আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্যাম ব্যাংকম্যান ফ্রাইডকে বলা হতো ‘ক্রিপ্টো কিং’। কিন্তু বছর শেষ হতে না হতেই নিজের উপাধি ও অর্থ দুটো হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন স্যাম।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ডিজিটাল মুদ্রাবাজারে এক বৈপ্লবিক নাম। ক’দিন আগেও বলা হয়েছে ভবিষ্যতের লেনদেন হবে এ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে। বেশ কিছু দেশও তাদের লেনদেনে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে দিয়েছে অনুমোদন। কিন্তু চলতি বছরেই ক্রিপ্টো প্রমাণ করল- ধরাছোঁয়ার ঊর্ধ্বে এ মুদ্রা কর্পূরের মতো উবে যেতে পারে যখন-তখন।
ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারে চলতি বছরের মে মাস থেকে মন্দাভাব শুরু হয়। অর্থাৎ ২০২২ সালের মে মাসে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। শুধু বিটকয়েন না, ইথিরাম ও বিন্যান্সের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির দামও ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিটকয়েনের দাম বাড়তে থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী দেদারসে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছিলেন।
হঠাৎ বিনিয়োগে মাইনিং (বিটকয়েন তৈরি ও বাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়া) ও বিটকয়েনের দামে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হয়। এতে করে দরপতন হয় বিটকয়েনের। অন্য বাজারে দরপতন হলে সম্পত্তি তরলীকরণ (পণ্য থেকে টাকায় রূপান্তর) করা সহজ হয়। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো বাজারে তরলীকরণ এক রকমের অসম্ভব।
ক্রিপ্টোজগতের রাজা স্যাম ব্যাংকম্যান ফ্রেড। সম্প্রতি ফ্রেডের ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান এফটিএক্সের ধসে ক্রিপ্টো গ্রাহকদের মাথায় এক রকমের বাজ পড়েছে বলা যায়।
ত্রিশ বছর বয়সে ক্রিপ্টো সম্রাজ্য গড়ে রাতারাতি বিলিয়নিয়ারদের কাতারে নাম লেখান স্যাম। নিজের প্রতিষ্ঠান এফটিএক্সকে ক্রিপ্টো গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় করে একের পর এক বিনিয়োগের মাধ্যমে আয় করেন ৩২ বিলিয়ন ডলার। স্যাম একজন ভিডিও গেইম প্রেমিক। সম্প্রতি সিকুয়া নামে এক কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগের আলোচনায় গেইম খেলতে খেলতে ২১০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ তুলে নেন স্যাম। চারিদিকে যখন তরুণ বিলিয়নিয়ার হিসেবে স্যামের জয়জয়কার, তখনই হঠাৎ এফটিএক্সকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন স্যাম। এ যেন একদিনের মধ্যে বিলিয়নিয়র থেকে পথে বসার দশা।
এদিকে এফটিএক্সে ধস নামায় ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে জন্ম নিয়েছে নানা ধরনের শঙ্কা। প্রতিষ্ঠানটির ১২ লাখ গ্রাহক যারা কি-না এফটিএক্সের মাধ্যমে বিটকয়েন থেকে শুরু করে নানা ধরনের ক্রিপ্টোমুদ্রা লেনদেন করেন, তারা ভুগছেন চরম অনিশ্চয়তায়। অনেকেই ধারণা করছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সিতে তাদের বিনিয়োগ করা অর্থ আর ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সম্প্রতি স্যামকে নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জীবনের সবচেয়ে খারাপ মাসটি কাটাল স্যাম। বিলিয়নিয়ার স্যামের এমন দশা হয়েছে যে তার হাতে এখন আর কোনো টাকাই নেই।’
আত্মপক্ষ সমর্থন করে স্যাম বলেন, ‘আমি কোনো জালিয়াতি করিনি। একটি বড় রকমের ধসের স্বীকার আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান।’
ম্যাসাচুসটেস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এমআইটি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র স্যামকে অনেকেই ওয়ারেন বাফেটের সঙ্গে তুলনা করতেন। কিন্তু স্যামের পতনে পুরো ক্রিপ্টোবাজারে চলছে বড় রকমের হাহাকার। এফটিএক্সের কাছে ৫০ প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পাওনা ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
ভবিষ্যৎ নিয়ে স্যাম কী ভাবছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। আমি মনে করি নিজেকে নিয়ে কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার উপযুক্ত সময় এটা না।’
২০২১ সালে বিলিয়নিয়ারদের খাতায় নাম লেখান স্যাম। প্রতিদিন তার প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন হতো। বাহামাস ভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটির ধসকে অনেকেই বলছেন, স্যামের সঙ্গে সঙ্গে ধসে পড়ল বিটকয়েনসহ অন্যান্য সব ক্রিপ্টোমুদ্রা। এতে করে ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে ক্রিপ্টোমুদ্রার সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে- আদৌ এ মুদ্রার ওপরে নির্ভর করা যায় কি-না!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।