জুমবাংলা ডেস্ক : হিমাগারে আলু মজুদ রেখে আড়ত ফাঁকা করে আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। বাজারে আলুর স্বাভাবিক সরবরাহ নেই- তা প্রমাণের লক্ষ্যেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের এ কৌশল।
ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার দুই দফায় আলুর দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও দেশের কোথাও নির্ধারিত সেই দরে আলু বিক্রি হচ্ছে না। দেশের কোথাও ২৬ টাকা কেজি দরের আলুর সরবরাহ নেই, এমন অজুহাত তুলে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। রাজধানীর একাধিক বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বুধবার (২১ অক্টোবর) থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে। তবে তা বাজারে কোনও প্রভাবই ফেলেনি। এর ফলে আলুর বাজারে বিদ্যমান অস্থিরতা নিরসনের কোনও লক্ষণও দেখা যায়নি।
সূত্র জানিয়েছে, আলুর আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের পর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার। মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদফতরে এক সভায় এই দাম নির্ধারণ করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৭ অক্টোবর প্রতিকেজি আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদফতর। এই দাম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু নির্ধারিত এই দামের বিষয়ে আপত্তি জানান ব্যবসায়ীরা। একপর্যায়ে তারা আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন। মঙ্গলবারের (২০ অক্টোবর) সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড় ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় হাজার হাজার টন আলু কোল্ডস্টোরেজে মজুদ করে রেখেছেন। ক্রমশ আলুকেন্দ্রিক সংকট ঘনীভূত করে সরবরাহে অবস্থাপনার অজুহাত এনে অধিক দামে ধীরে ধীরে এসব আলু কোল্ডস্টোরেজ থেকে বের করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। ১০০ টন চাহিদার বিপরীতে বাজারে আসছে ১০ টন আলু। ফলে ৯০ টনের সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থির রাখার পাঁয়তারা করছে আলুর অসাধু ব্যবসায়ীরা। এমন অভিযোগ করেছেন আলুর পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
দেশের আলুর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হচ্ছে রাজধানীর কাওরানবাজার। সেখানে দীর্ঘদিনের আলুর পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, কোথাও আলুর মজুদ নাই। সবখানে ফাঁকা। এখানে যে প্রতিদিন হাজার হাজার টন আলু কেনাবেচা হয়েছে তা বোঝারও কোনও কায়দা নাই। সেখানে বিরাজ করছে পুরোমাত্রায় অলসতা।
জানতে চাইলে সেখানকার পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানিয়েছেন, ‘বাজারে আলুর সরবরাহ নাই। তাই আমরা অলস বসে আছি। কেনাবেচা নাই। আলু আছে কোল্ডস্টোরেজে। কিন্তু আড়তদাররা তো কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু ছাড়ছে না। বাজার চলবে কী দিয়ে? তাই অলস বসে আছি।’
এদিকে রাজধানীর অদূরে মুন্সীগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার কোল্ডস্টোরেজগুলো এখন আলুতে পরিপূর্ণ। অন্যান্য বছর এই সময়টায় ক্রমশ আলু কোল্ডস্টোরেজগুলো থেকে বের করে বাজারে ছাড়া হয়। তবে এ বছরের চিত্র ভিন্ন। এ বছর এখনও ফাঁকা কোল্ডস্টোরেজগুলোয় নতুন করে আলু রাখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের মীরকাদিমের সোনারবাংলা কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের হিমাগারে কিছু জায়গা ফাঁকা ছিল। সেখানে গত সপ্তাহে ২০০ মণ আলু রেখে ভরাট করে ফেলেছি। এভাবেই এই এলাকায় যেসব হিমাগারে কিছু জায়গা ফাঁকা রয়েছে, সেসব ফাঁকা জায়গা নতুন করে আলু রেখে ভরে ফেলা হচ্ছে।’
এদিকে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ে বাজার মনিটরিং করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দুই-একদিনের মধ্যেই বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দাম নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরেছেন। তারা নিজেরা বলেছেন, এই দাম বাস্তবায়ন না করলে মুনাফাখোর হিসেবে বিবেচিত হবেন। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন আমাদের সহযোগিতা করতে। আর বৃহস্পতিবার থেকেই বা দুই-একদিনের মধ্যেই আমরা বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করবো।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বছরই আলুর দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা হয়। এটা হলে মানুষ তেমন কিছু মনে করবে না। কিন্তু যদি ৫০-৬০ টাকা হয়ে যায় তাহলে কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা যাতে কার্যকর হয় সেজন্য আমরা চেষ্টা করবো। এক মাসের মধ্যেই দাম কমে আসবে।’
এদিকে প্রতি কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রির বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলে জানিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। তাই ভোক্তা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে কৃষি বিপনন অধিদফতর থেকে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দেশের ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের কাছেই এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ লাখ ৯ হাজার টন। বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এই হিসেব অনুযায়ী দেশে ৩১ লাখ ৯১ হাজার টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রফতানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা একেবারেই ক্ষীণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিক্রমপুরের আলু খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রংপুর ও রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরেও আলুর দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটকেই দুষছেন সংশ্লিষ্টরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।