গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুর জেলার টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের আউট সোর্সিং কর্মচারি তৌহিদুল ইসলাম হৃদয় কোন সরকারী আদেশ না থাকলেও জোর খরে ওয়ার্ড মাস্টার পদ নিয়ে ক্ষমতার দাপটে একের পর এক অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটাচ্ছেন।
তিনি বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির ৩ বিক্রয় প্রতিনিধিকে পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও হাসপাতালের ইমারজেন্সি ও অন্য বিভাগ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা জানায়, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কমর উদ্দিনের অনুমতি নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ২দিন (রোববার ও বুধবার) বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা দুপুর ১২টার পর ডাক্তারদের ভিজিট করতে পারেন। সে হিসেবে আজ বিক্রয় প্রতিনিধিরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ডাক্তারদের চেম্বারের পাশে অপেক্ষা করতে থাকে। এ সময় হাসপাতালের আউট সোর্সিং কর্মচারী হৃদয় সরকারী নিয়ম বর্হিভূত নিজেকে ওয়ার্ড মাস্টার পরিচয় দিয়ে প্রতিনিধিদের হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়।
প্রতিনিধিরা তার কথা না শোনে অপেক্ষা করতে থাকলে হৃদয় ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। গালাগালের প্রতিবাদ করলে সে ও তার অপর দুই সহযোগী মিলে হেলথ কেয়ারের আরিফুল ইসলাম, জুবায়েদুল ইসলাম ও রেডিয়েন্টের আদম শফিউল্লাহকে কিল, ঘুষি, চড়থাপ্পর মেরে আহত করে। হৃদয় প্রতিনিধিদের হাতে থাকা ব্যাগ জোর করে কেড়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। পরে হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন হৃদয়কে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
প্রতিনিধিরা আরও জানায়, আউট সোর্সিং কর্মচারি হৃদয় হাসপাতাল গেইটের এক পাশে তাদের মোটরবাইক রাখার জন্য তত্ত্বাবধায়কের নামে নিয়মিত টাকা নিতো, সেই টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে, সে ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ সময় হাসপাতালে অবস্থানরত রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়।
একটি বিশেষ সূত্রে আরও জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের নাম ভাঙিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কমর উদ্দিন ও আরএমও ডা. পারভেজকে ম্যানেজ করে একজন আউট সোর্সিং কর্মচারি রাতারাতি ওয়ার্ড মাস্টার বনে যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি রুম দখল করে সজ্জিত অফিস এবং সেখানে সরকারী টেলিফোন ব্যবহার করছে। হৃদয় পঞ্চম শ্রেণি পাস বলে জানা গেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ওয়ার্ড মাস্টার পদটি তৃতীয় শ্রেণির একটি পদ। এই পদে ইচ্ছা করলেই তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দিতে পারেন না। এ পদে নিয়োগ সংক্রান্ত সরকারী রাজস্ব খাত থেকে সার্কুলার হলে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দিতে হয়।
বিশেষ সূত্রে আরও জানা যায়, প্রতিমাসে ১৪ জন ব্রাদারের কাছ থেকে ৭০০ করে মোট ৯ হাজার ৮০০ টাকাসহ বিভিন্ন খাত থেকে জরুরী বিভাগের ইনচার্জ তারেক মাহমুদের মাধ্যমে টাকা উঠিয়ে ডা. কমর উদ্দিন ৫ হাজার, ডা. পারভেজ ৫ হাজার, হৃদয় ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও রয়েল নার্সিং ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টার্নি করার জন্য সরকারী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কমর উদ্দিন ও আরএমও ডা. পারভেজের সাথে ২ লাখ চুক্তিবদ্ধ হয়ে উক্ত টাকা থেকে আউট সোর্সিং কর্মচারী হৃদয়কে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে হাসপাতাল মসজিদ কমিটিতে জোর করে থাকার চেষ্টা, জরুরী বিভাগের সিনিয়র ব্রাদার মোস্তাফিজুর রহমান, ফার্মাসিস্ট বিউটি আক্তার, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আউট সোর্সিং কর্মচারী ও হাসপাতাল মসজিদের টাকা উত্তোলনকারী সাইফুলের সাথে প্রায়ই অসদাচরণ করেন।
হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আউট সোর্সিং কর্মচারি হৃদয় হাসপাতালে দালালদের নির্মূলের কথা বলে বেড়ায় অথচ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগোনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষের কাছ থেকে ডাক্তার ও ব্রাদারদের মাধ্যমে কৌশলে রোগী সরবরাহের নামে টাকা আদায়, হাসপাতাল সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়ার বিষয়টি হাসপাতালের অনেকেরই জানা রয়েছে।
তারা আরও জানান, হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণের বিষয়টি ইতিপূর্বে স্থানীয় মন্ত্রী মহোদয়কে জানানো হয়েছে। এসব বিষয়ে কোনও প্রতিকার না পেয়ে আমরা অনেকেই হতাশ হয়েছি। একজন আউট সোর্সিং কর্মচারির কাছে হাসপাতালে কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিরা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. পারভেজ হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব ব্যপারে আমি কিছু বলতে পারবো না, তবে ঔষধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের গায়ে হাত তোলার বিষয়টি দুঃখজনক। তৌহিদুল ইসলাম হৃদয়কে ওয়ার্ড মাস্টার হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সাহেব নিয়োগ দিয়েছেন, বাকিটা ওনার কাছ থেকে জেনে নিন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কমর উদ্দিন বলেন, আমি সরকারী চাকুরি করি, আর মাত্র কয়েক মাস বাকি অবসরে যাবো। হাসপাতালের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমার, কোনটা করবো আর কোনটা করবো, না সেটা আমি ভালো বুঝি।
ওয়ার্ড মাস্টারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার ‘লোক’। তাই অনেক কাজেই আদেশের তোয়াক্কা করেনা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।