জুমবাংলা ডেস্ক : মেক্সিকোর কিমেরা উৎসবে কাজী নজরুল ইসলামের সিন্ধু হিন্দোল (ইংরেজি সংস্করণ ‘সুইংগিং অফ দ্য সি’ থেকে অনূদিত) এর স্প্যানিশ অনুবাদ ‘এল ভাইভেন দেল মার’ উন্মোচন করেছে মেক্সিকো সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।
শনিবার (১২ অক্টোবর) এটি উন্মোচন করা হয়, যা বাংলাদেশের জাতীয় কবির সাহিত্যিক ঐতিহ্যকে মেক্সিকোর স্প্যানিশভাষী পাঠকদের নিকট পৌঁছে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নজরুলের সাহিত্যের উত্তরাধিকার রক্ষায় অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং এই অনুবাদ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ঢাকাস্থ কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন ও জাতীয় কবির নাতনী খিলখিল কাজীকে অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে স্বীকৃতি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই বিখ্যাত রচনাটির স্প্যানিশ অনুবাদক, উনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-এশীয় স্টাডিজের সমন্বয়ক যোগেন্দ্র শর্মার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হিন্দি এবং সংস্কৃত ভাষায় তাঁর দখল নজরুলের গভীর চিন্তাধারাকে স্প্যানিশ ভাষায় নির্ভুলভাবে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত আরও ধন্যবাদ জানান কোহিমালপার উআম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরা কাবাইডো কোরিয়া এবং ‘গিলবার্টো ওয়েন এস্ট্রাডা কবিতা’ পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি এবং উয়েমেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবের কিজানো হার্নান্দেজকে, যাঁরা তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে অনুষ্ঠানটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলেন।
অধ্যাপক লরা কাবাইডো কোরিয়া তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন ‘এল ভাইভেন দেল মার’ বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন সৃষ্টিতে দৃঢ় ভূমিকা রাখবে। দক্ষিণ এশীয় সাহিত্যে তিনি নজরুলের বহুমুখী ভূমিকার প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক এবের কিজানো হার্নান্দেজক নজরুলের কাজের সামাজিক-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ সহ ধর্মীয় মেল্বন্ধন ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উত্থান নিয়ে আলোচনা করেন। তাছাড়া, নজরুলের কবিতাগুলি পাঠকদের উক্ত অঞ্চলের প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে যুক্ত হতে আহ্বান জানায় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
এই অনুষ্ঠানটি সাহিত্যের উদযাপন হলেও তার এই স্প্যানিশ সংস্করণটি বাংলাদেশ এবং স্প্যানিশভাষী বিশ্ব, বিশেষত মেক্সিকোর মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক সেতু হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম।
তিনি উল্লেখ করেন, নজরুলের সাহিত্য, তাঁর সাহসিকতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন, যেখানে তাঁর বিপ্লবী রচনাগুলি মানবাধিকার ও সামাজিক সমতার কথা তুলে ধরে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সৃষ্টি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। আজও বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের আন্দোলনে নজরুলের সাহিত্য প্রেরণা যোগায়, মানুষকে বিপ্লবী করে তোলে এবং অন্যায় ও দমননীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস যোগায় যা ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আন্দোলনেও দৃষ্টিগোচর হয়েছে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে, বাংলাদেশ দূতাবাসের মারিয়া তেরেসা রুইজ নজরুলের বিখ্যাত কবিতা “বিদ্রোহী” থেকে নির্বাচিত স্তবকগুলি স্প্যানিশভাষায় আবৃত্তি করেন। সেইসাথে, আর্নেস্তো দে লা তেজা গঞ্জালেজ এবং তার দল নজরুল সংগীত “রাঙ্গা মাটির পথে লো…” এবং “দূর দীপবাসিনী” সাথে দুটি নৃত্য পরিবেশন করেন।
এছাড়া, ১৩ অক্টোবর কিমেরা ফেস্টিভ্যালে মিউজিও দেল বারোতে মোহাম্মদ নুরুজ্জামান পরিচালিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ প্রদর্শিত হয়, যা স্থানীয় দর্শকদের নিকট প্রশংসিত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।