ইসলাম ডেস্ক : ইতিমধ্যে পৃথিবীর শতাধিক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত হয়ে বহু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যায় চীন এগিয়ে থাকলেও বিশ্বের অনেক দেশে আক্রান্তদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশেও কয়েকজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগব্যাধি কিছুদিন পরপর জানান দেয়, আমরা যত উন্নতিই করি, মহান আল্লাহর করুণা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। আমাদের উচিত ছোট-বড় সব ধরনের পাপ থেকে আল্লাহর কাছে তওবা করা; কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। কারণ পাপের জন্যই বিভিন্ন আজাব ও মহামারী নেমে আসে বলে হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।
মহানবী (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)
মহামারী ছড়ানো কিয়ামতের নিদর্শন
সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। অশ্লীলতা থেকে বিরত ও সর্বদা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন থাকা। কারণ কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি মহামারী। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে বকরির পালের মহামারীর মতো মহামারী ছড়িয়ে পড়বে, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে ১০০ দিনার দেওয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রতিটি পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য।’ (বোখারি, হাদিস : ৩১৭৬)
হাদিসের ভাষ্যের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি অনেক ক্ষেত্রে মিলে যায়। বিশ্বব্যাপী ধনীদের মধ্যে প্রাচুর্য ও সম্পদ বেড়েই চলছে। নতুন নতুন রোগের প্রকোপ হচ্ছে, যেগুলো প্রতিরোধ করার সাধ্য কারও নেই। তাই এই পরিস্থিতিতে আমরা রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথ অনুসরণ করতে পারি।
কোরআনে বর্ণিত মহামারীতে আক্রান্ত জাতি
পাপাচারের শাস্তি হিসেবে অতীতেও আল্লাহতায়ালা মহামারী দিয়েছেন। অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করেছেন। দাউদ (আ.)-এর যুগের একটি ঘটনা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি কি তাদের দেখোনি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। তারপর আল্লাহ তাদের জীবিত করেন।…’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৪৩) তাফসির ইবনে কাসিরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা সংখ্যায় ছিল চার হাজার। মহামারীর ভয়ে পালিয়ে ছিল। তারা বলেছিল, আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। তারপর তারা এক স্থানে একত্র হলে আল্লাহ তাদের ওপর মৃত্যুর ফরমান জারি করেন।’
হাদিসের একটি বর্ণনা থেকে জানা যায় আল্লাহতায়ালা অতীতের বিভিন্ন জাতি-গোত্রকে মহামারীর মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাইলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার অবশিষ্টাংশই মহামারী।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)
মহামারী দেখা দিলে করণীয়
বেশির ভাগ মহামারীই সংক্রামক। তাই রাসুল (সা.) মহামারীর সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ইমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে। তাই মহামারীর ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সে জায়গায় গমন করো না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৫)
একটি বর্ণনায় দেখা গেছে, সিরিয়ায় মহামারী দেখা দিলে ওমর (রা.) তার গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন। (বোখারি, হাদিস : ৫৭২৯)
তাই যেখানে মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত উচিত নয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়ায়, অন্যজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, হাত মেলানো ও কথাবার্তায় সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
মহামারীতে মৃত ব্যক্তি শহীদ
মহামারীতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। মহানবী (সা.) মহামারীতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ গণ্য করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ মহামারীতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করেছে।’ (বোখারি, হাদিস : ২৮২৯)
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহামারীর কারণে মারা যাওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত।’ (বোখারি, হাদিস : ২৮৩০)
মহামারী থেকে বাঁচার দোয়া
হাদিসে রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদ্বুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামি উল আলিম’। সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর আচমকা কোনো বিপদ আসবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮)
দোয়ার অর্থ : ‘আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’
আরেকটি দোয়ায় রয়েছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনু-নি, ওয়াল জুজামি, ওয়া মিন সাইয়িইল আসকাম।’ অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কুষ্ঠরোগ, মস্তিষ্কের বিকৃতি ও সব ধরনের দুরারোগ্য থেকে মুক্তি চাচ্ছি।’ (আদু দাউদ, হাদিস : ৫৪৯৩)
লেখক : মুফতি আসিম নাজিব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।