জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরে পারিবারিক বিরোধের জেরে মাদ্রাসা ছাত্র বিপ্লব হোসেন আকন্দকে (১৪) কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারই বাবা। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন নিহতের বাবা ও ফুপাতো ভগ্নিপতি। তাদের দুইজনকেই গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গাজীপুর সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানার পিরুজালী আকন্দপাড়া গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেন আকন্দের ছেলে নিহতের বাবা বাবুল হোসেন আকন্দ (৪২) এবং একই গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে নিহতের ফুপাতো ভগ্নিপতি এমদাদুল (৩৫)।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, মাদ্রাসা থেকে ছুটিতে বাড়ি আসার কয়েকদিন পর গত ৮ মার্চ রাত সোয়া ৮টার দিকে মসজিদে এশার নামাজ পড়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বিপ্লব হোসান আকন্দ।
পরদিন সকালে বাড়ির পাশের গ্রাম বকচরপাড়া এলাকার সড়কের পাশে একটি ঝাড়ের নিচে বিপ্লবের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। তার গলাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
নিহত বিপ্লব নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বীর হাটাবো এলাকার আল জামিয়া আল সালাদিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলো। এ ঘটনায় নিহতের মা খাদিজা আক্তার বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে মামলা করেন।
পুলিশ সুপার জানান, প্রায় এক মাস তদন্ত করেও এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারছিলো না জয়দেবপুর থানা পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে এ খুনের মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় গাজীপুরের পিবিআইকে।
পরে পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাহমুদুল হাসান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত নিহতের বাবা বাবুল হোসেন আকন্দ ও ফুপাতো ভগ্নিপতি এমদাদুলকে গ্রেপ্তার করেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার একপর্যায়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোদাল এমদাদের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, প্রায় ২০ বছর আগে বাবুল হোসেন পারিবারিকভাবে ঢাকার গুলশান থানার বেড়াইদ এলাকার আলী হোসেনের মেয়ে খাদিজা আক্তারকে প্রথমে বিয়ে করেন। এ সংসারে আতিক ও বিপ্লব হোসেনের জন্ম হয়। অন্যদিকে প্রায় ১২/১৩ বছর আগে বাবুলের ছোট ভাই স্বপন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকার খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর জুলিয়ার সঙ্গে ভাসুর বাবুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
এর জেরে বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই জুলিয়াকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন বাবুল। বাবুলের দ্বিতীয় সংসারে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। দুই স্ত্রীর মাঝে বনিবনা না হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের আকন্দপাড়ায় থাকতেন বাবুল। অন্যদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়া সন্তানদের নিয়ে থাকতেন টাঙ্গাইলে। কিন্তু সেখানে জুলিয়া আপত্তিজনকভাবে চলাফেরা করার কারণে তাকে পিরুজালীতে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন বাবুল।
জুলিয়া নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে প্রায়ই বাবুলের বড় স্ত্রী খাদিজাকে মারধর করত। ইতোমধ্যে বাবুলের ভাগ্নি জামাই এমদাদের সঙ্গে জুলিয়ার গোপন সম্পর্ক তৈরি হয়। এমন সুযোগ নিয়ে বাবুলের প্রথম স্ত্রীকে ঘর ছাড়া করতে এমদাদকে বিভিন্ন পরামর্শ দিত জুলিয়া।
এদিকে খুনের ঘটনার ৩ মাস আগে বাবুলের সঙ্গে ঝগড়া করে জুলিয়া তার ছোট মেয়েকে নিয়ে টাঙ্গাইলে বাবার বাড়ি চলে যায় এবং প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেয়ার জন্য বাবুলকে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ঘটনার ১০ দিন আগে জুলিয়া পিরুজালী গ্রামে এসে এমদাদের সঙ্গে দেখা করে বিপ্লবকে হত্যা করার জন্য বাবুলকে রাজী করাতে বলে। পরে এমদাদের পরামর্শে বাবুল তার নিজের সন্তান বিপ্লবকে খুন করতে রাজি হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এমদাদ সেভেন আপের সঙ্গে নেশা জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে বিপ্লবকে খাওয়ায়। পরে বাবুল কৌশলে তার ছেলে বিপ্লবকে বকচরপাড়া এলাকার বাঁশ ঝাড়ের পাশে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যায়। নেশা জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর ফলে বিপ্লব অচেতন হয়ে পরে। এসময় বাবুল তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে নিজের সন্তান বিপ্লবের গলায় কোপ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত বিপ্লবের শরীরে আঘাত করে বাবুল। পরে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।