স্পোর্টস ডেস্ক : বোলিংটাই মূল কাজ কাজ মোস্তাফিজের। নেহায়েত ঠেকায় না পড়লে ব্যাটিং নিয়ে ভাবেন না। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বন্ধু মেহেদী হাসান মিরাজের জন্য পুরোদুস্তর ব্যাটসম্যান বনে যেতে হয়েছে তাকে। খেলতে হয়েছে মহামূল্যবান ১১টি বল। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ ঢাল হয়ে না দাঁড়ালে হয়তো ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা পাওয়াই হতো না মিরাজের। কারণ শেষ উইকেট, মোস্তাফিজ আউট হয়ে গেলই যে সব শেষ!
নিজে আউট হয়ে গেলে বন্ধু সেঞ্চুরি হাতছাড়া করতে পারেন, এমনটা ভেবে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন মোস্তাফিজ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজের সঙ্গে নিজের কী কথা হয়েছে তা তুলে ধরে মিরাজ বলেন, ‘মোস্তাফিজ আমাকে বলেছে যে, দোস্ত, আমার (মোস্তাফিজ) খুব ভয় লাগছে তোর (মিরাজ) টেনশনে যে তোর ৯০ হয়ে গেছে, ওখানে যদি আমি আউট হয়ে যাই!’
তবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দিনটা ছিল মিরাজেরই। ব্যক্তিগত ২৪ রানে একবার আর ৮৫ রানে একবার জীবন পেয়েছিলেন। বাকি সময়ে খেলেছেন দারুণ। তুলে নিয়েছেন সব ধরণের ক্রিকেটেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তবে এ সেঞ্চুরি পাওয়া নিয়ে এক পর্যায়ে শঙ্কা ছিল। কারণ নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাঈম হাসান যখন আউট হয়ে যান তখন ৯২ রানে দাঁড়িয়ে মিরাজ। শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজ সঙ্গ না দিতে পারলে সেঞ্চুরির স্বপ্ন আরো বিলম্বিত হতো। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের কাজটা ঠিকভাবেই করতে পেরেছেন মোস্তাফিজ।
৮ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেঞ্চুরি নিয়ে ভাবেননি মিরাজ। পুরোটা ছেড়ে দিয়েছিলেন ভাগ্যর উপরে। তবে মোস্তাফিজকে সাহসটা ঠিকমতোই দিতে পেরেছিলেন এ অলরাউন্ডার, ‘আমি ওরে (মোস্তাফিজ) একটা কথাই বলেছি, দোস্ত এটা তোর হাতেও না, আমার হাতেও না। তুই তোর স্বাভাবিক ক্রিকেট খেল। যদি আমার কপালে থাকে, আল্লাহ্ যদি আমার ওপর রহম করে তাহলে একশ হবে। এটা তো তোর হাতে নাই। তুই তোর মতো খেল। চেষ্টা কর ভালোমতো খেলার। আমি ওইভাবে মানসিকভাবে তৈরি হয়েছি। আমার (সেঞ্চুরি) করতে হবে এটা আমি কখনও চিন্তা করিনি। চিন্তা করেছি যে, আল্লাহ্ যদি আমার কপালে রাখে তাহলে সেঞ্চুরি হবেই। এটার ওপর অনেক বিশ্বাস করেছি।’
তবে শেষ পর্যন্ত নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করতে পেরে দারুণ খুশি মিরাজ, ‘আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ্র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। খুব ভালো লাগছে যে, আসলে এরকম একটা সেঞ্চুরি… খুব ভালো লাগছে এবং আসলে বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার নিজের কাছে অনেক ভালো লাগছে।’
‘আমি যখন শুরু করেছি, তখন আমি হয়তো ভালো ব্যাটিং করতে পারছিলাম না। তবে আমি আস্তে আস্তে চেষ্টা করেছি নিজেকে যতটুকু সম্ভব উন্নতি করার জন্য। আমি মনে করি, গত কয়েকদিনে যা কাজ করেছি, তা অনেক ভালো হয়েছে। সেটার জন্য হয়তো আজকের ব্যাটিংটা ভালো হয়েছে, আল্লাহ্র রহমতে রান করতে পেরেছি।’ -যোগ করেন মিরাজ।
মিরাজ টেস্টে সেঞ্চুরি করবেন এমনটা কারো দূরতম কল্পনাতেও ছিল না। ছিল না মিরাজেরও। ছিল না কারণ বয়সভিত্তিক পর্যায়ে পুরোদস্তুর ব্যাটিং অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিং ভুলে যেন শুধুই অফস্পিনার বনে গিয়েছিলেন।
তবে এবার পারলেন, কারণ জেগে উঠল তাঁর হারিয়ে যাওয়া ব্যাটিংসত্তা। শটের ভাণ্ডার তাতে খুলে গেল। ফাস্ট বোলার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে স্কয়ার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে সেই যে শুরু করলেন, খেলতে থাকলেন একের পর এক দৃষ্টিনন্দন শট। জোমেল ওয়ারিকানকে ইনসাইড আউটে মারা বাউন্ডারিটা যেমন মুগ্ধতার তুঙ্গ ছুঁয়ে ফেলল। সুইপ, কাট থেকে শুরু করে গ্লাইড—বাদ গেল না কিছুই। ব্যাটিং সৌন্দর্যের অনুপম প্রদর্শনী ১৬০ বলে তাঁকে তিন অঙ্কে পৌঁছে দেওয়ার পর স্বাভাবিক এই প্রশ্নটিও উঠে গেল যে এত দিন মিরাজের এমন ব্যাটিং কোথায় ছিল?
তাও আবার ৮ নম্বরে ব্যাটিং করে। এই পজিশনে বাংলাদেশের আরো তিনটি টেস্ট সেঞ্চুরি আছে, যার সর্বশেষটি ২০১৩ সালের অক্টোবরে দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন সোহাগ গাজী। একই বছরের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে যুব টেস্টে নিজের জীবনের প্রথম সেঞ্চুরির মুখ দেখেছিলেন তখন মাত্র ১৫ বছর বয়সী মিরাজ। তখন থেকে নিজেকে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে মেলে ধরা এ ক্রিকেটার অবশ্য পরে আর কোনো সেঞ্চুরিই করেননি। সব পর্যায়ের ক্রিকেট মিলিয়ে এত দিনে পার করে দিয়েছেন ২৪৭ ইনিংস।
এত দিন এত অপেক্ষার পর সেঞ্চুরি বলেই কিনা, মিরাজ উদযাপনও করলেন দ্বিগুণ। বাঁহাতি স্পিনার ওয়ারিকানের বলে ডাবল নিয়ে ৯৯ থেকে পৌঁছালেন সেঞ্চুরিতে। আনন্দে লাফিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত শূন্যে ছুড়লেন প্রথম রান নেওয়ার সময় যেমন, তেমনি দ্বিতীয় রানের সময়ও। শেষ পর্যন্ত অফস্পিনার রাকিম কর্নওয়ালকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ১০৩ রানে বাউন্ডারি সীমানায় ধরা পড়ার আগে টেলএন্ডারদের নিয়ে দলের সংগ্রহে যোগ করেন ১১৫ রান, যার ৬৫ রানই মিরাজের ব্যাট থেকে আসা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।