নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণের মধ্যে রয়েছে একটি বিশাল বটগাছ। এই গাছটি অনেকের কাছে তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। তারা এই বটগাছকে মাজার হিসেবে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করেন। অসুস্থ রোগীরা এখানে মোমবাতি জ্বালিয়ে সুস্থতা প্রার্থনা করতে আসেন। বটগাছটি কিভাবে মাজারে পরিণত হলো, তা জানা না থাকলেও অনেকের বিশ্বাস গাছটির মধ্যে অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তারা মনে করেন, এই বটগাছের কাছ থেকে আশীর্বাদ পেলে রোগমুক্তি হয়।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, গাজীপুরের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের মধ্যে এ ধরণের কুসংস্কার কিভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, দ্রুত যেন গাছটি কেটে ফেলা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল গেইট দিয়ে প্রবেশ করার পর নতুন ভবনের মাঝেই বিশাল আকৃতির বটগাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছটির চারপাশে ইট দিয়ে বাঁধাই করা। কয়েকটি রঙিন কাপড়ের পতাকা টাঙানো রয়েছে গাছের আশপাশে। গাছটির শিকড়ে বিভিন্ন কাপড় পেঁচানো ও রং করা রয়েছে। কাঠের কয়েকটি টুকরো দিয়ে ছোট একটি খোপের মতো তৈরি করা হয়েছে। সেখানে দুধ দেওয়া হয়। পাশেই রাখা একটি বক্সে রয়েছে মোমবাতি ও আগরবাতি রাখার ব্যবস্থা।
বটগাছের মাজারে মোমবাতি জ্বালাতে আসা খালেক মিয়া বলেন, ‘এটি একটি মাজার। আমি জানি না এটি কার মাজার। সবাই এই বটগাছকে সম্মান করে এবং সালাম দেয়। আমিও সকলের দেখাদেখি ভক্তি করেছি।’
মাহবুবুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা অনেক রোগী এই বটগাছের ধারে এসে মোমবাতি জ্বালান। তারা বিভিন্ন ধরনের মানত করেন।’
আরিফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘অনেক রোগীকে মানত করতে দেখি গাছটির কাছে বসে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বুঝতে পারছি না।’
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, চিকিৎসক দেখিয়েছি। তারপরও এই গাছের কাছে এসে মানত করলাম রোগ মুক্তির আশায়।
হাসপাতালের পশ্চিম গেটে দায়িত্বপালনরত আনসার সদস্য বিপ্লব বলেন, ‘এখানে একজন লাল সালু পড়া খাদেম রয়েছেন। অনেকেই বটগাছের পূজা করেন। মাঝে মধ্যে তারা বটগাছকে খাবারও দেন। খাবার দিয়ে ফিরে আসার সময় তারা উল্টো দিক হয়ে হাটেন।’
স্থানীয় মানুষরা জানান, এই বটগাছের কাছ থেকে আশীর্বাদ পেলে নাকি রোগমুক্তি হয়। ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের বিশ্বাসের সত্যতা নেই। তবুও, অনেক মানুষ আসেন এখানে। অনেকেই জটিল রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসার পর এই বটগাছের মাজারে এসে প্রার্থনা করেন।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, আশ্চর্যের বিষয় গাজীপুরের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের মধ্যে এমন কাজ কিভাবে সম্ভব। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিভাবে এই ধরনের কুসংস্কার প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তাদের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে গাছটি কেটে ফেলা।
কাউসার আহমেদ নামে একজন বলেন, এমনিতেই আমাদের দেশের মানুষের কুসংস্কার ও মাজারের প্রতি ঝোঁক বেশি। তারমধ্যে হাসপাতালের মধ্যে একটি গাছকে মাজারে পরিণত করা হয়েছে। এটি ভাবতেই কেমন লাগে। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে অনেক রোগী ফেরার পথে বটগাছটির কাছ থেকে ঘুরে যান। তারা পরে সুস্থ হয়ে বলেন, তাদের সুস্থতার পেছনে রয়েছে এই বটগাছ ও মাজারের কারিশমা।
এবিষয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই বটগাছটা দীর্ঘদিনের। ভবন করার সময় এলাকাবাসীর চাওয়ায় যায়গাটি ফাঁকা রেখে ভবন নির্মাণ করা হয়। এখানে সব ধর্মের লোক আসেন। জানতে পেরেছি করব নেই সেখানে। বটগাছ কেন্দ্র করে কারা মাজার গড়ে তুলেছেন সেটি খোঁজ নিয়ে বের করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।