মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ : অর্থের অভাবে পড়ে কাজের সন্ধানে থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান নাফিস ইয়াকুব নামের এক তরুণ। কিন্তু বৈধভাবে না আসায় সর্বদা তাঁকে পুলিশের ভয়ে থাকতে হতো। তদুপরি কাজের সন্ধানে দিন পার করতে থাকেন কোরআনের হাফেজ নাফিস ইয়াকুব।
তখন রমজানের কয়েক দিন বাকি। বিভিন্ন মসজিদ থেকে তারাবির নামাজ পড়ানোর ডাক আসা শুরু হয়। এমন সময় একদিন রাতে ইউসুফ খাবার খেতে ঘর থেকে বের হন। ঘটনাক্রমে টহলরত মালয় পুলিশ তাঁকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলে। কিন্তু কোনো বৈধ নথিপত্র না থাকায় পুলিশ ইউসুফকে ধরে নিয়ে যায়। অবৈধভাবে মালয়েশিয়া আসায় তাঁকে কারাগারে রাখা হয়, যেন উপযুক্ত সময়ে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো যায়।
কারাগারে কোনো ফ্যান ছিল না। পুরো সময় ঘুমিয়ে কাটাতেন ইউসুফ। তীব্র গরম থেকে রক্ষা পেতে গায়ের জামা খুলে তাতে বসতেন। খাবারের আগে ঘুম থেকে জেগে বসতেন। খাবারের অপেক্ষার সময় তাঁকে বসে থাকতে হতো। এ সময় তিনি অত্যন্ত সুন্দর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করতেন। কণ্ঠস্বর মনোমুগ্ধকর হওয়ায় সবাই তাঁর কোরআন তিলাওয়াত শুনতে আসত।
দায়িত্বরত এক নিরাপত্তাকর্মী ইউসুফের সুন্দর কোরআন তিলাওয়াতের দৃশ্য ভিডিও করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দিরা ভিড় করে তাঁর তিলাওয়াত শুনছে। পরে তা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় এবং তাঁর সুন্দর কণ্ঠে সবাই মুগ্ধ হয়। সবার মুগ্ধতার পাশাপাশি ইউসুফের দুঃখ-কষ্টে ভরা জীবন দেখে মালয়েশিয়ার মুসলিমরা তাঁর প্রতি সহানুভূতি দেখায়। এমনকি মালয়েশিয়ার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও কারাগারে এসে ইউসুফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এর কয়েক দিন পর অজ্ঞাত কারণে ইউসুফের ছয় মাসের জেল কমিয়ে চার মাস করা হয়। এ সময় তিনি বন্দিদের নিয়ে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করতেন। রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করতেন। বন্দিদের তিনি ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো শেখাতেন। তাঁর নিজস্ব কর্মতৎপরতায় অনেক কারাবন্দির জীবন বদলে যায়।
নির্দিষ্ট সময়ের পর ইউসুফ কারাগার থেকে মুক্তি পান। মালয়েশিয়ার একটি দাওয়াহবিষয়ক কোর্স সম্পন্ন করে তিনি একটি মসজিদে ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে কম্বোডিয়ায় তাহফিজ আল কালাম নামের একটি মাদরাসা পরিচালনা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।