হাসান তনা, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী): এক সময় দেশীয় মাছের ভান্ডার খ্যাত বাফলার বিল অবৈধ দখল ও খননের অভাবে সংকচিত হওয়ায় এখন আর সেখানে তেমন দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। জেলেদের জালে আর বড় বড় শৈল, বোয়াল, শিং, মাগুড়, কৈ মাছ ধরা দেয় না। ফলে এ বিলের উপর নির্ভরশীল প্রায় ১ হাজার পরিবারের দিন কাটছে অনেক কষ্টে।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার রনচন্ডী ইউনিয়নের বাফলা গ্রামে বিলটি অবস্থিত। গ্রামের নামানুসারে এ বিলের নাম বাফলার বিল। তিন দাগে ১০৫ একর জমি নিয়ে এ বিলটি। কিন্তু বিশাল বড় বিলটি আর আগের সেই চেনা রূপে নেই। এখন কেউ গেলে সেখানে একটি ছোট বিল দেখতে পাবেন।
এলাকাবাসী জানান, কৌশলে কতিপয় ব্যক্তি বিলের জমি লিজ নিয়েছে। আবার বিলের মধ্যস্থানে ঘেড় করে ব্যক্তি মালিকানাধীন মাছের খামার দেয়ায় বিলের একদিকে শুধু পানার বিলে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বিলের জমি বেদখলও হয়েছে। এর ফলে ঐতিহ্যবাহী বিলটি মরা বিলে পরিণত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী আরও জানান, এখানে শীতে অতিথি পাখির মেলা আর বর্ষায় সাদা পদ্ম ফুলের চাদরে ভাসতো। বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করতো বিলটি। এসব দেখতে শত শত দর্শনার্থী প্রতিদিন বিল পাড়ে ভিড়ও করতো। তাই এ বিলের জমি উদ্ধার, পানামুক্তকরণ, খনন, পাখির নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে বিলটিকে প্রাণ ও চিরচেনা রূপে ফিরে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এ বিলের উপর নির্ভরশীল জেলে পরিবার ও সাধারণ মানুষ।
এ বিলে সারা বছরেই হরেক রকম দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। এখন মাছ না পাওয়ায় বিলটির ওপর নির্ভরশীল জেলের জীবন জীবিকা দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। বিলটি সংকুচিত হওয়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে।
বিলের পূর্ব উত্তর প্রান্তের মৎস্য সমিতির সভাপতি সাবে জানান, আগে বড় বড় শৈল, বোয়াল মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে বিলের জমি বেদখল হওয়ায় এখন আর আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। এর ফলে আমরা দূর্বিসহ জীবনযাপন করছি।
জেলে রথি নাথ জানান, এ বিলের ওপর প্রায় ১ হাজার পরিবার নির্ভরশীল। বিলটি রক্ষা করে আমাদের জেলে পরিবারগুলোকে বাঁচানো উচিত।
সোহরাব নামে আরেক জেলে জানান, বিলের জমি কতিপয় ব্যক্তি বেদখল করে আইল দিয়ে বিলটিকে ছোট করে ফেলছে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-ই-আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বাফলার বিলটি ঐতিহ্যবাহী একটি বড় বিল। বিলটির অনেকাংশ ভরাট হয়েছে। এটি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিলের জমি পরিমাপ করা হয়েছে। এটি খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিলটি উদ্ধার করা সম্ভব হলে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু কিশোরগঞ্জ উপজেলার জন্য নয় নীলফামারী জেলার জন্য বড় অবদান রাখবে। এখানে পর্যটনেরও অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এখানে বর্ষায় পদ্ম ফুল ফোটে, আর শীতে অতিথি পাখির মেলা বসে।
বিলটিকে বাঁচানো ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বেদখলকৃত জমি উদ্ধার, অন্যদিকে খনন করে বিলের চারদিকে দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবী। এ বিলটি হতে পারে নীলফামারীর মনোমুগ্ধকর বিনোদন কেন্দ্র। এর ফলে দেশীয় মাছের বংশ বৃদ্ধি, অতিথির পাখির নিরাপদ বাসস্থান ও সাদা পদ্ম ফুলের নকশী কাথার চিরচেনা রূপও ফিরে পাবে। এ বিলকে চিরচেনা রুপ ও প্রাণ ফেরাতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টিও কামনা করেছেন এ বিলের উপর নির্ভরশীল জেলে পরিবার ও এলাকার সাধারণ মানুষ।
তারা বলেন, বিলটির চারদিকে কংক্রিটের ছাতার নিচে বসার ব্যবস্থা, বিলের পাড়ে সিড়ি, নৌকায় চলাচলের ব্যবস্থা করলে অনেকেই এখানে ঘুরতে আসবেন। বিলটি যেহেতু লম্বা এ বিলে প্রতিবছর নৌকা বাইচের আয়োজন করলে সেটিও বিনোদনের খোরাক হতে পারে। বিনোদন প্রিয় মানুষকে সুবিধা দিতে পারলে এ বিলটি পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নেবে নিশ্চিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।