জুমবাংলা ডেস্ক: বোম্বাই লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত ঈশ্বরদী। ইতিমধ্যে দেশী (আঁটি) লিচু পাকতে শুরু করেছে। কদিন বাদেই বাগানগুলোতে বোম্বাই লিচু লাল টকটকে রঙিন হওয়ার কথা। কিন্তু বাদ সেজেছে প্রকৃতি। শত শত বাগানের লিচু চাষিদের কোটি কোটি টাকা উপার্জনের রঙিন স্বপ্ন প্রকৃতির রুদ্র তাপে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। চোখের সামনেই ফেটে ঝড়ে পড়ছে কোটি টাকার স্বপ্নের লিচু। সমাধি রচনা হচ্ছে কোটি টাকা উপার্জনের স্বপ্ন। ঈশ্বরদীর গ্রামগুলোতে লিচু চাষিদের আনন্দ আজ শোকের ছায়ায় নিমজ্জিত। ইত্তেফাকের প্রতিবেদক স্বপন কুমার কুন্ডু-এর প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে বিরাজ করছে তীব্র দাবদাহ। বৃষ্টির ছিটে-ফোঁটা নেই। তাপমাত্রা ৩৮-৪৩ ডিগ্রীতে উঠানামা করছে। সরেজমিনে লিচু বাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, টানা তাপদাহে লিচু পরিপক্ব হয়ে উঠার আগেই লালচে রং ধারণ করেছে। গাছেই ফেটে যাচ্ছে এবং ঝরে পড়ছে লিচু। প্রতিটি ২-৩ টাকা দামের কৃষকের স্বপ্নের লিচু মাটিতে পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। ঈশ্বরদীতে গত বছরের তুলনায় এবারে বোম্বাই লিচু গাছে অর্ধেকেরও কম গাছে মুকুল এসছে। বৈরী আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে লিচুর ফলনে। চলমান দাবদাহে বোম্বাই লিচু পরিপক্ব হওয়ার আগে গাছেই ফেটে যাচ্ছে। দেশি মোজাফ্ফরী জাতের (দেশী) লিচু রোদের তীব্রতায় পুড়ে কালচে হয়ে যাচ্ছে। দিন সাতেক আগে দেশি লিচু বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অপরিপক্কতার কারণে লিচু আকারে যেমন ছোট, স্বাদও তেমন নেই।
কৃষকরা জানান, বৈরী পরিস্থিতি চলতে থাকলে ঈশ্বরদীতে লিচু চাষে এবারে চরম বিপর্যয় ঘটবে। বেশীরভাগ লিচু চাষির গোটা বছরের সংসার লিচু চাষে উপার্জিত আয়ের উপর নির্ভরশীল।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ঈশ্বরদীতে তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টন। মৌসুমে প্রতি বছরই ঈশ্বরদীতে কমবেশী প্রায় ৫’শ কোটি টাকার লিচুর উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরণ ও তীব্র দাবদাহের কবলে পড়ে লিচুর উৎপাদন নিয়ে শংকাগ্রস্থ কৃষি বিভাগ ও লিচু চাষীরা।
আবহাওয়া অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাসাধিক সময় ধরে ধরে প্রতিদিনই বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই তাপমাত্রার কাঁটা ৩৬ ডিগ্রী অতিক্রম করে। দুপুরের পর ৩৮-৪০ ডিগ্রীর মধ্যে উঠানামা করছে। এরআগে তাপমাত্রা ৪২-৪৩ ডিগ্রীতেও উঠেছিল।
লিচু চাষের জন্য লাগাতার তাপপ্রবাহ অসহনীয় বলে ঈশ্বরদী কৃষি অফিস সূত্রে জানিয়েছে। প্রকৃতির উপর কারো হাত নেই। অপোকৃত স্বচ্ছল লিচু চাষিরা প্রতিদিনই গাছে স্প্রে মেশিনের সাহায্যে পানি দিচ্ছে। যাদের সামর্থ নেই তাদের বিপর্যয় ঘটবে।
ঈশ্বরদীর জয়নগর ও মানিকনগর গ্রামে সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদন হয়। জয়নগর গ্রামের লিচুচাষি শাহমত মন্ডল বলেন, আমার ৫০-৬০টি লিচুগাছ রয়েছে। এরইমধ্যে ২০টি গাছের লিচুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বোম্বাই লিচু পাকতে আরও ১০-১৫ দিন সময় লাগবে। এরইমধ্যে দেখা দিয়েছে ফাটল। ২০১৬ সালেও এতো বেশি ফাটল দেখা দেয়নি। কেন ফাটছে বুঝতে পারছি না।
লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল রউফ বলেন, লিচুর ফলন এবারে কম। তার ওপর লিচু ফেটে ঝরে পড়ছে। এযেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। লিচুর বাগান কেনার পর সার ও কীটনাশকসহ পরিচর্যায় বহু টাকা ব্যয় করেছি। কিন্তু ফাটা যেভাবে শুরু হয়েছে, তাতে পাকতে পাকতে পুরো বাগানের লিচুই ফেটে ঝরে যেতে পারে। বহু লিচু ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে যাবে।
কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে থাকলে লিচুর জন্য খুবই তিকর। এবারে মুকুল হতে লিচুর গুটি যখন ধরতে শুরু হয়েছে, তখন থেকেই প্রায় এক মাস যাবত ঈশ্বরদীর তাপমাত্রা ৩৮-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এতেই ব্যাপক তি হচ্ছে। তাপপ্রবাহের কারণে লিচু ফেটে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, লিচু ফাটা রোধে কার্যকরী কোনো স্প্রে এ মুহূর্তে ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি না। শুধু লিচু গাছে প্রচুর পরিমাণ পানি স্প্রে করতে হবে। শেষ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি স্প্রে করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।