স্পোর্টস ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ফলোয়ারসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছিল। কলকাতায় কালীপূজার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সমাজের একটি অংশের ব্যাপক সমালোচনার জেরে শেষ পর্যন্ত ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর উদ্যোগ নেন সাকিব আল হাসান। ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চান এই অলরাউন্ডার। কিন্তু তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুর দেখেনি অনেকেই, বরং দেখছে বিভক্তি।
যিনি বা যাঁরা বিষয়টিকে এভাবে দেখছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন সাকিবের নিজের পেশার লোকও। গতকাল দুপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক সাবেক ক্রিকেটার ফোনে ব্যক্ত করলেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই, ‘সাকিবের বক্তব্য এটিই বোঝায় যে আমি আপনার (ইসলাম ধর্মাবলম্বীর) বাসায় যেতে পারব না। আর আপনারও আমার বাসায় আসতে বারণ।’ অর্থাৎ ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চেয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে গিয়ে যেন উল্টো সমাজের আরেক অংশের মনোবেদনার কারণ হয়েছেন সাকিব।
সব মিলিয়ে উভয়সংকটেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টারবয়। কালীপূজার অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিলেটের এক তরুণ রামদা উঁচিয়ে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়ার পরদিন নিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ক্ষমা চাইতে আসেন। সেই তরুণ অবশ্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাকিবের সঙ্গেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জুড়ে দিয়েছে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী। হোলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলার পর বিদেশি কোচদের জন্য কিছু গানম্যান নিয়োগ করেছিল বিসিবি। তাঁদেরই একজনকে কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের অনুশীলনে সার্বক্ষণিক সাকিবের সঙ্গে দেখা গেছে। এ বিষয়ে বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর ভাষ্য, ‘সতর্কতার অংশ হিসেবেই এটি করা হয়েছে। আশা করছি, এই ব্যবস্থাটি সাময়িকই হবে।’ সেই সঙ্গে তিনি আরো যোগ করেছেন, ‘উদ্বেগজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর আমরা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট যারা, তাদেরকে বলেছি। তারাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’ ব্যবস্থা নিয়েছে বনানী থানাও। এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আজম গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বনানীতে সাকিবের বাসার আশপাশে আমরা সাদা পোশাকের পুলিশ রেখেছি। যারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে।’
জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে আইসিসির দেওয়া এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাঠে ফেরার অপেক্ষায় থাকা সাকিব অবশ্য গত ৬ নভেম্বর ভোররাতে দেশে ফেরার পর থেকেই নিয়মিত খবরের শিরোনাম হচ্ছেন। বেশির ভাগই নেতিবাচক কারণে। রাত ২টায় দেশে ফিরেই সরকারের স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে সকাল সাড়ে ১১টায় গুলশানের একটি সুপার শপ উদ্বোধনীতে যান। যেখানে ভিড়ের মধ্যেই বহু মানুষের সংস্পর্শে আসতে দেখা যায় তাঁকে। পরে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার পর ফিটনেস পরীক্ষাও দেন। তাতে বিসিবির বেঁধে দেওয়া মানের কাছাকাছি থাকা সাকিব কলকাতায় যাওয়ার পথে সেলফি তুলতে আসা এক ভক্তের ফোন আছাড় মেরে ভেঙে আবার নেতিবাচক খবরের বিষয়বস্তু হন। নিজের ভিডিও বার্তায় অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছেন সেটি ইচ্ছাকৃত ছিল না। বরং সামাজিক দূরত্ব মানার চিন্তা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়েই ঘটনাটি ঘটে গেছে দাবি করেছেন সাকিব। যদিও সংবাদমাধ্যমে এর আগেই ছাপা হওয়া ভুক্তভোগী সেক্টর মাহমুদ ও বেনাপোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য সাকিবের দাবির বিপক্ষেই গিয়েছে। আর সামাজিক দূরত্ব? সকালে সতর্ক সাকিবকে রাতেই পূজার অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে দেখা গিয়েছে।
তবে সেসব নয়, সমাজের একটি অংশের মূল আপত্তির জায়গাটি তাঁর পূজার অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে যাওয়া নিয়ে। ভিডিও বার্তায় সাকিব দাবি করেছেন, সেটি পূজার অনুষ্ঠান ছিল না। অন্য কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে ঘটনাচক্রে প্রদীপ জ্বালাতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কিসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তিনি, সেটি ইউটিউব ভিডিওতে স্পষ্ট করেননি তিনি। পূজার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। যদিও কলকাতার বাংলা দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন গতকাল আমন্ত্রণপত্রের ছবিও ছেপেছে, যেখানে পূজার অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবেই সাকিবকে নিমন্ত্রণ করার কথা লেখা রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই যাচ্ছে। একই সঙ্গে সাকিব বিতর্ক চাপা দিতে চাইলেও সেটি মুখ তুলে তাকাচ্ছেই। ‘গর্বিত মুসলমান’ হিসেবে ক্ষমা চেয়েছেন বটে, কিন্তু তাতে যে মনঃক্ষুণ্ন অন্য ধর্মাবলম্বীরা। বাংলাদেশের মানুষের কাছে সাকিবের সর্বজনীনই হওয়ার কথা। ক্ষমা চাওয়ার ঘটনায় তাই প্রশ্ন উঠছে, তিনি কি তবে সবার নন? সূত্র : কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।