জুমবাংলা ডেস্ক : এবার অস্থাবর সম্পত্তির বিপরীতেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সংসদে উঠেছে ‘সুরক্ষিত লেনদেন (অস্থাবর সম্পত্তি) বিল-২০২৩’। বিলটি পাশ হলে আয়বর্ধক জীবজন্তু, গবাদিপশু, মত্স্য, শস্য, দণ্ডায়মান গাছ, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য জামানত রেখেও ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে শুধু স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ নেওয়া যায়। উত্থাপিত বিলটি পাশ হলে অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখেও ঋণ নেওয়া যাবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল মঙ্গলবার বিলটি সংসদে তুললে এতে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেছেন, স্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে দেওয়া ঋণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকগুলো লুটপাটের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্থাপিত বিলটি ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতাদের জন্য প্রয়োজন হলেও এটি বিপর্যয় ডেকে আনবে। কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সেটা বিরাট প্রশ্ন। বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালত বলেছে, বেসিক ব্যাংকের মামলা নিয়ে নাটক হচ্ছে।’ অবশ্য ফখরুল ইমামের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি পরীক্ষা করে ১৫ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তা অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
অস্থাবর সম্পত্তি কোনগুলো
উত্থাপিত বিলটিতে অস্থাবর সম্পদের সংজ্ঞা ও বিবরণ দেওয়া হয়েছে। জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে—রপ্তানির উদ্দেশ্যে অথবা রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য প্রস্তুতের কাঁচামাল যা প্রয়োজনীয় দলিল দ্বারা সমর্থিত ও সুরক্ষিত; ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত স্থায়ী আমানতের সনদ যেমন: স্বর্ণ, রৌপ্য এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতু—যার ওজন ও বিশুদ্ধতার মান স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ দ্বারা সার্টিফাইড; নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট; মেধাস্বত্ব অধিকার দ্বারা স্বীকৃত মেধাস্বত্ব পণ্য; কোনো সেবার প্রতিশ্রুতি—যার বিপরীতে সেবাগ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে; মত্স্য; গবাদিপশু; দণ্ডায়মান বৃক্ষ ও শস্যাদি; ফলদ উদ্ভিদ ও ঔষধি উদ্ভিদ; আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স পণ্য; সফটওয়্যার ও অ্যাপস যার মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব; যথাযথ কর্তৃপক্ষের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যানবাহন; যথাযথভাবে সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য; প্রক্রিয়াজ মত্স্য বা জলজ প্রাণী; বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তপশিলে বর্ণিত রক্ষিত বন্যপ্রাণী ও উভচর ব্যতীত কোনো আয়বর্ধক জীবজন্তু (অজাত শাবকসহ); সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টিকারী যে কোনো ধরনের চুক্তি, বন্ধক, শর্ত সাপেক্ষে বিক্রয়, ডিবেঞ্চার, যে কোনো চার্জ বা কিস্তিতে ক্রয় চুক্তি।
এ সম্পর্কে বিলটিতে আরো বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন সৃষ্ট সুরক্ষা স্বার্থের সম্পূর্ণকরণ এবং কার্যকর সংক্রান্ত বিধানাবলী ব্যতীত অন্য কোনো আইনে অনুমোদিত বা উহার অধীন কোনো পূর্বস্বত্ব, চার্জ বা অন্যান্য স্বার্থ, কোনো হিসাবের হস্তান্তর বা স্বত্ব অর্পণ—যদি এইরূপ হস্তান্তর বা স্বত্ব অর্পণ কোনো দায় এর কার্যসম্পাদন বা পরিশোধ নিশ্চিত না করিয়া থাকে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত ১ (এক) বত্সরের অধিক মেয়াদি কোনো ইজারা, সড়ক পরিবহন আইনের অধীন রেজিস্ট্রিকৃত কোনো মোটরযান এবং জামিনদারের দখলে থাকা কোনো পণ্যের ওপর সৃষ্ট সুরক্ষা স্বার্থ, কোনো বার্ষিক ভাতা বা বীমা পলিসির অধীন সৃষ্ট কোনো স্বার্থ বা দাবি এবং জামানতের কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা লোকসান হইতে উদ্ভূত ক্ষতিপূরণ বা ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা হিসেবে কোনো বীমা পলিসির অধীন প্রাপ্য অর্থ বা অন্য কোনো আর্থিক অধিকার।’
অর্থমন্ত্রীর তোলা বিলে বলা হয়েছে, ‘অর্থঋণ আদালতে সংজ্ঞায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা আইন অনুযায়ী বিমাকারী, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইনে সংজ্ঞায়িত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান এবং মানি ল্যান্ডার্স অ্যাক্টে সংজ্ঞায়িত মানি ল্যান্ডার এবং বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে লেনদেন করতে পারবেন।’ সুরক্ষা স্বার্থ সৃষ্টির ক্ষেত্রে জামানত হিসেবে ব্যবহারযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হবে।
থাকবে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ
বিলটি পাশ ও আইনে পরিণত হলে সরকার একটি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করবে। এই কর্তৃপক্ষ জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তির অর্থায়ন ও বিবরণী নিবন্ধন, জামানত হিসেবে অস্থাবর সম্পত্তির ইলেকট্রনিক নিবন্ধন সংক্রান্ত ইলেকট্রনিক তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করবে। বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ প্রদান ও গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার লেনদেনের সুরক্ষা প্রদানের বিধানের জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।