়মিত প্রস্রাব আটকে রাখা খুবই ক্ষতিকর। এতে মূত্রথলিতে চাপ পড়ে, প্রস্রাব ঘনীভূত হয় এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সুযোগ পায়। এর ফলে মূত্রথলির সংক্রমণ (UTI) হতে পারে, যা উপরের দিকে কিডনিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে (পাইলোনেফ্রাইটিস)। দীর্ঘদিন প্রস্রাব আটকে রাখলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং কিডনি পাথর হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। তাই প্রস্রাবের বেগ আসলে দ্রুত শৌচাগারে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৪: কিডনি সুস্থ রাখতে কোন ধরনের ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো?
উত্তর: কিডনি সুস্থ রাখতে এরোবিক ব্যায়াম সবচেয়ে উপকারী। যেমন: দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, নাচ। সপ্তাহে ৫ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম লক্ষ্য রাখুন। শক্তি প্রশিক্ষণ (ওয়েট লিফটিং)ও উপকারী, তবে সঠিক ফর্মে ও পরিমিত পরিমাণে। ব্যায়াম রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ওজন কমায়—যা সবই কিডনির জন্য ভালো। শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন, বিশেষ করে যদি আগে থেকে কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে।
প্রশ্ন ৫: ব্যথানাশক ওষুধ (পেইনকিলার) কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর?
উত্তর: হ্যাঁ, কিছু ব্যথানাশক ওষুধ, বিশেষ করে NSAID (নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ) যেমন আইবুপ্রোফেন (ব্রুফেন/এডভিল), ন্যাপ্রোক্সেন, ডাইক্লোফেনাক (ভোভারন/ফ্লেমারেক্স), কেটোরোলাক ইত্যাদি দীর্ঘদিন ধরে বা উচ্চ মাত্রায় সেবন করলে কিডনির রক্তনালী সরু হয়ে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। প্যারাসিটামল (নাপা/এসিটামিনোফেন) তুলনামূলক নিরাপদ, তবে সেটাও অতিরিক্ত মাত্রায় নয়। ব্যথানাশক সেবনের ক্ষেত্রে সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দিন বা বেশি মাত্রায় খাবেন না। আপনার কিডনি ভালো রাখার উপায় হিসেবে ব্যথানাশকের অপব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
প্রশ্ন ৬: কিডনি রোগের চিকিৎসা কতটা ব্যয়বহুল? ডায়ালাইসিস ছাড়া উপায় আছে কি?
উত্তর: কিডনি বিকলের চিকিৎসা (ডায়ালাইসিস ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট) অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি। বাংলাদেশে বার্ষিক ডায়ালাইসিস খরচ লক্ষাধিক টাকা। ট্রান্সপ্লান্টের খরচ আরও অনেক বেশি। তাই প্রতিরোধ ও প্রাথমিক সনাক্তকরণই সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী পন্থা। প্রাথমিক ও মাঝারি পর্যায়ে (স্টেজ ১-৩) চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো রোগের অগ্রগতি থামানো বা ধীর করা। এজন্য ডায়াবেটিস-প্রেশার কন্ট্রোল, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নির্দিষ্ট ওষুধ (ACE ইনহিবিটর/ARB যা প্রোটিনিউরিয়া কমায়) ব্যবহার করা হয়। শেষ পর্যায়ে (স্টেজ ৫) ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্টই একমাত্র বিকল্প। তাই ঝুঁকি থাকলে নিয়মিত চেকআপ ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা অপরিহার্য।
সতর্কীকরণ: এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্য সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য এবং কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শের বিকল্প নয়। আপনার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য অবস্থা, ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বদা একজন যোগ্য চিকিৎসক বা কিডনি বিশেষজ্ঞের (নেফ্রোলজিস্ট) পরামর্শ গ্রহণ করুন। কোনো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।