নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর বুকে গজিয়ে ওঠা এক টুকরো চর ঘিরে শুরু হয়েছে দখল-দৌরাত্ম্য। অন্তত দুই বিঘা খাসজমি ঘিরে ১০ ফুট উঁচু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শেষ হয়েছে সম্প্রতি। স্থানীয়দের অভিযোগ-‘ঈদগাহ মাঠ’ করার নামে চলছে চর দখলের প্রক্রিয়া।
উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের গোসিঙ্গা বাজার-সংলগ্ন ওই চরে সীমানা ঘেরা জমির চারপাশে নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এখানে ঈদগাহ মাঠের জন্য প্রাচীর তুলতে।
কিন্তু চারপাশের লোকজনের বক্তব্য একেবারে ভিন্ন। গোসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, “বাজারের দুপাশেই দুটি বড় ঈদগাহ মাঠ আছে। তবুও নদীর মাঝচরে নতুন মাঠ কেন হচ্ছে, আমরা কেউ জানি না। এটা ঈদগাহের নামে দখলের কৌশল মনে হচ্ছে।”
চরের যে অংশ ঘেরা হয়েছে, তা প্রতি বর্ষায় নদীর জোয়ারে ডুবে যায়। স্থানীয়দের আশঙ্কা-স্থায়ী স্থাপনা তৈরি হলে নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত হবে, তীরভাঙনের আশঙ্কাও বাড়বে।
এ বিষয়ে গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকায় আলাদা ঈদগাহ মাঠ নেই বলেই এটা করা হচ্ছে। সরকারি জমিতেই অনেক সময় মাঠ তৈরি হয়। তবে সরকার চাইলে আমরা জায়গা ছাড়ব।”
তবে পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী বা চর এলাকায় স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, “নদী ও চর সরকারি সম্পত্তি। সেখানে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্থাপনা তুলতে পারে না। কেবল বনায়ন করা যায়, সেটাও সরকারের তত্ত্বাবধানে।”
নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরীও একই মন্তব্য করেন। তাঁর ভাষায়, “চর এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ নদী দখলের অন্যতম কৌশল। এটা আইনের চোখে অপরাধ। সরকারি উদ্যোগে কেবল সবুজায়ন করা যেতে পারে, অন্য কিছু নয়।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, “নদীর চর দখল করে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি নেই। ‘ঈদগাহ মাঠ’ করার নামে কেউ যদি নির্মাণ করে থাকে, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা বলছেন, প্রাচীর তোলা শেষ হলেও এখনো স্থায়ী কোনো স্থাপনা হয়নি। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চর দখলের এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকেরা।
নদীভূমি দখলের এই চিত্র নতুন নয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঈদগাহ, ঘাট বা ধর্মীয় স্থাপনার নামে নদী ও খাল দখলের প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনিক নজরদারি ও স্থানীয় সচেতনতা দুটিই জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।