নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর সাফারি পার্ক পরিদর্শন করে প্রাণীদের রাখার তিনটি জায়গার পরিবেশ দেখে খারাপ লাগার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে পার্ক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার ঘুরে দেখার সামগ্রিক অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হলেও তিনটা জায়গায় সত্যিই খারাপ লেগেছে। একটা হচ্ছে যেখানে হাতিগুলোকে রাখা হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে যে জায়গা থেকে আমাদের তিনটি লেমুর চুরি হয়ে গেল বা আমরা আর খুঁজে পাচ্ছি না। অন্যটা হচ্ছে যেখানে জাগুয়ার দুটি রাখা হয়েছে।’
কারণ হিসেবে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘একটি সাফারি পার্কে যারা আসবে, তারা প্রাণীদের দেখে ভালোবাসবে। এই ভালোবাসাটা জাগানোর জন্য সাফারি পার্কের আয়োজন। এ ছাড়া তো চিড়িয়াখানার পর সাফারি পার্কের প্রয়োজন ছিল না। চিড়িয়াখানায় যেখানে প্রাণীদের আবদ্ধ করে রাখা হয়, সাফারি পার্কে সেখানে প্রাকৃতিক আবহের মধ্যে রাখা হচ্ছে। আমার মনে হয়েছে, হাতি, লেমুর আর জাগুয়ারের ক্ষেত্রে আমরা সে রকম আবহ দেখতে পায় নাই।’
পার্ক থেকে পশুপাখি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন বারবার এ রকম ঘটনা ঘটছে? বিরল প্রজাতির যেসব বন্য প্রাণী আমরা এখানে এনে রাখছি, সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। একই জায়গা থেকে যখন ময়না পাখি হারায় না, টিয়া পাখি হারায় না, কিন্তু লেমুর যখন হারায় তখন আপনাকে বুঝতে হবে এখানে কোনো একটা সমস্যা আছে। সেই সমস্যাটা আমি চিহ্নিত করব। আমাদের বন বিভাগের যারা বন্য প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলব। গণমাধ্যমকর্মীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলব। আপনাদের রিপোর্টগুলো আমি পড়েছি। আমার মনে হয়, সাফারি পার্কের এই ব্যবস্থাপনাকে আরও অনেক উন্নত, আরও অনেক প্রাণীবান্ধব, আরও অনেক দর্শনার্থীবান্ধব করা যায়।’
পার্কের উন্নয়ন বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘বন বিভাগ সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রকল্প পেয়েছে। কিন্তু আমার কথা হলো, প্রকল্প পেলে কাজ করব, এমনটি নয়। সরকারের নিয়মিত বাজেটই এর সংস্কারকাজ করবে। আরেকটা বিষয় হলো, এখানে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। আরেকটা হলো সদিচ্ছার অভাব। এটা আমাদের মোটেও নাই। এগুলো কীভাবে কাটানো যায়, সে চেষ্টা করা হবে।’
পার্ক থেকে লেমুর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি একটা হরিণের কথা বলতে পারেন। আজকেও (বুধবার) পত্রিকায় দেখলাম, বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে এলে মানুষ (হরিণ) ধরে খেয়ে ফেলেছে। সেটা এক বিষয়, কিন্তু লেমুরের মতো এমন একটা প্রজাতি কী জন্য নিখোঁজ হয়ে যাবে? কেন হারিয়ে গেল? সেটার সঙ্গে যারা প্রহরায় ছিল তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছে? এটা অবশ্যই দেখতে হবে। আর এ জায়গাটা খুবই সংবেদনশীল। বারবার যেখানে এমন দুর্লভ প্রাণীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গাগুলোতে কেন সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছে না? সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে কত টাকা লাগবে? এখানকার নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাকে দেখতে হবে। আমি মনে করি, এখানে যেভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, সেভাবে পালন করা হয়নি। আর এ রকম দুর্লভ প্রাণী হারিয়ে গেলে ১৪ দিন পর মামলা করে অনুসন্ধান শুরু করলে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে। এখানে যে সংগঠিত অপরাধ চক্র রয়েছে, এটা কিন্তু প্রমাণিত। চক্রটি কী করে ধরা যায়, সে কাজটিও করা হচ্ছে।’
ঘটনার তদন্তের বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত তদন্ত করা হবে। বাইরের বিশেষজ্ঞ যুক্ত করা হবে। কী করে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিহত করা যায়, তা দেখা হবে। আর জায়গাটি অবশ্যই অরক্ষিত নয়। সেখানে ঢুকে কী করে লেমুর চুরি করল, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। সরকারের পক্ষে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন।
পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন, প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, গাজীপুর পুলিশ সুপার চৌধুরী যাবের সাদেক, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ, শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।