জুমবাংলা ডেস্ক : তক্ষক দিয়ে ক্যান্সারের মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়; তক্ষক ঘরে থাকলে লাখ লাখ টাকা আসে; প্রতিবেশী দেশে এর ব্যাপক চাহিদা; মাথার ম্যাগনেটের দাম কোটি টাকা—এমন গুজবের ওপর ভর করে দেশজুড়ে সংঘবদ্ধ চক্র নির্বিচারে তক্ষক ধরছে। কেউ কেউ তক্ষকের কঙ্কাল বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অধিক লাভের জন্যে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিরাও এখন তক্ষক কেনাবেচার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।
গত ৬ নভেম্বর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পৃথক দুটি অভিযান চালিয়ে যশোর থেকে তক্ষকের কঙ্কাল বিক্রি করে ফেরার পথে ৫৪ লাখ টাকাসহ দুই প্রতারককে আটক করেছে। পরদিন রংপুরের পীরগাছা থেকে ভারতীয় নাগরিকসহ চারজনকে আটক ও তক্ষক উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে বন্য প্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট গত বছরের ১৬ জুলাই ঢাকার রামপুরা থেকে মাদক কারবারি ময়না বেগমকে আটক করে। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি তক্ষকসহ বিপুল পরিমাণ ইয়াবা। এ ছাড়া প্রায়ই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তক্ষক উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। গুজবে ভর করে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী তক্ষক শিকার অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কয়েকজনকে আটকের পাশাপাশি শতাধিক তক্ষক উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে অনেক জনপদ তক্ষকশূন্য হয়ে পড়েছে। ২০০ গ্রাম ওজনের তক্ষকের দাম এক কোটি টাকা—এমন গুজবের ওপর ভর করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে অনেকেই এখন তক্ষকের পিছু ছুটছে। একটি প্রতারকচক্র তক্ষকের মাথায় মূল্যবান ম্যাগনেট (চুম্বক) আছে, তক্ষক দিয়ে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি হয়, তক্ষক ঘরে রাখলে সহসাই ধনী হওয়া যায়—এমন গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তক্ষক নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করছে। এরপর প্রতারণার মাধ্যমে তাদের হাতে কথিত ‘মহামূল্যবান’ তক্ষক বা এর কঙ্কাল গছিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তক্ষক কেনা-বেচা নিয়ে নানা রকম সামাজিক বিশৃঙ্খলারও সৃষ্টি হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র গুজব ছড়িয়ে তক্ষকের পেছনে মানুষকে লেলিয়ে দিচ্ছে।
এর দাম পাঁচ-দশ টাকাও হবে না
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান দেশের জনপ্রিয় একটি দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, তক্ষকের দাম লাখ লাখ টাকা নয়। এর দাম পাঁচ-দশ টাকাও হবে না। কারণ তক্ষকে মূল্যবান কিছুই নেই। বরং সমানে তক্ষক নিধনের কারণে প্রাণীটির বিলুপ্তি ঘটবে।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে যশোর সরকারি এম এম কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রফেসর অসিত বরণ ভৌমিক বলেন, ‘টিকটিকির চেয়ে বড় এই প্রাণীটি সরীসৃপ। এর ডাকনাম তক্ষক। আরেক নাম সান্ডা। আর বৈজ্ঞানিক নাম বেশশড় মবপশড়। প্রাণীটি নিশাচর, টক টক শব্দ করে ডাকে বলে এর নাম হয়েছে তক্ষক। প্রাণীটি ঝোপঝাড়, গাছের গুঁড়ি, দালানের ভগ্নস্তূপে দলবদ্ধভাবে বাস করে। এরা পোকামাকড় খায়। কিন্তু এরা মহামূল্যবান প্রাণী নয়। তক্ষক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
‘ক্যান্সারের ওষুধ কিংবা কেমো—কোনো কিছুই তক্ষক দিয়ে তৈরি হয় না।’
এ প্রসঙ্গে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অনুপম চক্রপানি বলেন, ‘ক্যান্সারের ওষুধ কিংবা কেমো—কোনো কিছুই তক্ষক দিয়ে তৈরি হয় না।’ সূত্র : কালেরকণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।